সিংড়ায় খাঁচায় আটকে রাখা বিপন্ন মদনটাক পাখি উদ্ধার
নাটোরের সিংড়ায় খাঁচায় আটকে রাখা বিপন্ন একটি মদনটাক পাখি উদ্ধার করেছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের একদিলতোলা গ্রামের কৃষক শান্তি ইসলামের বাড়ি থেকে পাখিটি উদ্ধার করা হয়। পাখিটিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সিংড়া উপজেলা প্রশাসন ও চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা খাতুন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম আজ দুপুরে কৃষক শান্তি ইসলামের বাড়িতে যান। সেখানে খাঁচায় একটি মদনটাক পাখি আটকে রাখতে দেখেন তাঁরা। অনেকটা অসুস্থ অবস্থায় পাখিটি উদ্ধার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে আনা হয়।
গৃহকর্তা শান্তি ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার তিনি ধানখেতে গিয়ে পাখিটি দেখতে পান। অন্যরা পাখিটি ধরে জবাই করার উদ্যোগ নিলে তিনি তাঁদের বুঝিয়ে পাখিটি বাড়িতে এনে ধরে রাখেন। নিরাপদ আশ্রয়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তিনি জায়গা খুঁজছিলেন।
প্রশাসন ও পরিবেশকর্মীরা বিপন্ন এ পাখিটি রক্ষার জন্য শান্তি ইসলামকে ধন্যবাদ জানান।
পরিবেশকর্মী সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মদনটাক একটি বিপন্ন প্রজাতির পাখি। আকৃতিতে এগুলো অনেক বড় হওয়ায় খুব সহজে শিকারিদের কবলে পড়ে। আগে চলনবিলে প্রচুর মদনটাক দেখা গেলেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। হঠাৎ গ্রামবাসীর মাধ্যমে মদনটাক পাখিটি আটকে রাখার খবর পেয়ে আমি ইউএনওকে জানাই। পরে তাঁকে নিয়ে পাখিটি উদ্ধার করে আনা হয়। পাখিটির চিকিৎসা চলছে।’
Also Read: সুন্দরবনের খালপাড়ে বিপন্ন মদনটাক
ইউএনও মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘চলনবিল জীববৈচিত্র্যের ভান্ডার। এই বিলে শীতকালে পাখপাখালির মেলা বসে। এই বিলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির যে সংগঠন রয়েছে, তাদের নিয়ে প্রশাসন সব সময়ই পাখি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করছে। পাখিশিকারিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মদনটাক পাখিটি উদ্ধারের পর রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে জানানো হয়েছে। তাদের প্রতিনিধি এসে পাখিটি নিয়ে যাবেন।’
পাখি–গবেষকেরা জানান, বিপন্নপ্রায় পাখিগুলোর একটি এই মদনটাক। এর ইংরেজি নাম ‘লেসার অ্যাডজুট্যান্ট’। বৈজ্ঞানিক নাম Leptoptilos javanicus। লম্বা ঠোঁটের বিশালদেহী এই পাখির মাথায় টাক বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে মদনটাক। অপ্রতুল বাসস্থান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ পাখির অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির পথে। আবাস মূলত দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে; তবে কয়েকটি দেশ থেকে এর মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সুন্দরবনে কদাচিৎ দেখা মেলে এ পাখির। কখনো উত্তরবঙ্গ ও সিলেটেও দেখা যায়।
মদনটাক নোনাজলের বন, নদী বা খালের মোহনায় বিচরণ করে। সচরাচর এগুলো একাকী চলাফেরা করতেই ভালোবাসে। পাখিটি অগভীর পানির ধারে, ঘাসযুক্ত এলাকা অথবা নরম কাদায় খাবার খুঁজে খায়। প্রধান খাদ্য মাছ। এ ছাড়া ব্যাঙ, সরীসৃপ, কাঁকড়া ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী খায়। অনেক সময় মৃত পশুও খেতে দেখা যায়। ওড়ার আগে উড়োজাহাজের মতো লম্বা দৌড় দিয়ে তারপর ওড়ে। সচরাচর নীরব থাকে, কখনো ঠোঁটের সাহায্যে ঠক ঠক শব্দ করে।
Also Read: পাবনায় সংকটাপন্ন মদনটাক উদ্ধার
আরও পড়ুন
-
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫-প্রত্যাশীদের কর্মসূচি থেকে আটক ১৫, আলটিমেটাম
-
ছয় মাস ধরে নিখোঁজ যুবককে পাওয়া গেল মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে, পেটে কাটা দাগ
-
খালের বর্জ্যে পাওয়া খাট–লেপ-তোশক ও সোফা–কমোড নিয়ে প্রদর্শনী
-
রাফায় অভিযান বন্ধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে আইসিজেতে আবেদন দক্ষিণ আফ্রিকার
-
এক অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে: মির্জা ফখরুল