জিপিএ-৫ উৎসবে এসে সেলফি তুলছে কৃতী শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সাভারের আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমে
জিপিএ-৫ উৎসবে এসে সেলফি তুলছে কৃতী শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সাভারের আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমে

ফ্যান্টাসি কিংডমে আনন্দের ফোয়ারা, জিপিএ-৫ সংবর্ধনায় মেতেছে কৃতী শিক্ষার্থীরা

‘রাস্তাটা ছিল ভয়ংকর। একটু পরপর গর্ত। তার মধ্যে কাদাপানি। অনেক সময় লেগেছে আসতে। আর হয়েছে দুর্ভোগ। তবে ফ্যান্টাসি কিংডমের ভেতর ঢোকার পর এখন অনেক আনন্দ, অনেক।’

ঝলমলে রোদের সকালে রোলারকোস্টারের সামনের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিল মাবিয়া তাবাসসুম। তার পেছনে কামরুন নাহার হৃদি ও চন্দ্রিকা রহমান। তারা তিন বন্ধু। অপেক্ষা করছিল সাভারের আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমের রোলারকোস্টারে ওঠার জন্য।

টঙ্গি মোড় থেকে আশুলিয়া হয়ে বাইপাইল পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। সে কারণে নিচের সড়কের অবস্থা হাল দেওয়া ‘ধানখেতের’ মতো। তার ওপর বৃষ্টির পানি জমে আছে মাঝেমধ্যে। সেই পথ পেরিয়ে দিয়ে হাজারো কৃতী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভবকেরা আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে আসতে শুরু করেন ফ্যান্টাসি কিংডমে। আজ এখানে শুরু হয়েছে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের দুই দিনের সংবর্ধনার উৎসব।

রাইডে উঠে আনন্দে মেতেছে শিক্ষার্থীরা

‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগান নিয়ে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে চলছে ‘জিপিএ-৫ উৎসব’।

ঢাকা অঞ্চলের উৎসব হচ্ছে ফ্যান্টাসি কিংডমে। সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত উৎসব চলবে। আজ প্রথম দিন ঢাকা জেলার প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছে। আগামীকাল বুধবার দ্বিতীয় দিন ঢাকা, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার ৯ হাজারের বেশি কৃতী শিক্ষার্থী এই উৎসবে অংশ নেবে।

এ উৎসবেই ঢাকার বনশ্রী ও জিগাতলা থেকে নিজেদের গাড়িতে এসেছে মাবিয়া ও তার বন্ধুরা। তারা তিনজনই বেইলি রোডের ভিকারুননিস নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজ ভার্সন থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তারা জানাল, ভিকারুননিসা কলেজেই ভর্তি হবে। অনলাইনে নিবন্ধন করেছে, তবে ভর্তি এখনো শুরু হয়নি। ফ্যান্টাসি কিংডমে ঘোরাফেরা, রাইডে চড়ার আনন্দ তো আছেই, তার ওপর কালেজে ভর্তির আগে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় আনন্দ আরও বেড়ে গেছে। তাই পথের কষ্ট আর কষ্ট বলে মনে হচ্ছে না তাদের।

আজ সকাল থেকেই কড়া রোদ। তবু সকাল থেকেই ফ্যান্টাসি কিংডমে যেন আনন্দের ফোয়ারা ছুটছিল। এমন খুশির দিনে রোদ-বৃষ্টির তোয়াক্কা করতে যাবে কে!

মিরপুর ইসিবি থেকে ইশিকা বিনতে তৌহিদ এসেছে বাবা তৌহিদ মোজাম্মেল হোসেন, মা তানজিলা সুলতানা আর ছোট ভাই ইরাদ বিন তৌহিদকে নিয়ে। বাসে করে এসেছে পুরো পরিবার।

নানা আয়োজনে অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা

ইশিকা বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভর্তি হবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজে। তার পাঠ্যবইয়ের বাইরের বই পড়ার একটু আগ্রহ আছে। প্রথমার স্টলে এসেছিল বই কিনতে। উৎসব উপলক্ষে এখানে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি হচ্ছে। এখানে কথা হলো তার সঙ্গে। উৎসবে এসে সবাই খুব খুশি বলে জানাল সে।

মেয়ে জিনিয়া ইসলামকে নিয়ে মিরপুর কাজীপাড়া থেকে এসেছে নজরুল ইসলাম। কাজীপাড়ায় জিনিয়াস কেজি স্কুল নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে তাঁর। তিনি অধ্যক্ষ। নজরুল ইসলাম বললেন, আয়োজনটি খুব ভালো। অনেক ছেলেমেয়ে এসেছে। তারা সবাই সমবয়সী, সমমনা। কলেজ যাওয়ার আগে ওরা এখানে একটা বড় পরিসরে মেলামেশার সুযোগ পাচ্ছে। এটা ওদের মনে একটা ভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলবে। এ ধরনের উৎসব তাদের ভবিষ্যতে এমন ভালো ফল করতে অনুপ্রেরণা দেবে। সব মিলিয়ে আয়োজনটি অনেক সুন্দর মনে হয়েছে তাঁর।

শিক্ষার্থীরা মেতে আছে এখন রাইডে চড়া, সহপাঠীদের সঙ্গে ঘোরঘুরি আর সেলফি তোলার আনন্দে। সকালে এসে তারা নিবন্ধন নম্বর দেখিয়ে ক্রেস্ট, সকালের নাশতা, দুপুরের খাবারের কুপন আর ভেতরে প্রবেশ ও রাইডের কুপন সংগ্রহ করেছে। তারা এখন আনন্দ-উৎসব করছে। এরপর দুপুর থেকে মঞ্চে শুরু হবে আলাচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

রাইডে চড়ছে শিক্ষার্থীরা

আজ শিক্ষার্থীদের ভালো ফলের আনন্দ একসঙ্গে উদ্‌যাপন করতে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্টজন ও তারকা শিল্পীরা।

আজকের উৎসবে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য শামস্ রহমান, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাকির হোসাইন, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাসের প্রভোস্ট চ্যান জো জিম, এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল, শিখোর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহীর চৌধুরী, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের গান আর আড্ডায় মাতিয়ে রাখতে থাকবেন অভিনয়শিল্পী সাবিলা নূর, তৌসিফ মাহবুব, তাসনিয়া ফারিণ, সংগীতশিল্পী ইমরান মাহমুদুল ও জেফার রহমান এবং জলের গান।

শিক্ষার্থীরা আনন্দ করছে

আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম, আম্বার আইটি, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।