নিউইয়র্কে ইহুদিদের একাংশ জোহরান মামদানিকে সমর্থন জানিয়ে তাঁর পক্ষে ভোটের প্রচার চালিয়েছেন। ৫ নভেম্বর ২০২৫
নিউইয়র্কে ইহুদিদের একাংশ জোহরান মামদানিকে সমর্থন জানিয়ে তাঁর পক্ষে ভোটের প্রচার চালিয়েছেন। ৫ নভেম্বর ২০২৫

জোহরান মামদানির জয়: নিউইয়র্কের ইহুদিদের ইসরায়েলে চলে আসতে বলছেন ইসরায়েলি মন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানিকে হামাসের (ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন) সমর্থক আখ্যা দিয়ে সেখানে বসবাসকারী ইহুদিদের ইসরায়েলে চলে আসার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির এক মন্ত্রী।

গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে বিপুল ভোটে হারিয়ে নতুন মেয়র হয়েছেন জোহরান মামদানি। পরদিন গতকাল বুধবার ইসরায়েলের কট্টর দক্ষিণপন্থী ওই মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

৩৪ বছর বয়সী দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ও অভিবাসী পরিবারের সন্তান জোহরান মামদানি নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনি আন্দোলনের পক্ষে কথা বলে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় তিনি যেমন স্পষ্টভাবে ইহুদিবিদ্বেষের নিন্দা জানিয়েছেন, তেমনি নিজে ইসলামবিদ্বেষের শিকার হওয়া নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন।

যে শহর (নিউইয়র্ক) একসময় বৈশ্বিক স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল, সেই শহর এখন নিজের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছে এক হামাস সমর্থকের (জোহরান মামদানি) হাতে।
আমিখাই চিকলি, ইসরায়েলের মন্ত্রী

ইসরায়েলের প্রবাসী ও ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধবিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই চিকলি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘যে শহর (নিউইয়র্ক) একসময় বৈশ্বিক স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল, সেই শহর এখন নিজের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছে এক হামাস সমর্থকের হাতে।’

এই মন্ত্রী আরও বলেন, ‘নিউইয়র্ক কখনো আর আগের মতো থাকবে না, বিশেষ করে ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য। আমি নিউইয়র্কের ইহুদিদের ইসরায়েলের ভূখণ্ডে নিজেদের নতুন বসতি গড়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আমন্ত্রণ জানাই।’

ইসরায়েলকে নিয়ে কথা বলার সময় জোহরান মামদানি দেশটিতে ‘বর্ণবৈষম্যমূলক শাসনব্যবস্থা’ চলছে বলে মন্তব্য করেন। এ ছাড়া তিনি ইসরায়েলে গাজা যুদ্ধকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে বর্ণনা করেছেন। এসব কারণে ইহুদি সম্প্রদায়ের একাংশের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। যদিও নিউইয়র্কে ইহুদিদের একাংশ তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষে ভোটের প্রচার চালিয়েছেন।

জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বিজয় ভাষণের মঞ্চে স্ত্রী রমা দুওয়াজি নিয়ে জোহরান মামদানি। ৫ নভেম্বর ২০২৫

এদিকে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ও কট্টর দক্ষিণপন্থী নেতা ইতামার বেনগভির গতকাল চিকলির এ আহ্বানে সমর্থন জানান।

এক বিবৃতিতে বেনগভির বলেন, ‘ইহুদিবিদ্বেষ সাধারণ বিচারবুদ্ধির ওপর জয়লাভ করেছে। মামদানি হামাসের সমর্থক, ইসরায়েলের শত্রু ও স্বীকৃত ইহুদিবিদ্বেষী।’

জোহরান মামদানি এমন এক সময় এ অভূতপূর্ব জয় পেয়েছেন, যখন ট্রাম্পপন্থী ধনকুবের ব্যবসায়ী, রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যমগুলোর বিশ্লেষক ও স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে তাঁর নীতিমালা ও মুসলিম পটভূমি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন।

ট্রাম্প সরাসরি নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের জোহরান মামদানিকে ভোট না দিয়ে অ্যান্ড্রু কুমোকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। মঙ্গলবার ভোটের দিনও ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জোহরানকে ‘ইহুদিদের ঘৃণাকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

আগামী বছরের ১ জানুয়ারি নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে শপথ নেবেন জোহরান মামদানি।