সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হত্যাচেষ্টা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন ৫ জন

শাহ এ এম এস কিবরিয়া
ফাইল ছবি

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলা এবং সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে হত্যাচেষ্টা মামলায় পাঁচজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সেই সঙ্গে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ আগামী ৭ মে ধার্য করেছেন আদালতের বিচারক। দুটি মামলার পৃথক সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আসামিরা আদালতে হাজির হলে আজ বুধবার দুপুরে দুই মামলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক স্বপন কুমার সরকারের আদালতে সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

এর আগে ২২ এপ্রিল আদালতে সাক্ষী উপস্থিত না থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। তবে ৮ এপ্রিল দুই মামলায় ৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আবুল হোসেন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

পিপি বলেন, আজ দুই মামলার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হত্যাচেষ্টা মামলায় তিনজন এবং শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় দুজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলায় জামিনে থাকা আসামিরা সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। এ ছাড়া কারাগারে থাকা আসামিরা আদালতের সাক্ষ্য গ্রহণকালে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত সূত্র জানায়, মামলায় অভিযুক্ত সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র জি কে গৌছ, লুৎফুজ্জামান বাবর আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁরা জামিনে রয়েছেন। তাঁদের পক্ষের আইনজীবীরা সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে জনসভা শেষে বের হওয়ার সময় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। ওই ঘটনায় তাঁর ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী নিহত হন। আহত হন অন্তত ৭০ জন।

ঘটনার পরদিন হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালের ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাইউমসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। ওই অভিযোগপত্রের বিষয়ে আদালতে নারাজি আবেদন করে বাদীপক্ষ। পরে মামলা পুনঃ তদন্তের পর ২০১১ সালের ২০ জুন আসামির সংখ্যা বাড়িয়ে ২৬ জনের নামে দ্বিতীয় দফা অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এটি নিয়েও আপত্তি জানায় নিহত কিবরিয়ার পরিবার।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে নতুন করে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। পরে ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এ মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক ও হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র জি কে গউস, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৩ জন জামিনে রয়েছেন। বাকি অভিযুক্তদের মধ্যে সাতজন পলাতক এবং মিজানুর রহমান, সৈয়দ নাঈম আহমদ, শেখ ফরিদ আহমদ, আবদুল মাজেদ, আবু জান্দালসহ অন্যরা কারাগারে রয়েছেন। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কিবরিয়া হত্যা মামলায় ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

অন্যদিকে ২০০৪ সালের ২১ জুন সুনামগঞ্জের দিরাই বাজারে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এক নির্বাচনী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। ঘটনাস্থলে যুবলীগের এক কর্মী নিহত ও ২৯ জন আহত হন। সেদিন অল্পের জন্য রক্ষা পান সুরঞ্জিত। ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর লুৎফুজ্জামান বাবর, আরিফুল হকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় ১২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।