Thank you for trying Sticky AMP!!

নাটোরে আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীর ওপর হামলা, যুবলীগের ৫ কর্মী আটক

আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় আটক যুবলীগের পাঁচ কর্মী। বৃহস্পতিবার দুপুর সদর থানায়

নাটোরে আদালতে হাজিরা দিতে আসা বিচারপ্রার্থীর ওপর আবার দুর্বৃত্তের হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় রাতুল ইসলাম (৩০) নামের এক বিচারপ্রার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় আদালত চত্বর থেকে যুবলীগের পাঁচ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে চারটি পিস্তলের গুলি, একটি চায়নিজ কুড়াল, চারটি দেশি অস্ত্র ও নিবন্ধনহীন তিনটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।

আহত রাতুল নাটোর শহরের কানাইখালী এলাকার মো. রাজুর ছেলে। রাজু একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি যুবলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তবে তাঁর কোনো পদপদবি নেই। রাতুলকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান ওরফে শাহীনের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা করে। দুর্বৃত্তরা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তাঁর বাঁ হাত ভেঙে দেয় এবং পরপর তিনটি গুলি করে। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Also Read: নাটোরে আদালত থেকে ফেরার পথে বিএনপি নেতার ওপর হামলা, গুলি

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছেলে রাতুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরে অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে একটি মামলার হাজিরা দিতে আসেন মো. রাজু। হাজিরা দিয়ে দুপুর ১২টার দিকে আদালত ভবনসংলগ্ন আইনজীবী ভবনের সিঁড়ি থেকে নামতেই দুর্বৃত্তরা তাঁদের ঘিরে ধরে। মুহূর্তেই দুর্বৃত্তরা চায়নিজ কুড়াল দিয়ে রাতুলের বাঁ হাতে কোপ মেরে গুরুতর জখম করে। এ সময় রাজুর সমর্থকেরাও পাল্টা হামলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আদালত চত্বরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া–পাল্টাধাওয়া হয়। আদালত ভবন ও আশপাশের এলাকায় দুর্বৃত্তরা অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল আদালত চত্বরে অভিযান চালিয়ে যুবলীগের পাঁচ কর্মীকে আটক করে।

আটক ব্যক্তিরা হলেন শহরের ফতেঙ্গাপাড়া এলাকার সজীব হোসেন (৩০), বঙ্গজল এলাকার সুমন আলী (৩৫), কানাইখালী এলাকার শাহরিয়ার (২৮), গাড়িখানার সবুজ (২৭) ও দক্ষিণ পটুয়াপাড়ার মাহামুদুল হাসান ওরফে সোহাগ (৩০)। পদপদবি না থাকলেও তাঁরা যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যুবলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁদের দেখা যায়। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

জব্দ করা পিস্তলের গুলি, চায়নিজ কুড়াল ও দেশি অস্ত্র

প্রত্যক্ষদর্শী মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে আদালতে এসেছিলেন। আইনজীবী ভবন থেকে বের হওয়ার পরপরই সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। তাঁর সামনেই এক যুবককে তিনি কোপাতে দেখেছেন। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে তিনিসহ শত শত মানুষ দিগ্‌বিদিক দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন।

নাটোর পৌর যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সাঈম হোসেন বলেন, আহত রাতুল তাঁর মক্কেল। তিনি তাঁর বাবার সঙ্গে আদালতে এসেছিলেন। যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁদের সঙ্গে তাঁর (রাতুল) পূর্ববিরোধ আছে। সেই বিরোধের জেরে হামলা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। হামলাকারীদের তিনি চেনেন। তবে তাঁরা কেউ যুবলীগের পদধারী নন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু আহসান টগর প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরপরই সমিতির নির্বাহী সদস্যদের নিয়ে তিনি সভা করেন। সভায় উদ্ভূত ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। উদ্বেগের বিষয়টি পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানাবেন। আদালত চত্বরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটনায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। জরুরি ব্যবস্থা না নিলে তাঁরা আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালত চত্বরে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ দুর্বৃত্তকে আটক করা হয়েছে। গুলি, ধারালো অস্ত্র ও দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে গতকাল দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত বিএনপি নেতা ফরহাদ আলীর দুই হাতে আজ দুপুরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাঁর দুই হাতের তিনটি আঙুল ও বাঁ পা ভেঙে গেছে। পায়ে গুলির ক্ষত আছে। তবে শরীরে গুলি পাওয়া যায়নি।

ফরহাদ আলী দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সুস্থ হলেই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে মামলা করব। হামলাকারীরা শহরের লোকজন। তাঁদের আমি চিনি। তাঁরা সব সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে চলাফেরা করেন। তারা আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে।’