‘খইয়ের মতো’ ফুটল ককটেল

গ্রেপ্তার ইউপি চেয়ারম্যানের মুক্তির দাবিতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে মানববন্ধন

শরীয়তপুরের জাজিরায় গ্রেপ্তার ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারীর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল বুধবার উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের মুলাই ব্যাপারীকান্দি গ্রামে কুদ্দুস ব্যাপারী উচ্চবিদ্যালয়ে
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুরে সংঘর্ষে ‘খইয়ের মতো’ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় কারাগারে আছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারী। তাঁর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিলাসপুর কুদ্দুস ব্যাপারী উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যানারে ওই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

গতকাল বুধবার শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রেখে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা ওই কর্মসূচিতে অংশ নেন। অভিযোগ উঠেছে কুদ্দুস ব্যাপারীর পরিবার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাপ দিয়ে ওই কর্মসূচির আয়োজন করে।

জাজিরা থানা–পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাজিরার বিলাসপুর ইউনিয়নটি পদ্মা নদীর তীরঘেঁষা ও নদীভাঙনপ্রবণ। ওই এলাকার জেগে ওঠা চরের জমি দখল, পদ্মা নদীর নৌপথ নিয়ন্ত্রণ, বালু উত্তোলন, মাছ শিকার ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে জয়–পরাজয়ের বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এলাকায় দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারী। আরেক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন পরাজিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জলিল মাতবর। তাঁরা দুজনই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত।

ওই দুই পক্ষের সমর্থকেরা ৫ এপ্রিল এলাকায় সংঘর্ষে জড়ায়। তখন শতাধিক ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওই ঘটনায় ১৫ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে একজনের হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং আরেকজনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়। তাঁরা দুজন এখন ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ওই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জাজিরা থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারীসহ ৮৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। কুদ্দুস ব্যাপারী গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে রয়েছেন।

কুদ্দুস ব্যাপারীর বাড়ি মুলাই ব্যাপারীকান্দি গ্রামে। ২০০৪ সালে ওই গ্রামে তিনি নিজের নামে বিলাসপুর কুদ্দুস ব্যাপারী উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কুদ্দুস ব্যাপারীর মুক্তির দাবিতে গতকাল ওই বিদ্যালয়ের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের মাঠে ও সড়কে ওই মানববন্ধন করা হয়। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক–কর্মচারী ও কুদ্দুস ব্যাপারীর পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।

কুদ্দুস ব্যাপারীর জামাতা টিপু সুলতান মাতবর মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ৫ এপ্রিল সংঘর্ষের সময় কুদ্দুস ব্যাপারী ঢাকায় ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি কারাগারে ছিলেন। জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি ঢাকায় চলে যান, আর এলাকায় ফেরেননি। রাজনৈতিক কারণে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বা তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য ককটেল তৈরি ও বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত নন। তাঁর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে গ্রামের মানুষের সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা অংশ নিয়েছিলেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বি এম শাহজাহান কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের কক্ষ ব্যবহার করে ককটেল তৈরি করা হয়। কোনো রকম প্রমাণ ছাড়া এমন তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আমাদের বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আমরা ওই সংবাদের নিন্দা জানাতে মানববন্ধন করেছি। সেখানে কুদ্দুস ব্যাপারীর পরিবারের সদস্যরা তাঁর মুক্তি চেয়ে একটি ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। আর মানববন্ধন করার কারণে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি।’

এ বিষয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রেখে মামলার আসামির মুক্তি চেয়ে কর্মসূচি পালন করাটা সঠিক নয়। কোনো বিদ্যালয় এমন করে থাকলে, তাহলে আয়োজকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখা হবে।