Thank you for trying Sticky AMP!!

বিশ্বমঞ্চের শীর্ষ তিনে নড়াইলের সাদাত

সাদাত রহমান

৪২টি দেশের ১৪২ জন শিশুর মনোনয়নের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল বিশ্বমঞ্চে উঠে আসার দৌড়। ‘শিশুদের নোবেল’খ্যাত আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের সেই দৌড়ে এখন টিকে আছে তিনজন। যাদের একজন নড়াইলের কিশোর সাদাত রহমান। সাইবার অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে সে উঠে এসেছে বিশ্বমঞ্চের শীর্ষ তিনে।

১৩ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসে ওই পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত এক বা একাধিক শিশুর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। এরপর নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। সাদাতের সঙ্গে চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়া অন্য দুজন হলো মেক্সিকোর ইভান্না ওরতেজা সেরেট ও আয়ারল্যান্ডের সিয়েনা ক্যাস্টেলন। ওই পুরস্কারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু গত ২৯ অক্টোবর ওই তিন প্রতিযোগীর নাম ঘোষণা করেন।

২০০৫ সালে রোমে অনুষ্ঠিত নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের এক শীর্ষ সম্মেলন থেকে এই পুরস্কার চালু করে ‘কিডস-রাইটস’ নামের একটি সংগঠন। শিশুদের অধিকার উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় অসাধারণ অবদানের জন্য প্রতিবছর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা ওই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। গত বছর সুইডেনের শিশু পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ও ক্যামেরুনের ডিভিনা মালম যৌথভাবে মর্যাদাপূর্ণ ওই পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে এই পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই পরের বছর জয় করেছিলেন নোবেল।

১৭ বছর বয়সী সাদাত নড়াইল আবদুল হাই সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। সাদাত রহমান ও তার দল সাইবার বুলিং ও সাইবার ক্রাইম থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষায় নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সাদাত সম্পর্কে কিডস রাইটসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সাদাত একজন ‘তরুণ চেঞ্জমেকার’ ও সমাজসংস্কারক। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে এক কিশোরীর (১৫) আত্মহত্যার পর কাজে নামে সাদাত। সে তার বন্ধুদের সহায়তায় ‘নড়াইল ভলেন্টিয়ারস’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন শুরু করে। এই সংগঠন বেসরকারি সংস্থা একশনএইডের ‘ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ–২০১৯’–এ বিজয়ী হয়ে তহবিল পায়।

এই তহবিলের মাধ্যমে তারা ‘সাইবার টিনস’ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে। এই অ্যাপের মাধ্যমে কিশোর–কিশোরীরা জানতে পারে কীভাবে ইন্টারনেট দুনিয়ায় সুরক্ষিত থাকতে পারে। প্রায় ১ হাজার ৮০০ কিশোর–কিশোরী এই অ্যাপ ব্যবহার করছে। এই অ্যাপের মাধ্যেম ৬০টির বেশি অভিযোগের মীমাংসা হয়েছে এবং ৮ জন সাইবার অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে। বর্তমানে সাদাত ‘সেফ ইন্টারনেট, সেফ টিনএজার’ নামের একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সে এবং তার বন্ধুরা ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্কুলে স্কুলে সেমিনার–কর্মশালা করছে। তারা প্রতিটি স্কুলে ‘ডিজিটাল স্বাক্ষরতা ক্লাব’ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।

সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা দেশে প্রায়ই ঘটে। সাদাতের অ্যাপটির ধারণা বিশ্বব্যাপী সাইবার বুলিং কমিয়ে আনায় সাফল্য আসতে পারে।
মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন, পুলিশ সুপার. নড়াইল

সাদাত রহমান জানায়, সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে পিরোজপুরের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা তাকে নাড়া দেয়। দেশে এ ধরনের আরও ঘটনা ঘটছে। এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ৪৯ শতাংশ কিশোর-কিশোরী এ রকম সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়। কিন্তু নিজেদের সমস্যা কাউকে বলতে পারে না তারা। পুলিশ তো দূরের কথা, অনেকেই নিজের মা-বাবাকেও এ ব্যাপারে কিছু জানায় না। শেষ পর্যন্ত অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

সাদাত বলছে, এ ধরনের উপলব্ধি থেকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া শিশু-কিশোরদের সাহায্য করতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সাইবার টিনসের যাত্রা শুরু গত বছর অক্টোবর মাসে। এই অ্যাপের মাধ্যমে ভুক্তভোগী কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যোগাযোগ সৃষ্টি করা হয়। প্রথমত, ভুক্তভোগীকে মানসিক সাপোর্ট দেওয়া হয়। অভিযুক্তকেও নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়। তবে বিষয়টি অপরাধ পর্যায়ে পৌঁছালে পুলিশ বিভাগকে জানানো হয়। নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিমউদ্দিনের সহযোগিতায় এই কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়েছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন বলেন, ‘সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা দেশে প্রায়ই ঘটে। নড়াইল জেলা পুলিশের সাইবার টিম ও সাদাত রহমানের সাইবার টিনস এটি প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করছে। সাদাতের অ্যাপটির ধারণা বিশ্বব্যাপী সাইবার বুলিং কমিয়ে আনায় সাফল্য আসতে পারে।

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের শীর্ষ তিনে উঠে আসার বিষয়ে সাদাত বলছিল, ‘আন্তর্জাতিক ওই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পাওয়ার তালিকার শীর্ষে পৌঁছাব তা চিন্তাও করতে পারিনি। ওই পুরস্কার প্রদান কর্তৃপক্ষ কাজের ধরনটির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। কারণ সাইবার বুলিং সমস্যাটি বিশ্বব্যাপী। তাই আমার চিন্তাটি বিশ্বসভায় স্থান করে নিতে পেরেছে।’ সাদাত দোয়া চেয়েছে সবার কাছে।