রাকসু নির্বাচনের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। আজ রোববার দুপুরে ক্যাম্পাসের সিনেট ভবনে
রাকসু নির্বাচনের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। আজ রোববার দুপুরে ক্যাম্পাসের সিনেট ভবনে

রাকসু নির্বাচনের ফল ১২-১৫ ঘণ্টার মধ্যেই, উপাচার্যের প্রত্যাশা

ভোট গ্রহণ শেষে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার মধ্যেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার প্রত্যাশা করছে কর্তৃপক্ষ। ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে পুরো ভোট গণনাপ্রক্রিয়া উন্মুক্ত ক্যামেরার আওতায় সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব।

আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

উপাচার্য বলেন, ‘শুধু এটা বলতে পারি, ইনশা আল্লাহ, আমাদের এখানে তিন দিন লাগার সুযোগ নেই আরকি। আমরা একটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই। ভোট গণনা নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি উন্মুক্ত ক্যামেরার সামনে হবে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে মানুষ এ গণনা দেখতে পাবে।’

ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না, সে বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের অত্যন্ত দক্ষ একটি কারিগরি দল রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটি না হলে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করতে পারব বলে আশা করছি। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা যন্ত্রের পাশাপাশি একাধিকবার হাতে গুনে ফলাফল মিলিয়ে দেখব।’
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন সালেহ হাসান নকীব। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রয়েছে। এর পুরো কৃতিত্ব আমাদের শিক্ষার্থীদের। ৩৫ বছর পর এ ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।’
নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিজের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে প্রার্থীদের সঙ্গে ছবি তোলা থেকেও বিরত থাকছেন বলে জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে আমার দায়িত্ব একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। তাই প্রার্থীদের থেকে আমি সচেতনভাবেই দূরত্ব বজায় রাখছি।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নির্বাচনের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদাপোশাক ও ইউনিফর্ম মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার পুলিশ সদস্য ক্যাম্পাসে মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও সার্বিক সহযোগিতায় থাকবে।

এদিকে নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত নেতাদের জন্য রাকসু ভবন প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন। তিনি বলেন, রাকসু ভবনে থাকা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয় অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে। নির্বাচনের পরদিন থেকেই যেন নতুন প্রতিনিধিরা তাঁদের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার প্রমুখ।

গান গেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন রাকসুর সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী বি এস এম আনোয়ার আমজাদ। আজ বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর এলাকায়

সকাল থেকেই প্রচারণায় প্রার্থী-সমর্থকেরা
রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের তারিখ ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীরা জোর প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রচারে সহযোগিতা করছেন সমর্থকেরাও। আজ সকাল থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণায় দেখা গেছে তাঁদের। তাঁরা ভোটারদের কাছে গিয়ে কুশল বিনিময় করছেন। ভোট চাওয়ার পাশাপাশি কেউ কেউ শুধু দোয়া চাইছেন।

১৬ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে তিন দফা ভোট পিছিয়ে যায়। ফলে লম্বা সময় ধরে প্রার্থীদের ভোটের মাঠে প্রচারণায় থাকতে হয়েছে। এদিকে সময় ঘনিয়ে আসায় তাঁরা সমর্থকদেরও মাঠে নামিয়েছেন। তাঁরাও প্রার্থীদের হয়ে ভোট চাইছেন।

কেন্দ্রীয় সংসদে (রাকসু) স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রার্থী বি এস এম আনোয়ার আমজাদকে দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে। তিনি কাঁধে দোতরা ঝুলিয়ে গান গেয়ে ভোট চাইছিলেন। তাঁর সঙ্গে থাকা সমর্থকেরা প্রচারপত্র দিচ্ছিলেন। আনোয়ার আমজাদ বলেন, ‘আমি সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে সাংস্কৃতিক পদে নির্বাচন করছি। তাই আমার প্রচারের ধরনটাও সংস্কৃতিচর্চার মতোই। আমি গানে গানে আমার ইশতেহার বলছি।’

রাকসু ফর র‍্যাডিক্যাল চেঞ্জ প্যানেলের জিএস প্রার্থী আফরিন জাহানকে ওই এলাকায় লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেল। তিনি ভোটারদের ব্যালট নম্বর দিয়ে ভোট চাইছিলেন। তিনি বলেন, ‘ভোটের সময় কাছাকাছি। সবার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি।’

সকাল নয়টা থেকেই দেখা গেল ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সমর্থকদের। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছাত্রদল–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের নেতা-কর্মীরাও প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। বাস থেকে শিক্ষার্থীরা নামামাত্রই তাঁরা লিফলেট দিচ্ছিলেন। তাঁদের একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহসভাপতি মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকেন। তাঁরা সকালে বাসে করে ক্যাম্পাসে আসেন। তাঁদের কাছে তাঁরা পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

ছাত্রশিবির–সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদকে দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সামনে। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সঙ্গে নিজের প্যানেলে জন্য ভোট চাইছিলেন। তিনি বলেন, ভোটের সময় খুবই কাছে। যদিও ভোট তিনবার পিছিয়ে গেছে। এতে একটা লম্বা সময় ধরে ভোটারদের কাছে যেতে হচ্ছে। অনেকের কাছে একাধিকবারও যাওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা বিরক্ত হচ্ছেন না। ভোটাররা ব্যাপারটা উপভোগই করছেন।

১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল। আজ দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে

ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ১০ দফা ইশতেহার

রাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল। আজ দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।

ইশতেহারে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) ব্যবস্থা, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি স্টারলিংক সুবিধা, বিবাহিত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা হল নির্মাণ, একাডেমিক ভবনে লিফটের ব্যবস্থা, নারী শিক্ষার্থীদের হল এলাকায় সুপার শপ চালুসহ প্রভৃতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ইশতেহার পড়ে শোনান প্যানেলটির সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী নাফিউল জীবন, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা। এ সময় ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

তাঁদের ১০ দফা ইশতেহারের মধ্যে নানা বিষয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৬৯–এর গণ–অভ্যুত্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শহীদ ড. শামসুজ্জোহা দিনটিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা; একাডেমিক উৎকর্ষ নিশ্চিতকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন; বাজেট বৃদ্ধি ও ক্যাম্পাসে খণ্ডকালীন চাকরি চালু, শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগার; ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎসেবা উন্নয়নে লাইব্রেরিতে এসি চালু ও ক্যাম্পাসে স্টারলিংক চালু করা হবে।

এ ছাড়া ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহিংসতা প্রতিরোধে শক্তিশালী সেল গঠন করা হবে, ক্যাম্পাসের চিকিৎসাকেন্দ্র আধুনিকায়নে এবং ২৪ ঘণ্টা অন-ক্যাম্পাস ফার্মেসি প্রতিষ্ঠা করা; নারী শিক্ষার্থী এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণে ছাত্রী হলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন; মার্তৃকালীন উপস্থিতি শিথিলকরণ ও ব্রেস্টফিডিং কর্নার চালু করা।

ইশতেহারে আরও বলা হয়, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সামাজিক সহাবস্থান ও মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার পরিবেশ নিশ্চিতকরণে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনাকক্ষ নির্মাণ করা; আবাসন–সংকট নিরসন এবং নতুন হল নির্মাণের পাশাপাশি পূর্ণ আবাসিকতার রোডম্যাপ প্রণয়ন; স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা; দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশন সচল করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ডিসকাউন্ট টিকিটের ব্যবস্থা করা।