বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের নেতারা। গতকাল শনিবার রাতে
বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের নেতারা। গতকাল শনিবার রাতে

জাকসুর ভিপি প্রার্থী অমর্ত্যর প্রার্থিতা বাতিল অবৈধ : সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূত দাবি করেছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্যানেল ‘সম্প্রীতির ঐক্য’।

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন প্যানেলটির সদস্যরা।

নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় জাকসুর গঠনতন্ত্রের ৪ দশমিক ৩৮ ধারায় ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় তাঁর নাম প্রার্থী ও ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) শরণ এহসান। তিনি বলেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আট দিন পর প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ। এটি জাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। গত ১৭ আগস্ট প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকা ও ২৯ আগস্ট প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় অমর্ত্য রায়ের নাম ছিল। কিন্তু গতকাল হঠাৎ ওয়েবসাইটে পরিবর্তন করে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জালিয়াতি ও ইচ্ছাকৃত প্রতারণা।

আওয়ামী আমলে ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মোছার দায়ে অমর্ত্য রায়কে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ২১ মার্চ কেবল ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেন। কিন্তু ক্লাস ও ল্যাব পরীক্ষা এবং হলে অবস্থান করার অনুমতি দেননি। বহিষ্কারাদেশ বহাল থাকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এই ১০ মাস তাঁর যেসব ক্লাস, বিশেষত ল্যাব ক্লাসে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়েছে, তাঁর ক্ষতিপূরণের জন্য পুনরায় ক্লাসে নিয়মিত অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়ার কথা।

শরণ এহসান বলেন, শেখ মুজিবের গ্রাফিতি মোছায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী এনামের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রশাসন অমর্ত্য রায়কে বহিষ্কার করে। ওই আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সোহেল আহমেদ, লুৎফুল এলাহী, মোতাহার হোসেন এবং শিক্ষার্থী আবদুর রশিদ সংহতি জ্ঞাপন করেন। প্রসঙ্গত এবং জরুরি বিষয় যে ওই শিক্ষকদের মধ্যে একজন বর্তমান সহ-উপাচার্য, একজন নির্বাচন কমিশনের সদস্য এবং আবদুর রশিদ ভিপি পদে অমর্ত্য রায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী। এখানে স্পষ্ট, অমর্ত্যর প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত পক্ষপাতদুষ্ট, ষড়যন্ত্রমূলক এবং কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের ব্যত্যয়।

নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা না নিলে আইনি লড়াইয়ের হুমকি দিয়ে শরণ এহসান বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনের এই জালিয়াতির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের এরূপ আচরণের দ্রুত প্রতিকার করার জন্য মহামান্য আচার্যের কাছে আবেদন জানাই। জাকসু বানচালের ষড়যন্ত্র আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না, প্রয়োজনে আমরা আইনি লড়াই লড়তে বাধ্য হব।’