যুক্তরাজ্যর পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা, পরিবর্তনে করা হয়েছে ১০ সুপারিশ
অধ্যাপক বেকি ফ্রান্সিসের নেতৃত্বে এক বছরের পাঠ্যক্রম ও মূল্যায়ন পর্যালোচনা শেষে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। সরকার এই অধ্যাপককে ইংল্যান্ডের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ১৬-১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য রাষ্ট্রীয় শিক্ষার ধাপগুলো বিশ্লেষণ করার দায়িত্ব দেয়। এতে সাধারণ মানুষের ৭ হাজারেরও বেশি পরামর্শ ও প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করা হয় এবং ফ্রান্সিসের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ প্যানেল পরামর্শ, প্রতিক্রিয়া যাচাই করে ১৯৭ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
সুপারিশের মধ্যে রয়েছে জিসিএসই পরীক্ষার সময় কমানো, গণিত ও ইংরেজিতে নতুন পরীক্ষা এবং ধর্মীয় শিক্ষা আরও সম্প্রসারণ করা। সুপারিশে বলা হয়েছে পাঠ্যক্রম ‘পরীক্ষার ওপর কম এবং জীবন দক্ষতার ওপর বেশি মনোযোগ’ দেওয়া উচিত। প্রধান সুপারিশগুলো হলো—
১. জিসিএসই পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত করা
জিসিএসই (জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন) পরীক্ষা যুক্তরাজ্যের একটি অপরিহার্য পরীক্ষা, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এ পরীক্ষার সময় ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে সুপারিশে। এটি করতে পারলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রায় তিন ঘণ্টা সময় বাচবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডের ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার সংখ্যা ও দৈর্ঘ্য (সময়) ‘অতিরিক্ত’। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপারটি দেখলে এটি অস্বাভাবিক।
ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ১৪-১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগত যোগ্যতার পরীক্ষা জিসিএসই। এ পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান মূল্যায়ন করে এবং ‘এ’ লেভেল বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ভিত্তি তৈরি করে। পরীক্ষার অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হলো মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান যাচাই করা এবং উচ্চশিক্ষা ও কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করা। সাধারণত ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান (জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা) বাধ্যতামূলক থাকে। এ ছাড়া প্রায় ৬০টি বিষয় থেকে কয়েকটি বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে।
২. জিসিএসই বিষয়বস্তুর পরিমাণ কমানো
বিশেষ করে ইতিহাস ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠ্যবস্তুর পরিমাণ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা শারীরিক শিক্ষা, নাগরিক শিক্ষা এবং সম্পর্ক, যৌনতা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা মতো মূল্যায়নবহির্ভূত কিন্তু বাধ্যতামূলক বিষয়গুলোর জন্য বেশি সময় পায়।
৩. ইংলিশ ব্যাকালোরিয়েট বাতিল
মাইকেল গোভের প্রবর্তিত ইংলিশ ব্যাকালোরিয়েট (EBacc) স্যুইট, যা শিক্ষার্থীদের আটটি মূল একাডেমিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ করেছিল। কিন্তু বাদ দিয়েছিল শিল্প ও বৃত্তিমূলক বিষয়। এটি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন সুপারিশে। এটি নিয়ে দীর্ঘদিন শিল্প ও সৃজনশীল বিষয়ের শিক্ষকেরা বিরোধিতা করছেন।
৪. সামাজিক বৈচিত্র্যে বেশি গুরুত্ব
পাঠ্যক্রমে ‘যুক্তরাজ্যের আধুনিক সমাজের বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করা এবং শিশুদের নিজেদের সেখানে দেখতে পাওয়ার সুযোগ’ আরও জোরালোভাবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৫. ধর্মীয় শিক্ষা সম্প্রসারণ
ধর্মীয় শিক্ষা সব স্তরে জাতীয় পাঠ্যক্রমের অংশ করা উচিত এবং স্থানীয় পরামর্শ কাউন্সিলগুলোর পরিবর্তে জাতীয়ভাবে এর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষার মান ভালো নয় এবং এটি শিক্ষার্থীদের স্কুল-পরবর্তী জীবনের জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত করছে না।
৬. গণিত ও ইংরেজির জন্য নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি
৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি চিহ্নিত করতে শিক্ষকদের সহায়তার জন্য গণিত ও ইংরেজিতে নতুন পরীক্ষা চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সুপারিশে। তবে শিক্ষক ইউনিয়নগুলো এর বিরোধিতা করছে। তাদের ভাষ্য হলো—সরকার ইতিমধ্যে নিজস্ব জাতীয় রিডিং টেস্ট প্রস্তাব করেছে। তাই এটির দরকার নেই।
৭. বাধ্যতামূলক নাগরিক শিক্ষা
সরকারকে প্রাথমিক স্তর থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য নাগরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে আর্থিক সচেতনতা, গণমাধ্যম সম্পর্কে জ্ঞান, জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়ন–সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
৮. প্রাথমিক স্তরের ব্যাকরণ শিক্ষা ও পরীক্ষা পুনর্মূল্যায়ন
প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যাকরণ শিক্ষা ও পরীক্ষার পুনর্মূল্যায়নের প্রস্তাব করেছে অধ্যাপক বেকি ফ্রান্সিসের কমিটি। যাতে অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিয়ে বাস্তব লেখালেখি ও প্রয়োগভিত্তিক ব্যাকরণে বেশি জোর দেওয়া যায়।
৯. কম্পিউটিং সায়েন্স জিসিএসই প্রতিস্থাপন
বর্তমান কম্পিউটিং সায়েন্স জিসিএসইয়ের পরিবর্তে আরও বিস্তৃত কম্পিউটিং জিসিএসই পরীক্ষা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে তরুণ শিক্ষার্থীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ (এআই) বিস্তৃত পরিসরে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং ডেটা প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত করবে।
১০. শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ট্রিপল সায়েন্স নেওয়ার সুযোগ
সরকার যেন এমন একটি নীতি প্রণয়ন করে, যাতে যেকোনো শিক্ষার্থী জিসিএসই স্তরে ‘ডাবল সায়েন্স’-এ সীমাবদ্ধ না থেকে ট্রিপল সায়েন্সে অভ্যস্ত হতে পারে। ট্রিপল সায়েন্স হলো (জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন) বিষয়। আর ডাবল সায়েন্স হলো এর দুটো।