Thank you for trying Sticky AMP!!

কক্সবাজার শহরের সৈকত সড়কে আবাসিক হোটেল ও গেস্টহাউসের সারি। ৯৯ শতাংশ হোটেলে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নেই

কক্সবাজারের ৫৩২ হোটেল-রিসোর্টে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্ল্যান্ট নেই, বাড়ছে দূষণ

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের পাশে কলাতলীতে মাত্র তিন বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে গড়ে উঠেছে ৫৩৮টি হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট-কটেজ। এর মধ্যে তারকা মানের ছয়টি হোটেল বাদ দিয়ে ৫৩২টিতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) নেই। সেপটিক ট্যাংক দিয়ে হোটেলগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। এসটিপি না থাকায় অধিকাংশ হোটেল-মোটেলের বর্জ্যে নদী ও সমুদ্রে প্রতিনিয়ত দূষণ বাড়ছে। পাশাপাশি পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

হোটেল-মোটেলের মালিকেরা বলছেন, এসটিপি স্থাপন অনেক ব্যয়বহুল। তা ছাড়া নকশা অনুমোদনের সময় এসটিপি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এর পরিবর্তে বাসাবাড়ির আদলে (ভূগর্ভে) তিন চেম্বারবিশিষ্ট সেপটিক ট্যাংক বানানো হয়েছে।

অন্যদিকে পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, এসটিপি না থাকায় বর্ষা মৌসুমে সেপটিক ট্যাংকের মলমূত্র নালা ও রাস্তা দিয়ে সমুদ্র ও নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সামুদ্রিক প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতির মুখে পড়ছে।

Also Read: কক্সবাজারে দখল-দূষণের ‘প্রতিযোগিতা চলছে’

সরেজমিনে কলাতলীর সি সান গেস্টহাউস গ্যালাক্সি রিসোর্ট, বিচ হলিডে, হানিমুন রিসোর্ট, ডায়মন্ড প্যালেস, মোহাম্মদিয়া গেস্টহাউসসহ অন্তত ১০০টি হোটেল-মোটেল ঘুরে এসটিপি পাওয়া যায়নি। তবে তারকা মানের ছয়টি হোটেলে এসটিপি থাকার বিষয়টি দাবি করা হয়েছে।

কলাতলী সড়কের পূর্ব পাশে সি সান গেস্টহাউসে কক্ষ আছে ৬০টির বেশি। ১৬ বছর আগে নির্মিত হোটেলটিতে কোনো এসটিপি নেই। তবে ভবনের নিচে আছে তিন চেম্বারবিশিষ্ট (কক্ষ) একটি সেপটিক ট্যাংক। গেস্টহাউসের ব্যবস্থাপক মো. ইদ্রিস বলেন, হোটেলে মলমূত্র সেপটিক ট্যাংকে জমা হলেও অতিথিদের (পর্যটক) ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও ময়লা-আবর্জনা সংরক্ষণের ব্যবস্থা তাঁদের নেই।

Also Read: কক্সবাজারে সমুদ্র দূষণে দায়ী হোটেল-হ্যাচারির তালিকা হচ্ছে

পাঁচ তারকা মানের হোটেল সিগালে এসটিপি আছে জানিয়ে হোটেলটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী বলেন, এসটিপি নির্মাণ ব্যয়বহুল বলে শহরের অধিকাংশ হোটেলের মালিক সেপটিক ট্যাংক বসিয়ে প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। তবে এখন কেন্দ্রীয়ভাবে এসটিপি স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ শতাধিক হোটেলের ৯৯ শতাংশেরই এসটিপি নেই। হোটেলের বর্জ্য ও মলমূত্র সরাসরি নদী ও সাগরের পানিতে চলে যাচ্ছে। সাত মাস আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এসটিপির তথ্য দিতে প্রথম দফায় ১৩৪টি হোটেল-গেস্টহাউসে চিঠি পাঠান। এর মধ্যে ছয়টি হোটেল এসটিপি আছে বলে জানায়। ৩৯টি হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাঁদের এসটিপি নেই, তবে তিন চেম্বারবিশিষ্ট সেপটিক ট্যাংক আছে। বাকি ৮৯টি হোটেল চিঠির জবাব দেয়নি। দ্বিতীয় দফায় অন্যান্য হোটেলের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।

লাখো পর্যটকে ভরপুর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত

কক্সবাজার হোটেল–গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজারে ৫৩৮টি হোটেলের পাশাপাশি আরও দুই শতাধিক বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। অধিকাংশ হোটেল ৪-৫ কাটা জমির ওপর নির্মিত। সেখানে এখন এসটিপি স্থাপনের সুযোগ নেই। তবে সব কটিতে সেপটিক ট্যাংক বসানো হয়েছে। কউক যদি কেন্দ্রীয়ভাবে এসটিপি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়, তাহলে হোটেলমালিকেরা অর্থসহায়তা দেবেন।

কক্সবাজারে দীর্ঘ দিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজার জেলার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধূরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশ সংকটাপন্ন সৈকত এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের কোনোটিতে তাঁরা এসটিপি দেখতে পাননি। এখন ছয়-সাতটি তারকা মানের হোটেলে এসটিপি আছে দাবি করা হলেও তা দৃশ্যমান নয়। শহরে যখন পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়, তখন সেপটিক ট্যাংকগুলো মলমূত্রে ভরে যায়। নালা দিয়ে মলমূত্র খাল, নদী ও সাগরে ছড়িয়ে পড়ে। সৈকত ও শহরে প্রতিদিন ৯৭ মেট্রিক টন প্লাস্টিকসহ ময়লা জমছে। কিন্তু সংরক্ষণের জন্য ডাম্পার স্টেশনও নেই। এতে নদী-সাগরসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

Also Read: কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ঢল, খালি নেই হোটেল-মোটেল

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, পাঁচ শতাধিক হোটেলের মধ্যে তারকা মানের কয়েকটিতে এসটিপি আছে। বাকি হোটেল-রিসোর্টে এসটিপি নেই। ২০-২৫টি ছাড়া পাঁচ শতাধিক হোটেলের পরিবেশ ছাড়পত্রও নেই। এসটিপি স্থাপন ও পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণের জন্য নোটিশ করা হলেও সাড়া মিলছে না।

এসটিপি স্থাপনের বিষয়ে পরামর্শ নিতে ২৬ এপ্রিল হোটেল মালিক ও চিংড়ি পোনা হ্যাচারি মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কউক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার। সভায় তিনি বলেন, এসটিপি নিয়ে ধারণা না থাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের আগে সেটি স্থাপন করা হয়নি। সেপটিক ট্যাংক দিয়ে কাজ চলছে। এখন ভবনগুলোতে এসটিপি স্থাপনের সুযোগ (জায়গা) নেই। তাই সংকট নিরসনে জমি কিনে কেন্দ্রীয়ভাবে এসটিপি স্থাপন করতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থার আর্থিক সহায়তা নেওয়ার মাধ্যমে প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব। সবার সহযোগিতা পেলে কউক এসটিপি স্থাপনের কাজে হাত দেবে।

কক্সবাজারে এসটিপি স্থাপন এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এটা করতে দেরি করা যাবে না। হোটেল–গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কউক এসটিপি স্থাপনের উদ্যোগ নিলে হোটেলমালিকেরা অর্থসহায়তা দেবে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে এসটিপি স্থাপনে বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) আগ্রহ আছে। উদ্যোগ নিলে বাস্তবায়ন সম্ভব।