বার্সেলোনা: নতুন মৌসুমের দলটা কেমন, কোথায় শক্তি, কোথায় দুর্বলতা
স্পেনের ফুটবলে নতুন মৌসুম শুরু হয়ে গেছে গতকালই। তবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা মাঠে নামছে আজ। মায়োর্কার মাঠে আজ রাত ১১-৩০ মিনিটে ম্যাচ দিয়ে কাতালানরা শুরু করবে শিরোপা ধরে রাখার মিশন।
লা লিগা, স্প্যানিশ সুপার কাপ ও কোপা দেল রে—হান্সি ফ্লিকের দল গত মৌসুমে এই তিন শিরোপা জিতে ঘরোয়া ট্রেবল নিশ্চিত করলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে বাদ পড়েছিল সেমিফাইনাল থেকে, ইন্টার মিলানের কাছে হেরে। এবার গ্রীষ্মকালীন দলবদলে হোয়ান গার্সিয়া ও মার্কাস রাশফোর্ডকে দলে নিয়ে আরও শক্তিশালী হয়েছে বার্সা। স্বাভাবিকভাবেই ক্লাবের প্রত্যাশা এবার আরও বেশি। বেশি মানে লা লিগার শিরোপা ধরে রাখা আর চ্যাম্পিয়নস লিগের সিংহাসনে আবারও আসীন হওয়া।
ফ্লিক নিজেও খুব ভালো করে জানেন, ইউরোপ-সেরার স্বীকৃতি না পেলে চূড়ান্ত বিচারে তিনি বার্সেলোনার ইতিহাসে স্রেফ অন্য একজন কোচ হিসেবেই থেকে যাবেন।
এবার কারা এসেছেন
গোলকিপার হোয়ান গার্সিয়াকে বার্সা এনেছে প্রতিবেশী এসপানিওল থেকে—২ কোটি ৫০ লাখ ইউরোর রিলিজ ক্লজ শোধ করে। ইংলিশ ফরোয়ার্ড মার্কাস রাশফোর্ডকে আনা হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে, এক মৌসুমের ধারে। ডেনিশ ক্লাব কোপেনহেগেন থেকে মাত্র ২০ লাখ ইউরোয় আনা হয়েছে ১৯ বছরের উইঙ্গার রুনি বার্দগজিকে। গত মৌসুমের শুরুতে জরুরি পরিস্থিতিতে আসা ভয়েচেক শেজনিও চুক্তি নবায়ন করে এবার থাকছেন বিকল্প গোলকিপার হিসেবে।
প্রথম দুজনকে আনা হয়েছে বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে। গার্সিয়া মূলত মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনের দীর্ঘমেয়াদি উত্তরসূরি। ৩৩ বছরে পা দেওয়া স্টেগেন গত ১১ মাসে দুবার অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। ক্লাব মনে করছে, তিনি আগের মতো ফর্মে নেই। উইংয়ের বাঁ দিকে শক্তি বাড়াবেন রাশফোর্ড, চাইলে মাঝেও খেলতে পারেন। গত মৌসুমে একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে হয়েছিল, বার্সার আক্রমণভাগে ফ্লিকের হাতে বিকল্প কম। রাশফোর্ড আসায় ইয়ামাল, রাফিনিয়া এবং ৩৬ বছরের রবার্ট লেভানডফস্কি কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
বার্দগজিকে নিয়ে আসলে বার্সার স্পোর্টিং ডিরেক্টর ডেকো একটা ‘বাজি’ই ধরেছেন বলা যায়। খুব খারাপ হলেও ভবিষ্যতে বিক্রি করে লাভ হবে বলে তাঁর আশা। তবে আপাতত প্রাক্-মৌসুমেই বার্সা কোচ ফ্লিককে মুগ্ধ করেছেন এই সুইডিশ। তাঁকে বি দলের বদলে মূল দলেই রাখা হবে বলে শোনা যাচ্ছে।
কাদের নিতে পারেনি বার্সা
নিকো উইলিয়ামস ও লুইস দিয়াজ—বাঁ উইংয়ের জন্য শুরুর দিকে পছন্দ ছিলেন এই দুজন। উইলিয়ামসের সঙ্গে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত হলেও শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায়। লা লিগার বেতনসীমার শর্ত মেনে বার্সা তাঁকে শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন করাতে পারবে কি না, এ নিয়ে উইলিয়ামসের সন্দেহ ছিল। দিয়াজের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা টাকা। লিভারপুলের দাবি মেটাতে পারেনি বার্সা। বায়ার্ন মিউনিখ আগ্রহ দেখাতেই বার্সা বুঝে যায়, সেই আর্থিক ক্ষমতা তাদের নেই। শেষ পর্যন্ত ২৮ বছরের কলম্বিয়ান যোগ দেন বায়ার্নে—৭ কোটি ইউরো মূল চুক্তি, সঙ্গে ৫০ লাখ সম্ভাব্য বোনাস।
নতুন কী এবার
লামিনে ইয়ামালের জার্সি নম্বর। ১৮ বছর বয়সী এই বিস্ময়বালক এবার পরবেন লিওনেল মেসির রেখে যাওয়া সেই বিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সি। যেটা আগে ছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনা, রোনালদিনহোর মতো কিংবদন্তির গায়ে। এখন সে দায়িত্ব ইয়ামালের কাঁধে। গত মৌসুমে বড় মঞ্চে আলো ছড়ানো এই তারকাকে নিয়ে এবার প্রত্যাশা অনেক বেশি।
কোন ম্যাচ থেকে বার্সা আবার ক্যাম্প ন্যুতে ফিরবে, এ নিয়ে একটু সংশয় আছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে সংস্কারকাজ চলছে ক্যাম্প ন্যুর, সেটি শেষ হলে সেপ্টেম্বরে চেনা স্টেডিয়ামে ফিরতে পারে বার্সা। এখন পর্যন্ত যতটুকু সংস্কারকাজ হয়েছে, তাতে চাইলে ১৪ সেপ্টেম্বর ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে চতুর্থ ম্যাচ ক্যাম্প ন্যুতে খেলতে পারবে, তবে গ্যালারিতে ২৭ হাজারের বেশি দর্শকের স্থান হবে না। প্রথম তিন ম্যাচ অন্য মাঠে খেলতে লিগ কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে অনুমতি দিয়েছে। গত মৌসুমে বার্সেলোনার হোম ভেন্যু ছিল অলিম্পিক স্টেডিয়াম।
প্রাক্-মৌসুমের সেরা খেলোয়াড় কে
ইয়ামাল যথারীতি দুর্দান্ত—চার ম্যাচে করেছেন ৪ গোল। জাপান–দক্ষিণ কোরিয়া সফরে তিন ম্যাচে ৩ গোল গাভির। হাঁটুর চোট থেকে সেরে উঠে পুরো প্রাক্-মৌসুম খেলা এই মিডফিল্ডার আগের ফর্মে ফিরছেন বলেই মনে হচ্ছে। এখন ফ্লিকের ‘মধুর সমস্যা’ পেদ্রি আর ফ্রেঙ্কি ডি ইয়াংয়ের পাশাপাশি গাভির জন্যও জায়গা বের করা।
আর কী পরিবর্তন দেখা যেতে পারে
লেভানডফস্কি হয়তো পুরো মৌসুমে প্রথম একাদশে খেলবেন না। আগামী সপ্তাহেই পালন করবেন ৩৭তম জন্মদিন, এই পোলিশ স্ট্রাইকারের চুক্তিও শেষ হয়ে যাচ্ছে এ মৌসুম শেষেই। ক্লাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ফ্লিকের চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে হয়তো ফেরান তোরেসকেই অনেক বেশি ৯ নম্বর হিসেবে দেখা যাবে। ২৫ বছর বয়সী তোরেস প্রাক্-মৌসুমে দুই ম্যাচে ২ গোল করেছেন। রাশফোর্ডও প্রয়োজনে খেলতে পারেন এ ভূমিকায়।
সমর্থকদের জন্য খুশির খবর কী
মার্ক বার্নালের ফেরা। লা মাসিয়ার এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার গত মৌসুমে অভিষেকের পর মোট তিনটা ম্যাচ খেলেই বড় চোটে পড়েছিলেন। এখন পুরো ফিট, পুরো প্রাক্-মৌসুমে ছিলেন দলের সঙ্গে। নতুন মৌসুমে হয়তো তাঁকে একাদশেও দেখা যাবে।
চিন্তার কারণ
রক্ষণভাগ। গত মৌসুমের শেষ দিকে অনেক গোল খেয়েছিল বার্সা। চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের দুই লেগ মিলিয়ে তাদের ৭ গোল দিয়ে বিদায় করে দিয়েছিল ইন্টার মিলান। ফ্লিকের হাই প্রেসিং আর উঁচু ডিফেন্সিভ লাইন অনেক ম্যাচে ফল দিয়েছে, কিন্তু প্রতিপক্ষ বুঝে গেলে ফাঁকগুলো বের করাও সহজ হয়ে গেছে। নতুন মৌসুম শুরুর এক সপ্তাহ আগে ইনিজো মার্তিনেজের ফ্রি ট্রান্সফারে চলে যাওয়া খবরটাও ভালো নয়।
ফ্লিকের মনমেজাজ
খুবই ভালো। গ্রীষ্মের শুরুতে চিহ্নিত দুর্বলতা কাটানো গেছে। টের স্টেগেন ইস্যুতে কিছু অস্বস্তি ছিল—জার্মান গোলকিপার গত সপ্তাহে ক্লাবের অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন, পরে সেটা মিটমাট হয়ে গেছে। তাঁকে আবার অধিনায়ক করা হয়েছে। যদিও অস্ত্রোপচারের কারণে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। ফ্লিকের অধীনে প্রথম মৌসুমেই দল দারুণ খেলেছে। গত মে মাসেই জার্মান এই কোচের চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে, বেতন বেড়েছে, মেয়াদ ২০২৭ পর্যন্ত। খেলোয়াড়েরাও তাঁর দর্শনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে বার্সা ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত।