
‘লালু’ ‘লালু’ বলে বাড়ির আঙিনায় বসে ডাকছিলেন কৃষক গিয়াস উদ্দিন (৪০)। ডাক শুনে বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে বের হয়ে এল এক শিয়াল। তাঁর গা ঘেঁষে বসল। নানা কায়দায় গিয়াসের কাছ থেকে আদর কেড়ে নিচ্ছিল।
গতকাল শনিবার বিকেলে এমন দৃশ্য দেখা গেল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের কাওলারটেক এলাকায়।
গিয়াস উদ্দিন একজন কৃষক। গাছগাছালি আর জঙ্গলে ঘেরা একটি উঁচু টিলায় তাঁর বাড়ি। বাড়িতে আছে গরু, ছাগল, মুরগি ও ভেড়া। স্ত্রী দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকেন। নিজের ভিটায় তিনি আছেন শিয়াল ও অন্য পশুগুলোকে নিয়ে।
শিয়ালের সঙ্গে এমন সম্পর্কের বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন বলেন, বছরখানেক আগে তাঁর এক বন্ধু জঙ্গলের ভেতরে একটি ছোট শিয়ালছানা পেয়েছিলেন। পরে তিনি সেটিকে লালন-পালন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাঁর বন্ধু শিয়ালছানাটি তাঁকে দিয়ে দেন। সেই থেকে শিয়ালটি তাঁর সঙ্গে আছে।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, শিয়ালটি এখন সব ধরনের খাবার খায়। গরু ও মুরগির মাংস, এমনকি রান্না করা তরকারি ভাত দিয়ে মেখে দিলেও সে খায়। এ ছাড়া খাবার হিসেবে তাকে দেওয়া হয় বিস্কুট, পাউরুটি, আটার রুটিসহ নানা কিছু।
শিয়ালটি দিন ও রাতের বেশির ভাগ সময় গিয়াসের ঘর ও উঠানে থাকে। মাঝেমধ্যে বাড়ির পাশের জঙ্গলে চলে যায়। তখন ‘লালু’ বলে ডাকলে দৌড়ে চলে আসে।
গিয়াসের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ডাক শুনে শিয়ালটি এলে তিনি তার জন্য কয়েক টুকরা মুরগির মাংস নিয়ে আসেন। এরপর গাছের নিচে বসে সেগুলো শিয়ালকে খাওয়ান। দূর থেকে তাদের ভিডিও ধারণ করা হচ্ছিল। হঠাৎ যেন বিষয়টি দেখতে পেয়ে শিয়ালটি এক দৌড়ে জঙ্গলের ভেতরে চলে গেল।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর গিয়াস উদ্দিন ‘লালু’ ‘লালু’ বলে ডাকতে শুরু করেন। তখন শিয়ালটি আবার আসে। তাঁর কাছ থেকে খাবার নেয়। তাঁর সঙ্গে নানা কিছু করে আহ্লাদ করতে থাকে।
গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘ছোট থেকে পালছি তো! শিয়ালটির জন্য মায়া হয়। মনে হয় সে আমার বন্ধু। খেতে কাজ করতে গেলে সে আমার সঙ্গে বসে থাকে। যেখানেই যাই, সে আমাকে খুঁজে বের করে হাজির হয়। আমার পশুপাখিগুলোকে বলতে গেলে পাহারা দিয়ে রাখে। আশপাশের লোকজন তার কোনো ক্ষতি করে না। সবাই জানে, শিয়ালটি আমার বন্ধু।’
প্রতিবেশী আজিজুল ইসলাম বললেন, শিয়ালের সঙ্গে মানুষের এমন সুন্দর সম্পর্ক তিনি জীবনেও দেখেননি। একই মত আরেক প্রতিবেশী শামীমা বেগমের।
কাপাসিয়ার শরীফ মোমতাজ উদ্দিন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ তাজ উদ্দীন আহমদ বলেন, শিয়াল সাধারণত বন্য প্রাণী হওয়ায় ঘরে পালন করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। দুই কারণে শিয়াল মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারে। খাদ্যসংকট ও অন্তঃপ্রজাতি দ্বন্দ্বে। তবে যদি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে যথাযথ যত্ন ও খাদ্য সরবরাহ করা হয়, তাহলে এটি মানুষের সান্নিধ্যে থাকতে পারে।
কাপাসিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এটা হিংস্র ও বন্য প্রাণী। এটা লালন–পালন করতে হলে প্রাণীটিকে টিকা দিতে হবে। তা ছাড়া অবশ্যই বাংলাদেশের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন মানতে হবে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।