কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল উড়োজাহাজ (বোয়িং জেট) উপহার হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা কোনো রাজা-বাদশাহ, যুবরাজ বা বিদেশি রাষ্ট্র থেকে উপহার গ্রহণ করতে পারবেন না। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বিদেশি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উপহার নেওয়া সম্পর্কিত আইনগুলোর ব্যাপ্তি নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলছে। কারণ, এতে দুর্নীতি আর অযাচিত প্রভাবের আশঙ্কা থাকে। নিচে কিছু প্রাসঙ্গিক আইন ও উদাহরণ তুলে ধরা হলো—
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কী বলছে
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দুটি ধারা অনুযায়ী, বিদেশি রাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বা অঙ্গরাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রেসিডেন্ট উপহার বা সুবিধা গ্রহণে করতে পারবেন না।
একটি ধারায় বলা আছে, কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত কর্মকর্তারা বিদেশি রাষ্ট্র, রাজা-বাদশাহ ও যুবরাজের কাছ থেকে কোনো উপহার নিতে পারবেন না। আরেকটি ধারা অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট তাঁর বেতনের বাইরে কোনো উপহার গ্রহণ করতে পারবেন না।
অবশ্য অতীতে কংগ্রেস বিদেশি রাষ্ট্রের কাছ থেকে উপহার নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। ১৮৭৭ সালে ফ্রান্সের দেওয়া স্ট্যাচু অব লিবার্টি উপহার হিসেবে গ্রহণের অনুমতি দিয়েছিল কংগ্রেস।
সংবিধানের বিদেশি উপহার নেওয়ার ধারায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ২০০৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করতে বাধা দেওয়া হয়নি। এমনকি পুরস্কারের ১৪ লাখ ডলারের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমতি নেওয়া হয়নি।
মার্কিন বিচার বিভাগের অফিস অব লিগ্যাল কাউন্সেলের একটি মেমোতে বলা হয়েছে, নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করলে সংবিধান লঙ্ঘিত হবে না। কারণ, নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি বিদেশি রাষ্ট্র, রাজা-বাদশাহ বা যুবরাজ নয়। ওবামা সেই অর্থ দাতব্য কাজে দান করেছিলেন।
এই বিধানগুলো কে প্রয়োগ করতে পারেন
কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, উপহার নেওয়ার বিধানগুলো কে প্রয়োগ করতে পারেন, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টও এই প্রশ্নের সমাধান বা ব্যাখ্যা দেয়নি।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উপহার নিতে গিয়ে আইনের লঙ্ঘন হয়েছে, এমনটা মনে করলে কংগ্রেস সদস্য, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অঙ্গরাজ্য, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। তবে এ ধরনের মামলা করতে গিয়ে বিভিন্ন আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।
মার্কিন আদালতে কোনো মামলা করতে হলে বাদীর আইনি সক্ষমতা থাকতে হবে, অর্থাৎ তাঁকে অবশ্যই এমন একজন হতে হবে, যাঁর এই মামলা করার বৈধ অধিকার আছে। এটি যেকোনো মামলার অগ্রগতি বা গ্রহণযোগ্যতার জন্য একটি মৌলিক শর্ত।
মার্কিন আদালত উপহার নিয়ে কী বলে
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের আগপর্যন্ত উপহারের ধারা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো মামলা বা আইনি লড়াই হয়নি। ‘ইমোলুমেন্ট’ শব্দের অর্থ নিয়েও এখনো আইনি মতবিরোধ রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ট্রাম্পের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি সরকারের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে, এমন অভিযোগে ডেমোক্রেটিক পার্টির কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য ২০১৭ সালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওয়াশিংটনের ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে কুয়েত একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের পর এই মামলা করা হয়।
তবে ওয়াশিংটন ডিসির আপিল আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়। কারণ, আদালত মনে করেছিলেন কংগ্রেসের ওই ২১৫ জন সদস্য পুরো কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব করে না এবং তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠও ছিলেন না। ফলে তাঁদের আইনি ভিত্তি ছিল না। তখন কংগ্রেসের দুই কক্ষই রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, যেমনটি এখনো রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ২০২০ সালের অক্টোবরে সেই রায়টি পর্যালোচনা করতে অস্বীকৃতি জানায়।
মেরিল্যান্ড ও ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি জেনারেলরাও যৌথভাবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁর ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ইমোলুমেন্টস মামলা করেন। আইনি ভিত্তি প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় তিনজন বিচারকের একটি প্যানেল সেই মামলাটিও খারিজ করে দেয়।
অন্যান্য মার্কিন আইন বিদেশি উপহার নিতে বাধা দেয় কি না
বিদেশি উপহার ও অলংকার আইনে উপহার গ্রহণের কিছু নিয়ম রয়েছে। এই আইনের অধীন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৪৮০ ডলার বা তার চেয়ে কম মূল্যের উপহার নিজের কাছে রাখতে পারেন। এর বেশি মূল্যের উপহার গ্রহণ করা হলে, তা দেশের পক্ষে গ্রহণ করা হয় এবং সেই উপহারের মালিকানা সরকারের কাছে থাকে।
তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে ৪৮০ ডলারের বেশি মূল্যের উপহার নিজের কাছে রাখতে পারেন, যদি তিনি সরকারকে উপহারের ন্যায্য বাজারমূল্য পরিশোধ করেন।