খতিয়ে দেখছে অ্যামনেস্টি

অধিকারের তালিকা পেয়েছে তিনটি সংস্থা

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র অধিকারের পাঠানো তালিকা পেয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তালিকাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছে।

গত ৫ মে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে ‘৬১ জন নিহত হয়েছে’ বলে দাবি করেছিল ঢাকার মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। সংগঠনটি গত শুক্রবার রাতে ই-মেইলে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, তারা দেশি-বিদেশি পাঁচটি সংগঠনকে নিহত ব্যক্তিদের তালিকা দিয়েছে। প্রথম আলো গতকাল শনিবার তিনটি সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছে। জাতিসংঘের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের বিশেষ রেপোর্টিয়ার ও এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

 গত ১০ জুন ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সমাবেশ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে অধিকার। তাতে ৬১ জন নিহত হওয়ার দাবি করা হলেও তাদের নাম-ঠিকানা বা বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। এর এক মাস পর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ৬১ জনের নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত জানতে চেয়ে অধিকারকে চিঠি দেয়। কিন্তু অধিকার সরকারকে কোনো তথ্য না দিয়ে জানায়, একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হলে ওই কমিশনের কাছেই কেবল এ তথ্য দেওয়া হবে।

তবে শুক্রবার রাতে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অধিকার বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থে তারা এ তালিকা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকার তদন্ত কমিশন না করে ১০ আগস্ট অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে গ্রেপ্তার করেছে। ১১ আগস্ট ডিবি পুলিশ অধিকারের দুটি ল্যাপটপ ও তিনটি সিপিইউ জব্দ করে। এর মধ্যে ওই ঘটনার বেশ কিছু মানুষের তথ্য ছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অধিকার মনে করে, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে তালিকা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। কারণ, ইতিমধ্যে ডিবি পুলিশ পরিবারগুলোর ওপর নজরদারি করতে শুরু করেছে বলে দাবি করে অধিকার।

গতকাল যোগাযোগ করা হলে অধিকারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দেশি-বিদেশি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানকে ওই তালিকা ধরে অনুসন্ধান করার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে এ তালিকা গণমাধ্যম বা অন্য কারও হাতে দেবেন না তাঁরা।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া অঞ্চলের গবেষক আব্বাস ফয়েজ গতকাল তালিকা পাওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোর কাছে নিশ্চিত করেছেন। তালিকাটি তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে অধিকার যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, সে ব্যাপারটি অ্যামনেস্টিও অনুসন্ধান করছে।

যোগাযোগ করা হলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই অধিকার তালিকাটি পাঠিয়েছে। এখন সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করব, এই তালিকা নিয়ে আমরা কী করব।’

যোগাযোগ করা হলে দিল্লি থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি জানান, তাঁরা তালিকা পেয়েছেন। তিনি এর বেশি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মতিঝিলের শাপলা চত্বরে চালানো ওই অভিযানে ঠিক কত লোক মারা গেছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। সরকার দাবি করেছে, ওই ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়েছে। ৪ জুন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছিলেন, তাঁরা ৭৩ জন নিহত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। এর আগে ৭ মে এক বিবৃতিতে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী দাবি করেছিলেন, অভিযানে আড়াই থেকে তিন হাজার লোক মারা গেছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীও এ ঘটনায় কয়েক হাজার লোক নিহত হওয়ার দাবি করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজত ইসলাম দাবি করছে, ওই অভিযানে ‘অসংখ্য লোক নিহত’ হয়েছে। কিন্তু গত সাড়ে তিন মাসে হেফাজতে ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে নিহত কোনো ব্যক্তির নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি।

তবে শুক্রবার হেফাজতে ইসলামের অন্তত দুজন নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা নিহত ব্যক্তিদের একটি খসড়া তালিকা শুধু অধিকারকে দিয়েছেন। তবে ওই খসড়া তালিকায় নিহতের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা কত বলা হয়েছে, তা জানাতে রাজি হননি এই নেতারা।