এমন নয় যে, রাতুলের ওই এক জোড়াই জুতা ছিল। অ্যাডিডাস, নাইক বা নর্ডস্ট্রমের মতো নামি কোনো ব্র্যান্ডের জুতা ছিল সেটা। তবু জুতা জোড়ার একটি গল্প আছে।
এই গল্প শুরু করতে ফিরে যেতে হবে জল আর বাওরের এক ছোট্ট গ্রামে। যেখানে জলের বাঁকে জেগে থাকা মাটিতে সবুজ পাতার ছায়া কখনো ফুরোয় না। ঠিক তেমন করেই ফুরোয় জলের পথ। মাটি আর জল সেখানে চিহ্ন রেখে যায় আত্মীয়তার। কোথাও কোথাও তো শুধুই জল, মাটির চিহ্নটুকু নেই।
এমন জলের দেশের মানুষ জুতার খুব বেশি প্রয়োজন বোধ করেনি কখনো। আর শখ তো বলতে গেলে ছিল না মোটেও। জলা মাটিতে জুতা পায়ে হাঁটার বিড়ম্বনা ছিল খুব। একবার জুতায় জল ঢুকে গেলে তা শুকিয়ে পড়ার উপযোগী করতেই দিন তিনেক লেগে যেত। তাই প্রয়োজন ছাড়া কেউ তেমন জুতা পরত না।
এমন জলের দেশেও একজন জুতা প্রিয় যুবক ছিলেন। যিনি সেই সময়ে পড়তে গিয়েছিলেন কলকাতা মওলানা আজাদ কলেজে। ১৯৪৪ সাল। কলকাতার সম্ভ্রান্ত মহলে অক্সফোর্ড সু-এর তখন খুব নামডাক। রানির দেশের জুতা। পায়ে পড়লে নিজেকেও রাজা বলে মনে হয়। ওই যুবক সত্যিই রাজা হয়েছিলেন। এক নতুন দেশের রাজা।
ওই যুবক ১৯৪৭ সালে যখন কলকাতা থেকে ফিরলেন তখন সঙ্গে করে আনলেন এক জোড়া ‘অক্সফোর্ড সু’। এই জুতা পরেই তিনি ১৯৫৭ সালে দেখা করতে গিয়েছিলেন চায়নিজ প্রিমিয়ার ঝৌ এনলাইয়ের সঙ্গে। ১৯৪৭-এর জুতো ১৯৫৭ সালেও অক্ষয় ছিল। এ থেকেই বোঝা যায় কতটা যত্নে ছিল এই জুতা।
এরপর মধুমতীর জল গড়িয়েছে অনেক। জলের দেশের যুবকটি সন্ধান পেয়ে যান এক নতুন রাজ্যের। যে রাজ্য রূপকথার মতো সোনার কাঠিতে জাগত আর রুপোর কাঠিতে ঘুমিয়ে পড়ত। আর ঘুমালে জাগত না বহু বছর। এমনই এক ঘুমভোরে রাজ্য ছেড়ে চুপিসারে জলের দেশের যুবকটি ফিরে আসে সেই জলের পাড়েই। এরপর আর কখনো ছেড়ে যায়নি জলের দেশ। এরপর অবশ্য সেই ‘অক্সফোর্ড সু’ এর আর কোনো খবর জানা যায়নি।
এবার রাতুলের জুতার গল্পটি এগিয়ে নেওয়া যাক। জুতার শৌখিনতা রাতুলের এসেছে ওই জলের দেশ থেকেই। তার মা সেখানকার মানুষ। মায়ের মুখেই সেই যুবকের গল্প শুনেছে রাতুল।
—মা, সেই অক্সফোর্ড সু আমি পরতে পারব?
মা হেসে বলে, পারবে কিন্তু তাঁর মতো বড় মানুষ হতে হবে আগে।
সেই জুতার জন্য কত বড় মানুষ হতে হবে তা বুঝতে না পারলেও জুতা জোড়া সে পাবে, সে বিষয়ে সন্দিহান ছিল। আর তা হবেই বা না কেন! রাতুল যখন যা চায় তার বাবা এনে হাজির করে সামনে। সে জুতাই হোক বা অন্যকিছু।
এই তো কয়েক দিন আগের কথা। রাতুলের ইচ্ছা হলো বাওরের জল দেখবে। পানকৌড়ির ডুব দিয়ে তুলে আনা মাছ দেখবে। শোনামাত্রই রাজি হয়ে গেলেন বাবা। রাতুলকে নিয়ে গেলেন জলের দেশে। দিনভর বাবা-ছেলের জলে জলে ভেসে বেড়ানো। জলের সঙ্গে ভাসতে লাগল রাতুলের উচ্ছ্বাস।
জলের ভেতর মাছেদের কে থাকতে বলেছে? এই বাওর কে বানাল? কে পাখিগুলোকে এখানে নিয়ে এল?—এমন অসংখ্য প্রশ্ন রাতুলের। ছেলের প্রশ্নের মুখে জেরবার হতে হতে বাবার ছোট্ট উত্তর—ঈশ্বর। উত্তর শুনে হঠাৎ চুপ হয়ে যায় রাতুল। কিছুক্ষণ পর বলে ওঠে—বাবা, ঈশ্বর মাছেদের ভালোবাসেন না।
ছেলের মুখে এই অদ্ভুত কথা শুনে বাবা অবাক হয়, ‘কেন এমন বলছ?’
—পাখিরা মাছ খেয়ে ফেলছে। ওদের এখানে কেন আনল ঈশ্বর?
ছেলের এই প্রশ্নের কোনো যুৎসই উত্তর খুঁজে পায় না বাবা। শুধু জলের দিকে তাকিয়ে বলেন— পৃথিবীর সকল কিছু তাঁর ইচ্ছায় হয়।
এ কথাটুকু অবশ্য রাতুলের কানে যায়নি। ততক্ষণে ও মেতে উঠেছে একটা ঝুটকুলি পাখি নিয়ে। পাখিটা উড়ে এসে জলের ওপরে বসেছে। জল রাতুলের খুব পছন্দ তা জানে বাবা। সে বৃষ্টির জল হোক বা বাওরের, উচ্ছ্বাস সব সময় একই রকম। আর তা জানে বলেই এবার প্ল্যান করেছে রাতুলকে সমুদ্রের শহরে নিয়ে যাবে। সত্যি বলতে এটুকুই চাওয়া তাঁর। রাতুলের জন্য পৃথিবীর সব খুশি এনে হাজির করতে চান তিনি।
এই ছেলে তো তার জীবনে ঈশ্বরের আশীর্বাদ। পৃথিবীর সব বিজ্ঞান যখন ব্যর্থ তখন ঈশ্বর খুশির অছিলা করে রাতুলকে পাঠায় তাঁর জীবনে। খুব এক্সপেক্টেড বেবি রাতুল। তবে সমুদ্র দেখতে যাওয়ার কথা বলতেই যে এমন বিড়ম্বনায় পড়বেন তা অবশ্য জানা ছিল না বাবার। যে বাবা পারলে সমুদ্র এনে হাজির করে ছেলের সামনে তিনি নিজেই অকুল সাগরে পড়ে গেলেন।
রাতুলেরা সমুদ্র দেখতে যাবে, দিন ঠিক হয়ে গেছে। এয়ার টিকিট, হোটেল রুম সব কনফার্ম। কিন্তু গোল বাঁধল অন্য জায়গায়। রাতুল আর্ট পেপারে একটি জুতার ছবি এঁকেছে। ওর ঠিক এমন একটি জুতা চাই। হ্যাঁ, জুতার গল্পটি এখানে এসে একটা বাঁক নিল।
এমন নয় যে বাবা রাতুলকে জুতা কিনে দিতে পারবেন না। কিন্তু ব্যাপার হলো রাতুলের হুবহু ওই আঁকা জুতাটাই চাই। এমনকি রংটাও হুবহু এক হতে হবে। সমস্যায় পড়লেন বাবা। হুবহু এক না হলেও কাছাকাছি প্রায় কয়েক জোড়া জুতা আনা হলো। কিন্তু রাতুলের সেই একই জেদ। নিজের আঁকা হুবহু জুতা তার লাগবে। আর সেই জুতা ছাড়া সে যাবে না সমুদ্রের শহরে। অবস্থা এমন যে প্ল্যানই ভেস্তে যায়।
বাবা প্রথম প্রথম বোঝাল, এরপর অনুরোধ করল। আর একদম শেষে অধৈর্য হয়ে বকা দিল রাতুলকে। রাতুলকে আগে কখনো বকা দিয়েছে কি না বাবা মনে করতে পারেন না। কিছুটা অসহায় বাবা সেদিন মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলেন রাতুলের ঘর থেকে। আসলে জলের দেশের মানুষের জুতা নিয়ে শৌখিনতার গল্প জানা ছিল না বাবার। জানা থাকলে রাতুলকে তিনি বকতে পারতেন না। বাবা সেদিন ফিরেছিলেন রাতুলের কাছে অনেক রাতে। তখন ও ঘুমিয়ে পড়েছে। গালের ওপর স্পষ্ট জলের দাগ। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে খুব নিচু স্বরে বাবা বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম সরি রাতুল’।
এরপরেই সঙ্গে আনা একটি প্যাকেট গুছিয়ে রাখা রাতুলের লাগেজে আলগোছে ঢুকিয়ে দেন বাবা। এরপরের দিনগুলোর গল্প সমুদ্র আর জলের। সমুদ্রের জলের রং যে একটি শহরকে এভাবে রাঙিয়ে দিতে পারে তা এ শহরে না এলে জানা যায় না। সেই রঙের নাম প্রশান্তি। শহরের প্রতিটি মানুষের চোখে মুখে যেন তারই জলছবি। তবে এত কিছু দেখার সময় নেই বাবার। তিনি ব্যতিব্যস্ত রাতুলের উচ্ছ্বাস নিয়ে। বিচ লাগোয়া হোটেল রুমের ব্যালকনিও সমুদ্রমুখী। হোটেল রুমে এসেই রাতুল ছুটে যায় বারান্দায়।
—বাবা, দেখ কত জল! জলজ বাতাসে তখন রাতুলের চোখের পাপড়ি তিরতির করে কাঁপছে। বাবা পাশ থেকেই বুঝতে পারছেন রাতুলের উত্তেজনা। বললেন, ‘যাবে জলে?’ এটুকু শুধু বলার অপেক্ষা ছিল। রাতুল ইয়েস, ইয়েস বলে লাফিয়ে, চিৎকার করে বুঝিয়ে দেয় কতটা উচ্ছ্বাস ওর ভেতরে এনে দিয়েছে সমুদ্র। এরপর বাবা আর ছেলে মিলে ফেনিল ঢেউয়ের চূড়া ডিঙিয়ে নল জলে পা ভেজানোর খেলায় মেতে উঠল। এক একটি ঢেউ ডিঙিয়ে কয়েক মুহূর্তের শান্ত জল খোঁজার সেই অসাধ্য কাজটা রাতুল কত সহজেই করছে। আর তারপরেই ওর চোখেমুখে বিজয়ীর যে ছবি তাতে বাবা আশ্বস্ত হন, এই ছেলে জীবনের সব বাঁধা ডিঙিয়ে যাবে।
রাতুল পারলে সারা সন্ধ্যা সেদিন জল হয়ে ভেসে থাকে ঢেউয়ের চূড়ায়। কিন্তু ওদিকে মা অপেক্ষা করছে হোটেল রুমে। ছোট বোনকে নিয়ে। ফিরতে হবে। ফেরার পথে বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে জল দেখছে রাতুল। জল তাকে বারবার হাতছানি দিয়ে ফিরতে বলছে। তখনই আচমকা সামনে কিছু একটার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় রাতুল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ তাকে টেনে তোলে। ‘ওহ, সরি। এক্সট্রিমলি সরি’—ব্যাকপ্যাকটা ঠিকঠাক করতে করতে ছেলেটা বলে। ‘ইটস ওকে’—বাবা রাতুলের হাত-পা থেকে ধুলা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে। অপরিচিত ছেলেটা আর দাঁড়ায় না। তাড়াহুড়ো করে হেঁটে চলে যায়।
সেদিন রাত কাটে রাতুলের সমুদ্রের কথা ভেবে। সকালেই সে যাবে জলের কাছে। জলের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমালেও সকালে জলের কাছে যাওয়ার জন্য একটি শর্ত জুড়ে দেয় মা। আজ সকালে জলে ভিজতে পারবে না রাতুল। দুপুরে সবাই মিলে সমুদ্রে নামবে। শুনেই মন খারাপ হয়ে যায় রাতুলের। চোখ বারবার চলে যায় ব্যালকনি পেরিয়ে জলের দিকে। বাবা বুঝতে পারে। দূর থেকে জল দেখে ফিরে আসব আমরা—এমন কথায় মায়ের অনুমতি মিলল। তবে এখানেও যুক্ত হলো আরেকটি শর্ত। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হবে। তাই আগে যেতে হবে শপিং মলে। হোটেলের পাশেই একটি ছিমছাম শপিং মল। তার সামনেই মাদার মেরির একটি বড় পাথরের মূর্তি। রাতুল মাথা উঁচু করে দেখে। ‘বাবা, উনি কে?’ বাবা হাঁটতে হাঁটতে উত্তর দেয়—ঈশ্বরের মা। রাতুল মাথা ঘুরিয়ে মূর্তিটা আবার দেখে।
—মা একা। ঈশ্বর কোথায়?
ছেলের এসব প্রশ্নে সব সময় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান বাবা। তবুও ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে বলেন, ঈশ্বর সব জায়গায়। এই কথার পিঠে আরেকটি প্রশ্ন ছিল রাতুলের। কিন্তু প্রশ্ন করার আগেই রাতুলকে ধাক্কা দিয়ে পাশে সরিয়ে কেউ একজন এগিয়ে গেল। পিঠের ব্যাকপ্যাক দেখে চিনতে পারল এটা কালকের সেই ছেলেটি।
রাতুল বাবার সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি শপিং শেষ করে ফেলল। তাড়াতাড়ি করতেই হতো। এরপরেই তো রাতুল যাবে সমুদ্র দেখতে। রাতুল আর বাবা শপিং মল থেকে বেরিয়ে এল। কয়েক গজ দূরেই সমুদ্র। বাবার হাত ধরে প্রায় লাফিয়ে চলছে রাতুল। হঠাৎ একটি কল এল বাবার ফোনে। থেমে কল রিসিভ করলেন বাবা। বাবাকে ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত দেখে রাতুল এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল মাদার মেরির মূর্তির সামনে। আর তখনই চারপাশ কেঁপে উঠল। হই হট্টগোল, ধোঁয়া-ধুলোয় ভরে গেল সবদিক। রাতুলের চোখের আড়াল হয়ে গেলেন বাবা। বাবা, বাবা ডাকতে ডাকতে ভিড়ের ভেতর হারিয়ে গেল রাতুল।
রক্তাক্ত বাবাকে হাসপাতালে খুঁজে পাওয়া গেলেও রাতুলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মা খুঁজছে রাতুলকে। নেই, কোথাও নেই। শপিং মলের ভগ্নাবশেষে আর তার সামনের জায়গায় তন্ন তন্ন করে খোঁজা হলো। রাতুলকে পাওয়া গেল না। বাবা অস্থির হয়ে উঠছে। তখন কলটা রিসিভ না করলে রাতুল তার হাত ধরেই থাকত। নিজের ওপর রাগ হচ্ছে খুব। তাঁর ভুলেই আজ রাতুল হারিয়েছে। তিনিই খুঁজে নিয়ে আসবেন তাকে। শারীরিক যন্ত্রণা অগ্রাহ্য করে বাবা বেরিয়ে পড়েন রাতুলকে খুঁজতে।
শপিং মল আর আশপাশে খুঁজে যখন ব্যর্থ তখন চোখ গেল সামনের সমুদ্রে। জলপ্রিয় ছেলেটি সমুদ্রের কাছে যাবে—এই সহজ সমীকরণ কেন এত সময় মাথায় এল না বাবার? বাবা ছুটে গেলেন সমুদ্রের দিকে। এই শহরের সুখী সুখী রংটা কেড়ে নিয়ে কে যেন কালো রং ঢেলে দিয়েছে। বাবা ছুটছে। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে ছুটে চলেছে। রাতুল ঢেউ চূড়া ডিঙিয়ে শান্ত জল খুঁজছে কোনো নিরিবিলি জায়গায়। বাবা ছুটছে। খুঁজছে রাতুলকে। নেই, কেউ নেই। আজ সমুদ্রকে একা ফেলে এই শহরের মানুষগুলো হাসপাতালে ছুটছে।
বাবার শরীর অবসন্ন হয়ে আসে। টলতে টলতে এসে দাঁড়ালেন মাদার মেরির সুউচ্চ মূর্তির সামনে। চারপাশে এখনো কালো পুড়ে যাওয়া জিনিসের অংশবিশেষ, ছিটকে পড়া রক্তের চিহ্ন সবদিকে। এত ধ্বংসের মাঝেও সমুদ্রের জলজ বাতাস কিন্তু ভাসছে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় না করে। হঠাৎ করেই হাত আর মাথার যন্ত্রণা জানান দেয় বাবাও এই বর্বরতার শিকার। ব্যথা সহ্য করেই বাবা আবার খুঁজবেন রাতুলকে। তাই পা আবার সামনের দিকে বাড়ান। তখনই চোখ পড়ে মাদার মেরির মূর্তির দিকে। একটা রক্তাক্ত জুতা পড়ে আছে মূর্তিটার পাশে।
রাতুলের এঁকে দেওয়া জুতার সঙ্গে মিলিয়ে সেদিন রাতে এই জুতা বাবা পেয়েছিল রাস্তার পাশের এক বেনামি দোকান থেকে।
পরদিন প্রিন্টসহ সব গণমাধ্যমে খবর আসে—‘আত্মঘাতী বোমা হামলায় শিশুসহ ১৫৭ জন নিহত হয়েছে।’