
নিউইয়র্কের নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। নির্বাচনী প্রচারের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি তিনি নিজ দলের প্রার্থীকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে সমর্থন জানিয়েছেন। ট্রাম্প নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের জোহরান নয়, কুমোকে ভোট দিতে বলেছেন।
ভোটে জিতে নিজের বিজয় ভাষণেই ট্রাম্পকে খোঁচা দিলেন জোহরান মামদানি। বললেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি যত দূর জানি, আপনি দেখছেন। আমি আপনাকে চারটি শব্দ বলব: টার্ন দ্য ভলিউম আপ (আওয়াজ বাড়ান)।’
‘বন্ধুরা, আমরা একটি রাজনৈতিক রাজবংশের উৎখাত করেছি।’ জোহরান মামদানি, নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র
জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারের পুরোটাজুড়ে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ৭৯ বছর বয়সী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট নিউইয়র্কে বিশেষ করে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেগুলো প্রতিহত করার প্রতিশ্রুতিই ছিল জোহরানের নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু।
বিজয় ভাষণে ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে জোহরান আরও বলেন, ‘আপনি আমাদের মধ্যে কারও কাছে পৌঁছাতে চাইলে আপনাকে আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’
জোহরান যখন তাঁর বিজয় ভাষণে ট্রাম্পকে নিয়ে কথা বলছেন, সে সময় ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘…এবং এবার এটা শুরু হলো!’
ভোটে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর নগরের ব্রুকলিনে বিজয়ী ভাষণ দেন জোহরান। তিনি মঞ্চে আসার পর দর্শক-সমর্থকেরা ‘জোহরান, জোহরান’ বলে চিৎকার করে ওঠেন।
জোহরান তাদের লক্ষ্য করে বলেন, ‘আজ আমরা স্পষ্ট কণ্ঠে বলছি, আশা বেঁচে আছে। এটি এমন এক যুগ হবে, যেখানে নিউইয়র্কের বাসিন্দারা তাঁদের নেতাদের কাছে আরও সাহসী ভূমিকা প্রত্যাশা করবেন।’
জোহরান যখন তাঁর বিজয়ভাষণে ট্রাম্পকে নিয়ে কথা বলছেন, সে সময় ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘...এবং এবার এটা শুরু হলো!’
রাজনীতিতে অন্ধকারাচ্ছন্ন এই সময়ে নিউইয়র্ক আলোর প্রদীপ হবেন বলেও ভাষণে আশা প্রকাশ করেন জোহরান মামদানি।
জোহরান আধা ঘণ্টার কিছু কম সময় বিজয় ভাষণ দিয়েছেন।
নির্বাচনী প্রচারের সময় জোহরান মামদানি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিজয় ভাষণে তিনি সেগুলোই পুনর্ব্যক্ত করেন। ভাষণে তিনি বিনা মূল্যে বাস, বিনা মূল্যে সর্বজনীন শিশু স্বাস্থ্যসেবা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার মাধ্যমে নিউইয়র্ক শহরকে শ্রমজীবীদের জন্য আরও বাসযোগ্য করতে সহায়তা করার কথা বলেছেন।
ভাষণে জোহরান তাঁর হয়ে নির্বাচনী প্রচার চালানো এক লাখের বেশি স্বেচ্ছাসেবীকে জয় উৎসর্গ করে বলেন, তাঁরাই এই প্রচারকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছেন।
নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র আরও বলেন, ‘আপনাদের কারণেই...আমরা এই শহরকে এমন একটি স্থান বানাব, যেখানে শ্রমজীবী মানুষেরা আবার ভালোবেসে বাস করতে পারবেন।’
ভোটের এই ফলাফলের মাধ্যমে নিউইয়র্কের মানুষ পরিবর্তনের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করেন জোহরান।
এই ডেমোক্র্যাট মেয়র বলেন, ‘বন্ধুরা, আমরা একটি রাজনৈতিক রাজবংশের উৎখাত করেছি।’
অ্যান্ড্রু কুমোকে নিয়ে মামদানি বলেন, ‘আমি অ্যান্ড্রু কুমোর ব্যক্তিজীবনের জন্য শুভকামনা জানাই। তবে আজ রাতেই যেন শেষবার আমাকে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে হয়।’
নিজের জয়ের দিনটিকে মানবতার জন্য একটি সুন্দর দিনের সূচনা বলে উল্লেখ করেন জোহরান।
জোহরান বলেন, ‘আমাদের যত দূর মনে পড়ে, ধনকুবের ও প্রভাবশালীরা নিউইয়র্কের শ্রমজীবী মানুষকে বারবার বলেছেন, তাদের হাতে ক্ষমতা নেই। তবু ১২ মাসের বেশি সময় ধরে আপনারা বড় কিছু অর্জন করার সাহস দেখিয়েছেন। আজ রাতে সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে আমরা তা অর্জন করেছি।’
আনন্দ-উল্লাস করতে থাকা সমর্থকদের দিকে তাকিয়ে জোহরান মামদানি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ আমাদের হাতে।’