
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার দপ্তরে শাড়ি ও চুড়ি দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। গতকাল রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে এ ঘটনাকে নারীদের প্রতি অবমাননাকর আখ্যা দিয়ে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। তাঁরা এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপাচার্যকে আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, গতকাল বিকেলে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ গেটে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পরে তাঁরা শাড়ি ও চুড়ি নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের প্রক্টর অফিস ও ছাত্র পরামর্শ নির্দেশনা দপ্তরে ঢোকেন। সেখানে পরিচালকেরা উপস্থিত না থাকলে তাঁদের চেয়ারে শাড়ি মুড়িয়ে ও টেবিলে চুড়ি রেখে দেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক শামসুর রহমান বলেন, গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে সব ধরনের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তবুও ছাত্রশিবিরের কমিটি প্রকাশ ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সদস্য ফরম বিতরণ করা হয়। এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বারবার দাবি জানিয়ে আসছেন; কিন্তু প্রশাসন থেকে কোনো কার্যকর ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা তাই প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে শাড়ি ও চুড়ি দিয়ে নিন্দা জাানিয়েছেন।
আরেক শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, ‘আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখতে চাই না; কিন্তু ছাত্ররাজনীতি বন্ধে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে।’
এদিকে ওই ঘটনার পর সন্ধ্যার দিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শাখা ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ পরিচয়ে কিছু শিক্ষার্থী প্রতীকী ‘শাড়ি ও চুড়ি’ দিয়ে শুধু নারী সমাজকে হেয় করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন অভিযোগ করেন, গুটিকয়েক শিক্ষার্থী প্রশাসনকে ব্যবহার করে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। মূলত তাঁরা ছাত্রলীগকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে ক্যাম্পাসে।
বিক্ষোভ শেষে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা উপাচাযের কার্যালয়ে যান। এ সময় প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার দপ্তরে ‘শাড়ি ও চুড়ি’ দেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সোমবার দুপুর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
এদিকে উত্তেজনার মধ্যে জরুরি নোটিশ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নোটিশে ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে লেজুড়বৃত্তিক কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম না চালাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শওকাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিকেল পাঁচটার দিকে বসার কথা ছিল; কিন্তু তাঁরা আগেই এটা করেছেন। তাঁর দাবি, যদি কেউ ছাত্ররাজনীতি করেন, সে ক্ষেত্রে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে করা হয়েছে। কমিটি বিষয়গুলো দেখছে। এরপর প্রমাণস্বরূপ তাঁদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।