Thank you for trying Sticky AMP!!

নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নজুড়ে বাঘরী বিলের অবস্থান। রোববার রাতে এই বিলে গ্রামবাসীর পিটুনিতে চারজন নিহত হন। গত সোমবার তোলা

‘আতঙ্ক–ক্ষোভ’ থেকে সোনারগাঁয়ে গণপিটুনি

নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নজুড়ে বাঘরী বিলের অবস্থান। উত্তরে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর, পূর্বে সাদিপুর ও দক্ষিণ-পশ্চিমে বন্দরের মদনপুর ইউনিয়ন। গত রোববার রাতে বিলটিতে গণপিটুনির পর মারা যায় চারজন। গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আরও একজন।

এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় পুলিশের দায়ের করা হত্যা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিলের আশপাশের গ্রামের অজ্ঞাতনামা বাসিন্দারা ডাকাত সন্দেহে ওই ব্যক্তিদের গণপিটুনি দেন। সুরতহাল প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিহত ব্যক্তিদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেঁতলে গেছে। শরীরে শাবল, টেঁটাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে।

রোববার রাতে এ ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ ফেসবুকে সরাসরি প্রচার করেন। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, লাঠি, দা, শাবল, টেঁটাসহ নানান ধরনের দেশি অস্ত্র হাতে শত শত গ্রামবাসী অন্ধকার বিলের মধ্যে টর্চ ও মুঠোফোনের আলো জ্বালিয়ে ছুটছেন। সন্দেহভাজন লোকদের খুঁজে পেলেই তাঁরা এলোপাতাড়ি আঘাত করছেন। গালাগাল দিচ্ছেন। কেউ কেউ চিৎকার করে লোকগুলোকে হত্যা করার কথা বলছেন।
গণপিটুনিতে চারজন নিহত হওয়ার পর হঠাৎ গ্রামবাসীর এ রকম নৃশংস হয়ে ওঠার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

Also Read: মধ্যরাতে গ্রামের মাইকে ‘ডাকাত পড়েছে’ ঘোষণা, পিটুনিতে নিহত ৪

মাইকে ‘ডাকাত পড়ার’ ঘোষণা শুনে গ্রামবাসী চর্ট নিয়ে বাঘরী বিলে নেমে পড়েন

ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ করেছেন—এমন এক তরুণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই তরুণ জানান, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা ছয় বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় ‘বিলে ডাকাত পড়েছে’ বলে কাজরদী গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা শুনতে পান। পরে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে তাঁরা ছয় বন্ধু লাঠিসোঁটা নিয়ে বিলের দিকে এগিয়ে যান। প্রায় একই সময় আশপাশের অন্য সব মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা আসে। বিলের অন্য প্রান্তের লোকজনও এগিয়ে আসেন। ১০ মিনিটের মধ্যে পুরো বিলে পাঁচ শতাধিক মানুষ নেমে আসেন।

ওই তরুণ বলেন, এর আগে আগে গত শুক্র ও শনিবার দুই দফায় কাজরদীতে ডাকাত দল হানা দেয়। শনিবার গ্রামবাসী টের পেলে ডাকাতেরা চলে যায়। আর শুক্রবার স্থানীয় দুটি বাড়িতে লুটপাটের পর ইসলাম মুন্সি নামের এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে জখম করা হয়। তাই গ্রামবাসী সতর্ক ছিলেন এবং ডাকাতদের প্রতি তাঁদের ক্ষোভ ছিল।
গত দুই দিনে বিলের আশপাশের চারটি গ্রামের অন্তত ৩০ জন বাসিন্দার সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়েছে। তাঁরাও একই রকম কথা বলেছেন।

ডাকাতদের মারধরের শিকার ইসলাম মুন্সির ছেলে এদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবার মুখোশধারী পাঁচজন বাড়িতে হানা দিয়ে দুই ভরি সোনার গয়না লুট করে নেয়। এ সময় আমার বৃদ্ধ বাবাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) চার দিন চিকিৎসার পর সোমবার আমরা বাড়ি ফিরেছি।’

এদাদুল হক আরও বলেন, আশপাশের গ্রামে প্রায়ই ডাকাতি হয়। সোনারগাঁয়ের মানুষ ডাকাতি নিয়ে আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। ২০১৬ সালেও এই বিলে ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীর পিটুনিতে একজন নিহত হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাঘরী গ্রামের বাসিন্দা আমির আলী ও হজরত আলী বলেন, সাধারণত গ্রামবাসী ডাকাতদের ধরে মারধর দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। কিংবা মামলা হলে পুলিশ ডাকাতদের গ্রেপ্তার করে। কিন্তু ডাকাত দলের সদস্যরা জেল থেকে বের হয়ে আবারও ডাকাতি শুরু করে।

Also Read: ৩৩ বছরের জীবনে ১৪ বছর কারাগারে, শেষে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু

তিন মাসে ১৬ ডাকাতি
বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, গত তিন মাসে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৬টি বাড়িতে ডাকাত দল হানা দিয়েছে। ডাকাত দল বাড়ির সদস্যদের হাত, পা, মুখ বেঁধে টাকা ও  স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে। কোনো কোনো ঘটনায় বাড়ির লোকজনকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। ডাকাতি থেকে বাঁচতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে রাত জেগে পাহারাও ব্যবস্থা করেছেন।

তবে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামানের দাবি, সোনারগাঁয়ে আগের মতো ডাকাতি হয় না। তাঁর এই দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলেন, গত তিন মাসে সোনারগাঁ থানায় কেবল একটি ডাকাতির মামলা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় পুলিশ ২০ থেকে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে।

কামরুজ্জামান আরও বলেন, ডাকাতদের গ্রেপ্তার করা হলে অনেক সময় আইনের ফাঁক গলে তারা দ্রুতই বের হয়ে যায়। আবার যাদের শাস্তি হয়, তারাও সাজা শেষে বের হয়ে আবার অপরাধে জড়ায়।

Also Read: সোনারগাঁয়ে পিটুনিতে নিহতদের একজন ১০ মামলার আসামি