সিরিয়ার পালমিরা
সিরিয়ার পালমিরা

সেনা হত্যার প্রতিশোধ নিতে সিরিয়ায় আইএসের ৭০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা

সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ৭০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে গতকাল শুক্রবার হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সপ্তাহান্তে সিরিয়ায় একটি হামলায় তিন মার্কিন নিহত হন। গতকালের হামলাকে ওই ঘটনার ‘খুবই কঠোর প্রতিশোধ’ বলে বর্ণনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ওয়াশিংটন বলেছে, আইএসের একজন বন্দুকধারী গত ১৩ ডিসেম্বর পালমিরায় মার্কিনদের ওপর ওই হামলা চালান।

পালমিরা ইউনেসকো তালিকাভুক্ত প্রাচীন ঐতিহ্যের ধ্বংসাবশেষের জন্য পরিচিত। শহরটি একসময় আইএস যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৩ ডিসেম্বরের হামলায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন বেসামরিক মার্কিন নাগরিক নিহত হন।

ওই হামলার প্রতিশোধ নিতে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ৭০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার ও কামান ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অভিযানে ১০০টির বেশি সুনির্দিষ্ট অস্ত্র ব্যবহার করে আইএসআইএসের স্থাপনা ও অস্ত্রঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।’

সপ্তাহান্তে পালমিরা শহরে হামলায় নিহত মার্কিনরা ছিলেন আইওয়া ন্যাশনাল গার্ডের সার্জেন্ট উইলিয়াম হাওয়ার্ড ও এডগার টোরেস টোভার। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন মিশিগান থেকে আসা বেসামরিক নাগরিক আয়াদ মানসুর সাকাত। আয়াদ দোভাষী হিসেবে কাজ করতেন।

ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘যেমনটা আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, দায়ী খুনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ঠিক ততটা কঠোর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে।’

প্রতিশোধমূলক এ হামলা কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা উল্লেখ করতে গিয়ে ট্রাম্প আরও লেখেন, ‘যাঁরা মার্কিনদের ওপর হামলা চালান, তাঁদের ওপর এতটা কঠোর পাল্টা আঘাত করা হবে, যেমনটা আগে কখনো হয়নি।’

সেন্টকম বলেছে, পালমিরা হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রবাহিনী সিরিয়া ও ইরাকে ‘১০টি অভিযান পরিচালনা করেছে, যার ফলে ২৩ জন সন্ত্রাসী নিহত বা আটক হয়েছেন’। তবে নিহত বা আটক ব্যক্তিরা কোন গোষ্ঠীর সদস্য তা তারা স্পষ্ট করেনি। এটি ছিল গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ উৎখাত হওয়ার পর প্রথম মার্কিন হামলার ঘটনা।

যাঁরা মার্কিনদের ওপর হামলা চালান, তাঁদের ওপর এতটা কঠোর পাল্টা আঘাত করা হবে, যেমনটা আগে কখনো করা হয়নি।
...ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

শুক্রবারের মার্কিন হামলা নিয়ে সিরিয়া সরকার সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেছে, দেশটি ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সেন্টকম বলেছে, পালমিরা হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রবাহিনী সিরিয়া ও ইরাকে ‘১০টি অভিযান পরিচালনা করেছে, যার ফলে ২৩ জন সন্ত্রাসী নিহত বা আটক হয়েছেন’। তবে নিহত বা আটক ব্যক্তিরা কোন গোষ্ঠীর সদস্য তা তারা স্পষ্ট করেনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছে, সিরিয়ার ভূখণ্ডকে আইএসের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হতে দেওয়া হবে না এবং যেখানেই এ গোষ্ঠী হুমকি সৃষ্টি করবে, সেখানেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হবে।

সপ্তাহান্তে পালমিরা শহরে হামলায় নিহত মার্কিনরা ছিলেন আইওয়া ন্যাশনাল গার্ডের সার্জেন্ট উইলিয়াম হাওয়ার্ড ও এডগার টোরেস টোভার। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন মিশিগান থেকে আসা বেসামরিক নাগরিক আয়াদ মানসুর সাকাত। তিনি দোভাষী হিসেবে কাজ করতেন।

হামলাকারী ছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য। চরমপন্থী মতাদর্শের কারণে ওই ব্যক্তিকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
......নূরেদ্দিন আল-বাবা, সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র

বুধবার মার্কিন নাগরিকদের মৃতদেহ যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত আনা উপলক্ষে আয়োজিত এক শোকসভায় ট্রাম্প ছাড়াও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল ড্যান কেইনসহ অন্য মার্কিন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নূরেদ্দিন আল-বাবা বলেন, হামলাকারী ছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য। চরমপন্থী মতাদর্শের কারণে ওই ব্যক্তিকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

হামলার শিকার মার্কিন সেনারা ‘অপারেশন ইনহেরেন্ট রিজলভ’ এর অংশ ছিলেন। ২০১৪ সালে সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের দখলকৃত এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এটি একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ।

সিরিয়ায় এখনো আইএসের সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে, বিশেষ করে দেশটির বিস্তীর্ণ মরুভূমিতে।

যদিও ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় ওয়াশিংটনের উপস্থিতির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি নিজের প্রথম মেয়াদে সেখান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত মার্কিন বাহিনী দেশটিতে থেকেই যায়।

বর্তমানে সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত উত্তর–পূর্বাঞ্চলে ও জর্ডানের সীমানার কাছে আল-তানফ এলাকায় মার্কিন বাহিনী মোতায়েন আছে।