
কমলা হ্যারিস তখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। সেদিন ট্রাম্প ও কমলার নির্বাচনী বিতর্ক ছিল। বিতর্কের মঞ্চে ওঠার কয়েক ঘণ্টা আগে কমলাকে ফোন করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কথায় কথায় তিনি বলেন, তাঁর (বাইডেন) ভাইয়ের প্রভাবশালী সহযোগীরা কমলাকে সমর্থন জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ একটি দিনে বাইডেনের এমন কথায় ‘চটে’ যান কমলা। বাইডেনের এমন কথা তাঁকে ‘হতাশ’ করে।
নিজের নতুন প্রকাশিতব্য বইয়ে বাইডেন সম্পর্কে এমন ‘রাগ ও হতাশার’ কথা লিখেছেন কমলা। বইটির নাম ‘হানড্রেড অ্যান্ড সেভেন ডেজ’ বা ‘১০৭ দিন’। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারকালের স্মৃতিচারণামূলক বই এটি। এটি আগামী সপ্তাহে (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত হবে। বইটির প্রকাশক বিশ্বখ্যাত মার্কিন প্রকাশনা সংস্থা সাইমন অ্যান্ড শুস্টার। প্রকাশের আগে এ বইয়ের একটি কপি গার্ডিয়ানের হাতে এসেছে।
বইয়ে কমলা লিখেছেন, তখন সেপ্টেম্বর মাস। তিনি ফিলাডেলফিয়ায় একটি হোটেলে উঠেছিলেন। ট্রাম্পের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য কঠিন বিতর্কে অংশ নিতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ওই সময় শুভকামনা জানাতে ফোন করেন জো বাইডেন। জানতে চান, নির্বাচনের আগে তিনি (কমলা) আবারও ফিলাডেলফিয়ায় ফিরবেন কি না।
প্রেসিডেন্টের এমন প্রশ্নে অবাক হন কমলা। এ প্রসঙ্গে নিজের বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘বাইডেন ফোন করে জানান, তাঁর ভাই ফোন করেছিলেন। তিনি ফিলাডেলফিয়ায় প্রকৃত ক্ষমতাধর একটি দলের সঙ্গে কথা বলার কথা জানিয়েছেন।’ তখন বাইডেন কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে জিজ্ঞেস করেন, তিনি তাঁদের চেনেন কি না? কমলা জবাবে বলেন, ‘না, তিনি চেনেন না।’
কমলা লিখেছেন, তিনি মনে করতেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বিতর্ক ‘একটি বড় মুষ্টিযুদ্ধের মতো’ হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বজুড়ে এর বিশাল প্রভাব পড়বে। তাই তাঁকে তাঁর সেরাটাই দিতে হবে।
কমলা লিখেছেন, ‘এরপর বাইডেন আসল কথাটা বলেন। বাইডেন জানান, তাঁর ভাই তাঁকে বলেছেন, এসব লোক তাঁকে (কমলা) সমর্থন করবেন না। কারণ, আমি তাঁর সম্পর্কে খারাপ কথা বলেছি। যদিও এ বিষয়টি বাইডেন বিশ্বাস করেন না বলে আমাকে জানান।’
ক্ষমতাধর ওইসব ব্যক্তির সঙ্গে তাঁকে সরাসরি যোগাযোগ করিয়ে দিতে বাইডেনকে বলেছিলেন কমলা। কিন্তু বাইডেন ফোনে সেটা করেননি। বরং তিনি (বাইডেন) মাস তিনেক আগে ট্রাম্পের সঙ্গে নিজের বিপর্যয়কর বিতর্কের অভিজ্ঞতা নতুন করে বলার চেষ্টা করেছিলেন বলে স্মৃতিচারণায় উল্লেখ করেছেন কমলা।
‘জো (বাইডেন) তখন হইচই করে নিজের আগের বিতর্কের অভিজ্ঞতার কথা বলতে থাকেন। বলেন, ‘আমি এর আগেও তাঁর (ট্রাম্পের) বিরুদ্ধে জিতেছিলাম। কিন্তু শেষবার আমি ভালো বোধ করিনি।’
কমলা লিখেছেন, ‘বাইডেন জোর দিয়ে বলতে থাকেন, বিতর্কে পিছিয়ে পড়াটা ভোটারদের কাছে তাঁর খুব বেশি ক্ষতি করেনি। তবে আমি তাঁর এসব কথা খুব একটা শুনছিলাম না।’
কমলা লিখেছেন, তিনি মনে করতেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বিতর্ক ‘একটি বড় মুষ্টিযুদ্ধের মতো’ হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বজুড়ে এর বিশাল প্রভাব পড়বে। তাই তাঁকে তাঁর সেরাটাই দিতে হবে।
কমলা লিখেছেন, ‘আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না, কেন তিনি (বাইডেন) ঠিক তখনই আমাকে ফোন করলেন। ফিলাডেলফিয়ার কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তির অবস্থান সম্পর্কে জানিয়ে আমার মধ্যে অকারণ দুশ্চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত করলেন।’
তাঁর ‘রাগান্বিত ও হতাশাজনক’ অবস্থাটা স্বামী ডগ এমহফ দেখেছেন বলে উল্লেখ করেন কমলা। তখন ডগ স্ত্রীকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং বিতর্কে পূর্ণ মনোযোগ দিতে বলেন। কমলাকে তাঁর স্বামী বলেন, ‘ওঁকে (বাইডেন) নিয়ে চিন্তা করো না। তুমি ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে নামছো। ওই ভুলে যাও।’
বাইডেনের রানিংমেট ছিলেন কমলা। নির্বাচনী প্রচার ও তাঁর পরের সময়টায় তিনি কখনোই বাইডেনের সমালোচনা করেননি। বরং বাইডেনের মানসিক তীক্ষ্ণতা নিয়ে যখন প্রশ্ন ওঠে, ওই সময় কমলা তৎকালীন প্রেসিডেন্টের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
তবে এখন নিজের নতুন স্মৃতিচারণায় কমলা তৎকালীন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টানাপোড়েন নিয়ে খোলামেলাভাবে কিছু কথা লিখেছেন। কমলা লিখেছেন, ২০২২ সালে যখন সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতের অধিকারসংক্রান্ত আগের রায় বাতিল করে, তখন জো বাইডেন ওই মুহূর্তের গুরুত্ব বুঝে প্রজনন অধিকারের বিষয়ে কথা বলতে হিমশিম খেয়ে যান।
বাইডেনের প্রশাসন চালানোর সক্ষমতা আর নির্বাচনী প্রচার চালানোর দক্ষতার মধ্যে বিস্তর তফাৎ ছিল বলে স্বীকার করে নিয়েছেন কমলা। বাইডেনের নির্বাচনী প্রচার নিয়ে তাঁর উদ্বেগ ছিল বলেও জানান কমলা। এ বিষয়ে বইয়ে তিনি লেখেন, ‘তাঁর (বাইডেন) কণ্ঠ তখন আর ততটা জোরালো ছিল না। কথা বলতে গিয়ে হোঁচট খাওয়া ক্রমে বেড়ে যান।’
বাইডেনের রানিংমেট ছিলেন কমলা। নির্বাচনী প্রচার ও তাঁর পরের সময়টায় তিনি কখনোই বাইডেনের সমালোচনা করেননি। বরং বাইডেনের মানসিক তীক্ষ্ণতা নিয়ে যখন প্রশ্ন ওঠে, ওই সময় কমলা তৎকালীন প্রেসিডেন্টের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
কমলা ৪ জুলাইয়ের একটি ‘অস্বস্তিকর’ বৈঠকের কথা বইয়ে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে খারাপ করার পর ওই সময় নির্বাচনী লড়াই থেকে বাইডেনের সরে যাওয়ার দাবি ক্রমে জোরদার হয়ে উঠছিল। কমলা লিখেছেন, বৈঠকে বাইডেনকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। কেননা, তখন তাঁকে (বাইডেন) দেখতে বেশ ভঙ্গুর লাগছিল। এমনকি তখন ফার্স্টলেডি জিল বাইডেনের সঙ্গে দেখা করতে কমলার স্বামীকে নিয়ে যাওয়া হয়।
কমলা খোলাখুলি লিখেছেন, ওই সময় জিল বাইডেনকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, তিনি রেগে আছেন। তখন জিল বলেন, ‘এসব কী ঘটছে? আপনারা কি আমাদের সমর্থন করছেন?’
জবাবে কমলার স্বামী বলেন, ‘অবশ্যই। আমরা অবশ্যই আপনাদের সমর্থন করছি।’ এর জবাবে জিল বাইডেন বলেন, ‘আচ্ছা, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এটা জানা থাকা দরকার।’
হ্যারিস লিখেছেন, ‘যখন আমি তাঁর (ডগ এমহফ) কাছে গেলাম, তাঁর মুখে বেশ কঠিন অভিব্যক্তি ছিল। ডগ সাধারণত শান্ত স্বভাবের মানুষ। সহসা রাগেন না। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম, কিছু একটা তাঁকে গভীরভাবে আঘাত করেছে।’ পরে স্ত্রীর কাছে ক্ষোভ উগরে দেন ডগ এমহফ—এমনটাই লিখেছেন কমলা।
অনেকটা একই ধরনের হতাশা তাঁর মধ্যেও ছিল—স্পষ্ট করেই লিখেছেন কমলা। তিনি আরও লিখেছেন, একবার শুধু ভালো বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তিনি বাইডেনের দলের তীক্ষ্ণ সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন। কমলার মতে, বাইডেনের দলের মনোভাব ছিল অনেকটা এ রকম—‘যদি আমি উজ্জ্বল হই, তবে তিনি ম্লান হয়ে যাবেন।’