মিসরের শার্ম আল-শেখে চলমান কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিনে আজ শুক্রবার বড় অগ্রগতি হয়েছে। এদিন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতির শিকার দরিদ্র দেশগুলোর সহায়তায় তহবিল গঠনে রাজি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। জলবায়ু বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে এই ক্ষতিপূরণ তহবিল চাওয়া হলেও ধনী দেশগুলো এর বিরোধিতা করে আসছিল। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

সম্মেলনে আজ ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রান্স তিমারম্যানস জানান, জলবায়ু বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ নামে একটি তহবিল গঠনে রাজি ইইউ। দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোর জোট জি–৭৭–এ তহবিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। এবারের কপ–২৭ সম্মেলনেও প্রধান দাবিগুলোর একটি এটি।

এই তহবিলের অর্থ দরিদ্র দেশগুলোর ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামোর ওপর চরম জলবায়ুর ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলা এবং উদ্ধারকাজ পরিচালনা ও পুনর্গঠনে ব্যয় করা হবে। এ বিষয়ে ফ্রান্স তিমারম্যানস বলেন, ‘আমার মতে, এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা তহবিল গঠনের আগে সময় নিয়ে, ভেবেচিন্তে অগ্রসর হওয়া উচিত। তবে আমরা (ইইউ) চেয়েছি, দ্রুত জি–৭৭–এর দাবি মেনে নিতে। তাই আমরা তহবিল গঠনে রাজি হয়েছি।’ দাতাদের অর্থে পরিচালিত এই তহবিল ‘শর্তমুক্ত’ হবে না ও বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে এ তহবিলের অর্থছাড় করা হবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন

জলবায়ু সম্মেলনে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য সহায়তা তহবিল গঠনের দাবি

ইইউর পক্ষ থেকে তহবিল গঠনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্যারিবীয় দেশগুলোর জোটের মহাসচিব কারলা বারনেট। তিনি বলেন, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য অর্থসহায়তার বিকল্প নেই। এই তহবিল এসব দেশের ভবিষ্যতের জন্য জরুরি। ইইউর এই উদ্যোগের প্রশংসা করে অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস বোয়েন বলেন, তাঁর দেশ এই তহবিলে যুক্ত থাকবে।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ইইউর এই উদ্যোগ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করছেন অনেকেই। কপ–২৭ সম্মেলনে জি–৭৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর একজন আলোচক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইইউর তহবিল গঠনের ঘোষণা অপ্রত্যাশিত ছিল না। এর মধ্য দিয়ে তারা দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আলোচনার টেবিলে রেখেছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

আরও পড়ুন

জলবায়ু সম্মেলনে অগ্রগতি সামান্য, একমত হতে পারেননি নেতারা

এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু তহবিল গঠনে আপত্তি জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইইউর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়ার পর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি ওয়াশিংটন। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের জলবায়ু উপদেষ্টা ও ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রগ্রেসিভ পলিসি ইনস্টিটিউটের জলবায়ু পরামর্শক পল ব্লেডসোয়ে বলেন, দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন প্রক্রিয়ায় খাপ খাওয়াতে এ তহবিল সহায়তা করবে। সর্বোপরি এটা বিশ্বজুড়ে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে ভূমিকা রাখবে, যা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অন্যতম শর্ত।

আরও পড়ুন

জলবায়ু নিয়ে জন কেরির নতুন পরিকল্পনা আসছে এপ্রিলে

এর আগে কপ–২৭ সম্মেলনে চীনের জলবায়ুবিষয়ক প্রতিনিধি ও কূটনীতিক শি জেনহুয়া জানান, জলবায়ুসংকটের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির তহবিলে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য অর্থ দিতে রাজি তাঁর দেশ। তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর দেশের বাধ্যবাধকতা না থাকায় ধনী দেশগুলোর প্রতি যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানে সংহতি জানাচ্ছে চীন।

আরও পড়ুন

সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের তাগিদ

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে গত বছরের কপ-২৬ সম্মেলনের বিষয়গুলোই এবারের সম্মেলনেও গুরুত্ব পেয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার যে লক্ষ্য, তার ওপরই জোর দেওয়া হয়েছে এবারেও। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ-২১ নামের একটি সম্মেলনে জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ২০০টি দেশ এতে স্বাক্ষর করে।

আরও পড়ুন

জলবায়ু সম্মেলনে ভূরাজনীতির ছায়া