
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়ার কবর জিয়ারতে বাধা দেওয়ার ঘটনায় গ্রামবাসীর সঙ্গে স্থানীয় ইউনিয়র পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ২০ জন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়ান গ্রামের লোকজন।
বিএনপির নেতা-কর্মী, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়ার কবর জিয়ারত ও তাঁর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করতে আজ বেলা ১১টার দিকে সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামের উদ্দেশে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী রওনা হন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি বিএনপির নেতা সায়দুজ্জামানের সঙ্গে ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর ১২টার দিকে চরশিবপুর ঘাটে সোনারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহিন ও তাঁর লোকজন বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধা দেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাধা অতিক্রম করে চরশিবপুর গ্রামে পৌঁছে নয়নের কবর জিয়ারত করেন। কিন্তু বাধা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরশিবপুর গ্রামের লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনের ওপর হামলা করেন। বেলা আড়াই থেকে তিনটা পর্যন্ত চলে সংঘর্ষ। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে গ্রামের লোকজনের ধাওয়া খেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহিন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে গ্রামের লোকজনের ধাওয়া খেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহিন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
চেয়ারম্যান পক্ষের মধ্যে আহত ব্যক্তিরা হলেন সোনারামপুর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মনির হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমান, সোনারামপুর ইউনিয়নের যুবলীগের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি আইনউদ্দিন ভূঁইয়া, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ওরফে আয়নাল (৪৫), যুবলীগ কর্মী জয়নাল মিয়া (৪৫), স্থানীয় আমির উদ্দিন (১৮), ফয়জন আলী (২৩), জাহিদুল হাসান (২২) ও রাসেল মিয়া (৩২)। তাঁরা বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে মনির, জয়নাল ও আনোয়ারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। গ্রামবাসী ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে আহত ব্যক্তিরা গোপনে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলার পৌর যুবদলের আহ্বায়ক ইমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নয়নের কবর জিয়ারত ও তাঁর পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতার জন্য গেলে চেয়ারম্যান বাধা দেন। তখনই গ্রামের লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বাধা অতিক্রম করে করব জিয়ারত করতে পারলেও সংঘর্ষের কারণে নয়নের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা যায়নি।
সোনারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নয়নের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যেন কোনো বিভ্রান্তি ছড়িয়ে না পড়ে, এ জন্য লোকজন নিয়ে ঘাটে বসে সভা করছিলাম। এ সময় গ্রামের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালান। আমরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধা দিইনি।’
বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষ হয়েছে বলে শুনেছেন। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় বিএনপির নেতা সায়দুজ্জামানের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
গত ১৯ নভেম্বর বিকেলে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহত হন সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবচর গ্রামের রহমত উল্লাহর বড় ছেলে, সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি ও চরশিবপুর ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক নয়ন মিয়া (২৬)। এ ঘটনায় ২৩ নভেম্বর পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশের আট সদস্যের নামে মামলার আবেদন করলেও তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।