
ঢাকার সাভারের উলাইলে অবস্থিত প্রাইড গ্রুপের বন্ধ (লে-অফ) ঘোষণা করা দুটি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকেরা। এই দাবিতে আজ সোমবার সকালে তাঁরা কারখানা দুটির সামনে অবস্থান নেন।
পরে মালিক, শ্রমিক এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে সভা করে মার্চ মাসের বেতন, শ্রমিক ছাঁটাইসহ বিভিন্ন বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর শ্রমিকেরা কারখানার সামনে থেকে চলে যান।
সিদ্ধান্তগুলো হলো, মার্চ মাসের বেতন ১৫ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ; এপ্রিলের প্রথম ৬ দিনের বেতন পরিশোধের বিশেষ চেষ্টা; লে-অফের সময়কালে শ্রমিকদের প্রাপ্য সুবিধাসমূহ বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী মে মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ; ছাঁটাই, ইস্তফা ইত্যাদি কার্যক্রম বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী সম্পন্ন এবং এসব ক্ষেত্রে বকেয়া পাওনাদি আইন অনুযায়ী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ; বেতন ও শ্রমিকদের অন্যান্য পাওনাদি বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০২৬ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ।
কারখানার সামনে অবস্থানকারী একাধিক শ্রমিক জানান, ঈদের ছুটি শেষে আজ সকালে প্রাইড গ্রুপের এইচ আর টেক্সটাইল মিলস ও ফ্যাশন নিট গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিকেরা কারখানার সামনে আসেন। কারখানার সামনে তাঁরা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা দুটি বন্ধ ঘোষণা করার নোটিশ দেখতে পান। পরে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে কারখানার সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কারখানার সামনে শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন।
ফ্যাশন নিট কারখানার এক নারী শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে কারখানার সামনে এসে দেখি কারখানা ৩০ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ। আগে কেউ বন্ধ নিয়ে আলোচনা করেনি। বন্ধের সময় আমাদের মূল মজুরি ৫০ শতাংশ দেওয়া হবে। এ টাকায় আমাদের সংসার চলবে কীভাবে। আমরা চাই কারখানা খুলে দেওয়া হোক।’
এইচ আর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের এক পুরুষ শ্রমিক বলেন, ‘ঈদের জন্য ১০ দিনের ছুটি দিয়েছিল। আজকে কাজে জয়েন করার কথা। দুই দিন আগে মেসেজে (মুঠোফোনে খুদে বার্তা) আমাদের জানিয়েছে তারা (কারখানা কর্তৃপক্ষ) লে-অফ ঘোষণা করেছে। কোনো শ্রমিকই এটা মানতে চায় না। সবার একই বক্তব্য, কারখানা খুলে দেওয়া হোক। তা না হলে আমাদের যেসব পাওনা আছে, সব বুঝিয়ে দিয়ে কারখানা বন্ধ করা হোক।’
প্রতিষ্ঠান দুটির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কমপ্লায়েন্স) মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি–সংকট, কিছু আর্থিক জটিলতা এবং কার্যাদেশ–সংকটের কারণে কারখানা দুটির আংশিক লে-অফ ঘোষণার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকেরা কিছু দাবি জানান। পরে মালিক প্রতিনিধি, শ্রমিক প্রতিনিধি, শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে যৌক্তিক কিছু সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বিষটির সমাধান করা হয়।
মনিরুল বলেন, ‘কোভিড এবং পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে কিছু আর্থিক জটিলতা এবং কার্যাদেশ–সংকটে পড়তে হয়েছে। তবে শ্রমিকদের মধ্যে এর প্রভাব আমরা পড়তে দিইনি। ২০২৩ সালের শেষের দিকে ৬ মাস কাজ না থাকা সত্ত্বেও সবার বেতন পরিশোধ করা হয়। গত ঈদের আগে তিন মাস কাজ না থাকলেও প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মীদের সব বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধ করে ঈদের ছুটি ঘোষণা করা হয়।’