হাইকোর্ট ভবন
হাইকোর্ট ভবন

নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনায় দায়িত্ব হস্তান্তর নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার ক্ষেত্রে হস্তান্তর বিষয়ে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানাতে বলে আগামী মঙ্গলবার শুনানির পরবর্তী দিন রেখেছেন আদালত।

এক রিটের শুনানিতে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ তথ্য জানাতে বলেন।

নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন রিটটি করেন। ‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন রিটে যুক্ত করা হয়। রিটটি শুনানির জন্য গত ২৫ মে আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ‘অবকাশের পর’ শুনানির জন্য রাখেন। ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়া আহ্বান করার নির্দেশনা চেয়ে করা এই রিটের বিষয়টি ২৩ জুন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সেদিন আদালত শুনানির জন্য ২৯ জুন বেলা দুইটায় সময় নির্ধারণ করেন। সে অনুসারে আজ শুনানি হয়।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও আইনজীবী আনোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম, মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মো. আসাদ উদ্দিন।

শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, টার্মিনাল অপারেটর সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড একাধিকবার টার্মিনাল পরিদর্শনে গেছে এবং সব ধরনের তথ্য অফিশিয়ালি সংগ্রহ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) নির্দেশনা অনুসারে চলতি বছরের নভেম্বরে অধিগ্রহণের সব কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা।

নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন প্রতিবেদন তুলে ধরেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী আহসানুল করিম। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকার অনঢ়। বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

একপর্যায়ে আদালত বলেন, এখন বিভিন্ন কর্নার থেকে সরকারকে রিপ্রেজেন্টেশন দেওয়া হচ্ছে। নিশ্চয়ই সরকার সবাইকে নিয়ে একটি কনসেনসাস করবে। সরকারকে একটু সময় দেওয়া দরকার। সরকার এককভাবে এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে? বিদেশি লোকও আসবে না।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, চলতি মাসের ১৯ তারিখে এক চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সভা আহ্বান করা হয়। ২৩ জুন সভাও হয়। বিষয়টি চূড়ান্ত হলে তখন কী হবে?

শুনানিতে অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যে চিঠির কথা বলা হচ্ছে তা সরকারের পিরিয়ডিক ওয়ার্ক। নিয়মিতভাবে বিষয়গুলো দেখা হয়ে থাকে। রিটটি সরকারের পলিসির ওপরে একটা আঘাত করার জন্য করা হয়েছে। সরকারের এই পলিসি ২০১৭ সালে নেওয়া। রিটে প্রসেস অব অ্যাওয়ার্ড ইন কন্ট্রাক্ট (টার্মিনাল হস্তান্তর বিষয়ে) বলা হয়েছে। অ্যাওয়ার্ড তো অনেক পরের ব্যাপার। যে কারণে রিটটি প্রিম্যাচিউর। রিটে ডিজঅ্যালাউয়ের (স্থানীয়দের টার্মিনাল পরিচালনা করতে না দেওয়া) কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয়দের কোথায় ডিজঅ্যালাউ করছে? স্থানীয় কেউ কি এসে বলেছে যে তাদের ডিজঅ্যালাউ করা হয়েছে?’

আদালত বলেন, বর্তমানে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল কে পরিচালনা করছে? তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করছে। আদালত বলেন, এর আগে কোনো বেসরকারি কর্তৃপক্ষকে কি দেওয়া হয়েছিল?

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই মুহূর্তে জানা নেই। রিট আবেদনকারী পক্ষ বলছে সরকার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। তার কাছে নির্দেশনা হলো, যা অবকাশের আগে তিনি ক্রসচেক করেছেন। তাঁরা বলেছেন আপাতত এটা নিয়ে চিন্তা করছেন না। ফ্যাক্ট হচ্ছে, সরকার এখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এখানে কোনো অ্যাকশন ও ইন–অ্যাকশন কোনোটাই হয়নি। যদি না হয়ে থাকে তাহলে রিট করার কোনো কার্যকরণ নেই।’

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘দেয়ার ইজ নো রেজল্যুশন (এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেই), আমি অথরিটি নিয়ে বলছি। বর্তমান সরকার এটা নিয়ে আলোচনায় আছে। এই আলোচনা পাবলিক স্ক্রুটিনি (যাচাই) সাপেক্ষে, পাবলিক এটা নিয়ে কথা বলছে। স্থানীয় কাউকে ডিজঅ্যালাউ করলে তাদের আইনে প্রতিকারের সুযোগ আছে। সরকার এখনো কোনো মতামত ও সিদ্ধান্ত নেয়নি। নির্দেশনা হলো, এখন পর্যন্ত সরকার এটা (নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল) প্রসিড করছে না।’

আদালত বলেন, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ক্ষেত্রে দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়ে বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি? নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নট অ্যাট অল। তবু আদালত বললে কথা বলে জানানো যাবে। ২০১৭ সালের সরকার একটি সমঝোতা স্মারক করে গেছে। সমঝোতা স্মারক চুক্তি নয়। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেই। শুধু আশঙ্কার ভিত্তিতে রিট চলে না।

একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আবারও বললে জেনে নিয়ে আসি, আগামী সপ্তাহে রাখেন। সরকারের সর্বশেষ পলিসি কী, তা জানিয়ে দেব।’ পরে আদালত ৮ জুলাই পরবর্তী দিন রাখেন।

রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, দেশীয় অপারেটরদের অনুমতি না দিয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না—এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার জন্য দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে। রিটে নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে।

রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর ভাষ্য, ২০১৯ সালে সমঝোতা স্মারকের মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়। টার্মিনাল অপারেটর সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। জিটুজির ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ পেতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে হয়। অথচ পিপিপি কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রজেক্ট প্রোফাইলে অনুমিত বিনিয়োগ হিসেবে ২০০ কোটি টাকা দেখা যায়, যা জিটুজি গাইডলাইন-২০১৭ সংশ্লিষ্ট বিধির পরিপন্থী।