মেসির হাতেই ফিফার বর্ষসেরা ‘বেস্ট’ ট্রফি

ফিফার পুরুষ বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘বেস্ট’ ট্রফি হাতে মেসিছবি: রয়টার্স

প্যারিসে পুরস্কারের মঞ্চ প্রস্তুতই ছিল। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। লিওনেল মেসির হাতে ফিফার বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘দ্য বেস্ট’ তুলে দেওয়ার মাধ্যমে সেই আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন হলো। ফিফার ২০২২ সালের বর্ষসেরা ‍পুরুষ খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন আর্জেন্টাইন তারকা মেসি। এটি তাঁর ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ‘বেস্ট’ ট্রফি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

ডিসেম্বরে কাতারে বিশ্বকাপ জিতেছেন মেসি। ফিফার এই বর্ষসেরা পুরস্কার জয়ের দৌড়ে মেসির বাকি দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন করিম বেনজেমা ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। দুজনেই ফ্রান্সের তারকা। বেনজেমা বিশ্বকাপে খেলতে না পারলেও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন। এর সুবাদে ব্যালন ডি’অর জিতলেও সেটি মৌসুমের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। ফিফা ‘বেস্ট’ পুরস্কারে দেখা হয়েছে বছরের পারফরম্যান্স। তাতে মেসি এ দুজনের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে পুরস্কারটি জিতেছেন।

এবারও নারীদের বর্ষসেরা ‘বেস্ট’ জিতেছেন স্পেনের ও বার্সেলোনার তারকা অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াস
ছবি: রয়টার্স

আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা এমবাপ্পে উপস্থিত থাকলেও বেনজেমা যাননি প্যারিসে। এমবাপ্পে বিশ্বকাপের ফাইনালে হারলেও সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার ‘গোল্ডেন বুট’ জিতেছেন। কিন্তু মেসি আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর পথে হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। জিতেছেন ‘গোল্ডেন বল।’ তবে বিশ্বকাপের আগে পিএসজির হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন এমবাপ্পে। হয়েছেন ফ্রান্সের বর্ষসেরা। কিন্তু ‘মেসি বিশ্বকাপ জেতায় (বেস্ট জয়ে) এগিয়ে থাকবেন’ বলে আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ডাচ কিংবদন্তি রুদ খুলিত

আরও পড়ুন
‘এই বছরটা আমার জন্য দারুণ ছিল। অনেক ত্যাগের পর স্বপ্নপূরণ হয়েছে। খুব কম খেলোয়াড়ই এই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে এবং আমি তা পেরেছি। নিজের পরিবার ও আর্জেন্টিনার মানুষদের ধন্যবাদ জানাই।’
লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড
আরও পড়ুন

২০১৬ সালে ‘দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস’ চালুর পর সে বছর ছেলেদের বর্ষসেরা হন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পরের বছরও পর্তুগিজ তারকাই পুরস্কারটি জেতেন। এরপর ২০১৮ সালে লুকা মদরিচের পর ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ‘বেস্ট’ ট্রফি জেতেন মেসি। গত দুই বছর পুরস্কারটি জিতেছেন বায়ার্ন মিউনিখের পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি।

আরও পড়ুন

এবারের বর্ষসেরা পুরস্কার দেওয়ার শুরুতে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো মঞ্চে উঠে গত বছর মারা যাওয়া ফুটবলারের স্মরণ করেন। ব্রাজিলের প্রয়াত কিংবদন্তি পেলেকে স্মরণ করে ইনফান্তিনো বলেন, ‘পেলেই ফুটবল। পেলে চিরকালীন।’ তিনবার বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তির একটি ভিডিও ফুটেজও দেখানো হয়। পেলেকে স্মরণ করতে মঞ্চে ওঠেন ব্রাজিলের আরেক কিংবদন্তি রোনালদো। দুবার বিশ্বকাপজয়ী রোনালদো পেলেকে পর্তুগিজ ভাষায় স্মরণ করেন। ‘কালোমানিক’কে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিফার একটি বিশেষ সম্মাননা ট্রফিও তুলে দেওয়া হয় পেলের স্ত্রীর হাতে।

পেলেকে স্মরণ করতে মঞ্চে উঠেছিলেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি রোনালদো। পাশে ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো
ছবি: রয়টার্স

পেলেকে স্মরণ শেষে ফিফার বর্ষসেরা নারী গোলকিপারের পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে ‘বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস’ শুরু হয়। এবার পুরস্কারটি জিতেছেন গত বছর ইংল্যান্ডের হয়ে ইউরোজয়ী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোলকিপার মেরি আর্পস। আইভরি কোস্টের সাবেক স্ট্রাইকার দিদিয়ের দ্রগবা ও কানাডা নারী দলের সাবেক গোলকিপার স্টেফানি ল্যাব্বে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন।

সবাই জানতে চায় আমার আদর্শ কারা? মা-বাবাকে দৈনিক ৮-৯ ঘণ্টা কাজ করতে দেখেছি। তারাই আমার আদর্শ।’
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, আর্জেন্টিনার গোলকিপার
আরও পড়ুন

এরপর দেওয়া হয় ফিফা বর্ষসেরা পুরুষ গোলকিপারের পুরস্কার। ব্রাজিলের সাবেক গোলকিপার হুলিও সিজার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করতে মঞ্চে ওঠেন। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ‘গোল্ডেন গ্লাভস’জয়ী (সেরা গোলকিপার) এমিলিয়ানো মার্তিনেজ এখানেও বিজয়ী! ফিফার গত বছরের বর্ষসেরা গোলকিপারের ট্রফি তাঁর হাতেই উঠেছে। মরক্কোর ইয়াসিন বুনু ও বেলজিয়ামের থিবো কোর্তোয়াকে পেছনে ফেলে ‘বেস্ট গোলকিপার’ ট্রফি জিতলেন মার্তিনেজ। অশ্রুসজল মার্তিনেজ ট্রফিটি হাতে নিয়ে বলেছেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের জন্য দারুণ মুহূর্ত। দেশের জন্য গর্বের। সবাই জানতে চায় আমার আদর্শ কারা? মা-বাবাকে দৈনিক ৮-৯ ঘণ্টা কাজ করতে দেখেছি। তারাই আমার আদর্শ।’

বর্ষসেরা গোলকিপারের ট্রফি হাতে আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ
ছবি: রয়টার্স

ফিফার বর্ষসেরা গোলের ‘পুসকাস অ্যা্ওয়ার্ড’ দেওয়া হয় এরপরই। যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবলের কিংবদন্তি কার্লি লয়েড বিজয়ী হিসেবে পোল্যান্ডের মারচিন ওলেকসির নাম ঘোষণা করেন। পোল্যান্ডের অ্যাম্পিউটি ফুটবলে বাইসাইকেল কিকে চোখ ধাঁধানো গোল করেছিলেন ওলেকসি। অ্যাম্পিউটি ফুটবল হচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের খেলা, যাঁদের একটি পা নেই (গোলরক্ষকের ক্ষেত্রে একটি হাত নেই)। ক্রাচে ভর করে ছোটা যায়, কিন্তু বল খেলতে হয় এক পা দিয়ে।

আরও পড়ুন
এএফএ সভাপতিকে ধন্যবাদ, ২৬ খেলোয়াড়, আইমার, আয়ালা ও আমার পুরো কোচিং স্টাফদের ধন্যবাদ। দেশের হয়ে কিছু জেতার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। এই জয়টা আমার স্ত্রী-সন্তান, আমার শহর ও দেশের মানুষের জন্য। তাদের জন্যই আজ আমি এখানে।
লিওনেল স্কালোনি, আর্জেন্টিনার কোচ

ফিফার বর্ষসেরা নারী কোচের পুরস্কার জিতেছেন ইংল্যান্ড নারী দলকে ইউরো জেতানো সারিনা ভিগমান। বুলগেরিয়ান কিংবদন্তি রিস্টো স্টয়চকভ তাঁর হাতে ট্রফি তুলে দেন। পুরুষদের বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার দেওয়া হয় এরপর। সংক্ষিপ্ত তালিকায় মনোনীত হয়েছিলেন তিনজন, রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলত্তি, আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি ও ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা। পুরস্কারটি দিতে মঞ্চে ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসের সাবেক কোচ ফাবিও কাপেলো।

আরও পড়ুন

বিশ্বকাপজয়ী স্কালোনির হাতেই বর্ষসেরা কোচের ট্রফি উঠেছে। জয়ের পর স্কালোনি বলেছেন, ‘এএফএ সভাপতিকে ধন্যবাদ, ২৬ খেলোয়াড়, আইমার, আয়ালা ও আমার পুরো কোচিং স্টাফদের ধন্যবাদ। দেশের হয়ে কিছু জেতার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। এই জয়টা আমার স্ত্রী-সন্তান, আমার শহর ও দেশের মানুষের জন্য। তাদের জন্যই আজ আমি এখানে।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

স্কালোনি পুরস্কার জেতার পর বল নিয়ে নাচের মাধ্যমে কাতার বিশ্বকাপকে স্মরণ করা হয়। এরপর ‘ফিফা ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড’-এ বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। জর্জিয়ান রাইটব্যাক লুকা লোশোভিলি জিতেছেন ফেয়ার প্লে ট্রফি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রিয়ার ঘরোয়া ফুটবলে ম্যাচের মধ্যে চেতনা হারানো এক ফুটবলারের জীবন বাঁচান লোশোভিলি। ম্যাচ থাকায় পুরস্কারটি তিনি নিতে আসতে পারেননি। ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন, ‘পুরস্কারটি পেয়ে আমি আনন্দিত। তবে ফুটবলের চেয়ে জীবন বাঁচানোটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

ফাবিও কাপেলোর কাছ থেকে ফিফা বর্ষসেরা কোচের ট্রফি বুঝে নিচ্ছেন স্কালোনি
ছবি: রয়টার্স

ফিফা ফ্যান অ্যাওয়ার্ডও উঠেছে আর্জেন্টিনার ঘরে। আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা পেয়েছেন সেরা সমর্থকের পুরস্কার। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের প্রতিনিধি হিসেবে ট্রফি নেন কার্লোস পাসকুয়াল। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জার্সি ও ড্রামস নিয়ে মঞ্চে উঠেছিলেন ‘এল তুলা’ নামে খ্যাতি পাওয়া ৮২ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন।

আরও পড়ুন

পুরুষ বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার নেওয়ার আগেই একবার মঞ্চে উঠতে হয়েছে মেসিকে। সেরা পুরুষ দলে তাঁর জায়গাটাও ছিল। সেরা নারী ও পুরুষ দল ঘোষণার পর দুই সঞ্চালক ফিরে যান ব্যক্তিগত পুরস্কারে। বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড়ের ‘বেস্ট’ ট্রফি জিতেছেন বার্সেলোনা ও স্পেনের তারকা অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াস। টানা দ্বিতীয়বার পুরস্কারটি জিতলেন। তাঁর হাতে ট্রফি তুলে দেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।

অনুষ্ঠানের শেষ আকর্ষণ হিসেবে ঘোষণা করা হয় পুরুষদের বর্ষসেরা ফুটবলারের নাম। অন্যান্য ইভেন্টের মতোই বিজয়ীর নাম ঘোষণার আগে সংক্ষিপ্ত তালিকায় মনোনীত মেসি, এমবাপ্পে ও বেনজেমার ফুটেজ দেখানো হয়। ইনফান্তিনো এ নিয়ে কথা বলার আগে ক্যামেরায় একবার মেসিকে দেখানো হয়। স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর পাশে বসে মুচকি হাসছিলেন পিএসজি তারকা।

ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো মেসির নাম ঘোষণা করতেই তাঁকে অভিনন্দন জানান ডান পাশে বসা এমবাপ্পে। মেসির বাঁয়ে রোকুজ্জোর পাশে বসা ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদোও করতালি দেন। মঞ্চে উঠে মেসি বলেছেন, ‘আবারও এখানে আসতে পেরে ভালো লাগছে। বেনজেমা আসেনি, এমবাপ্পে আছে, দুজনেরই দারুণ বছর কেটেছে।সতীর্থদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। স্কালোনি ও দিবু (মার্তিনেজ) আছে, আমরা তাদেরই (সতীর্থ) প্রতিনিধিত্ব করছি। দল যা করছে এসব সাফল্য তারই স্বীকৃতি।’

পরিবার ও আর্জেন্টিনার মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের কথা শেষ করেছেন মেসি, ‘এই বছরটা আমার জন্য দারুণ ছিল। অনেক ত্যাগের পর স্বপ্নপূরণ হয়েছে। খুব কম খেলোয়াড়ই এই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে এবং আমি তা পেরেছি। নিজের পরিবার ও আর্জেন্টিনার মানুষদের ধন্যবাদ জানাই।’

‘দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস’ বিজয়ীরা:

বেস্ট ফিফা ওমেনস প্লেয়ার: অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াস

বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার: লিওনেল মেসি

বেস্ট ফিফা ওমেনস কোচ: সারিনা ভিগমান

বেস্ট ফিফা মেনস কোচ: লিওনেল স্কালোনি

বেস্ট ফিফা ওমেনস গোলকিপার: মেরি আর্পস

বেস্ট ফিফা মেনস গোলকিপার: এমিলিয়ানো মার্তিনেজ

ফিফা পুসকাস অ্যাওয়ার্ডস: মারচিন ওলেকসি

বেস্ট ফিফা ফ্যান অ্যাওয়ার্ড: আর্জেন্টিনার সমর্থক