
ইরানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামরিক অভিযান চালানোর ক্ষমতা খর্বের জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টির উত্থাপিত এক প্রস্তাব গতকাল শুক্রবার নাকচ করে দিয়েছে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত মার্কিন সিনেট। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি ইরানে আবারও বোমাবর্ষণের কথা বিবেচনা করছেন।
ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চাইলে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়ার কথা বলা হয় এ প্রস্তাবে। কিন্তু ৫৩-৪৭ ভোটে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়।
ভোটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হলেও ব্যতিক্রম ছিলেন দুজন। পেনসিলভানিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর জন ফেটারম্যান রিপাবলিকানদের সঙ্গে মিলে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন, আর কেনটাকির রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পল প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মিলে।
প্রস্তাবের প্রধান উদ্যোক্তা সিনেটর টিম কেইন কয়েক বছর ধরেই রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা সীমিত করার পক্ষে কাজ করে আসছেন।
ভোটাভুটির আগে দেওয়া এক বক্তব্যে কেইন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী শুধু কংগ্রেসেরই যুদ্ধ ঘোষণার একক অধিকার রয়েছে—এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই তাঁর এ উদ্যোগ। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে কোনো বৈরিতায় জড়াতে হলে কংগ্রেসের যুদ্ধ ঘোষণা বা সামরিক শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে স্পষ্ট অনুমোদন প্রয়োজন।
‘আপনি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের পক্ষে হোন বা বিপক্ষে, যদি মনে করেন, প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের অনুমতি নেওয়া উচিত, তবে আপনি সিনেটের যৌথ প্রস্তাব ৫৯-এর পক্ষে থাকবেন। কারণ, এটাই হলো সেই সংবিধানকে সমর্থন করা, যা বহু বছর ধরে টিকে আছে,’ বলেন কেইন।
ভোটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হলেও ব্যতিক্রম ছিলেন দুজন। পেনসিলভানিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর জন ফেটারম্যান রিপাবলিকানদের সঙ্গে মিলে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন, আর কেনটাকির রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পল প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মিলে।
কংগ্রেস সদস্যরা সম্প্রতি ইরানে মার্কিন হামলা ও ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত সম্পর্কে আরও তথ্য জানার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
গতকালই ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পরিকল্পনা থেকে তিনি সরে এসেছেন। এ ছাড়া তিনি বলেন, যদি ইরান উদ্বেগজনক মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে, তবে তিনি আবারও দেশটিতে বোমাবর্ষণের কথা বিবেচনা করবেন।
এ প্রস্তাব ভবিষ্যতে কোনো প্রেসিডেন্টকে তাত্ক্ষণিক সংকটে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে। একটি সংকটময় মুহূর্তে মানুষের জীবন যখন ঝুঁকিতে, তখন আমাদের প্রেসিডেন্টকে বাধা দেওয়া উচিত নয়।—বিল হ্যাগার্টি, টেনেসির রিপাবলিকান সিনেটর
ট্রাম্প এ প্রতিক্রিয়া জানান খামেনির এক বক্তব্যের পর, যা ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিন ধরে চলা সংঘাত শেষে দেন তিনি। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা এবং পরে কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের পাল্টা হামলা চালানোর পর যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে এ সংঘাত শেষ হয়।
‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’
ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা দল বৃহস্পতিবার ও গতকাল সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের ওই হামলা নিয়ে গোপন ব্রিফিং দেয়। অনেক ডেমোক্র্যাট সদস্য ব্রিফিং শেষে বলেছেন, ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়েছে—এমন তথ্য তাঁদের বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।
ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা দল বৃহস্পতিবার ও গতকাল সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের ওই হামলা নিয়ে গোপন ব্রিফিং দেয়। অনেক ডেমোক্র্যাট সদস্য ব্রিফিং শেষে বলেছেন, ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়েছে—এমন তথ্য তাঁদের বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।
তবে প্রস্তাবের বিরোধীরা বলেন, ইরানে ওই হামলা ছিল এককালীন ও একটি সীমিত সামরিক অভিযান। এটি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের এখতিয়ারভুক্ত এবং তা কোনো দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত শুরুর অংশ নয়।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাপানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা টেনেসির রিপাবলিকান সিনেটর বিল হ্যাগার্টি বলেন, এ প্রস্তাব ভবিষ্যতে কোনো প্রেসিডেন্টকে তাত্ক্ষণিক সংকটে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে।
‘একটি সংকটময় মুহূর্তে, মানুষের জীবন যখন ঝুঁকিতে, তখন আমাদের প্রেসিডেন্টকে বাধা দেওয়া উচিত নয়,’ বলেন হ্যাগার্টি।
ট্রাম্প অবশ্য বারবারই প্রত্যাখ্যান করেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি তাঁর দাবির তুলনায় কম হতে পারে। ইরান বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনে, ‘যুদ্ধ–ক্ষমতাসংক্রান্ত’ প্রস্তাবগুলো বিশেষ মর্যাদার। ফলে সিনেটকে তাৎক্ষণিকভাবে এ ধরনের প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে ভোটের আয়োজন করতে হয়। চলতি মাসেই কেইন প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
তবে প্রস্তাব কার্যকর করতে হলে তা শুধু সিনেটে পাস করলেই হতো না, প্রতিনিধি পরিষদেও হতে হতো। কিন্তু ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন এ সপ্তাহেই বলেন, এখন এ ধরনের উদ্যোগের উপযুক্ত সময় নয়।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০২০ সালে ইরানের বিরুদ্ধে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা আটকাতে কেইন অনুরূপ একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। এটি তখন সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়। তবে সেটি শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের ভেটো অতিক্রম করতে পারেনি।