রমনা পার্কে সম্প্রতি ফোটা ম্যাকআর্থারগাছের ফল
রমনা পার্কে সম্প্রতি ফোটা ম্যাকআর্থারগাছের ফল

রমনা পার্কের ম্যাকআর্থার পাম

রমনা উদ্যানের অরুণোদয় ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সোজা বাঁ দিকের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকলে কাকরাইল মসজিদের পেছনের রাস্তাটির দুই পাশে সারি করে লাগানো ৪৯টি ম্যাকআর্থার পামের ঝোপ চোখে পড়ে। এতগুলো ম্যাকআর্থার পামের বীথি আর কোথাও চোখে পড়েনি।

গাছগুলো দেখে মনে হয় একই সময় লাগানো হয়েছিল। লাগানোর সময় সেখানে আরও গাছ ছিল। কেননা, দুটি সারির মাঝে কিছু ম্যাকআর্থার পামগাছ নেই। সেখানে ভিন্ন গাছ লাগানো হয়েছে। পরিকল্পনা হয়তো ছিল যে এই রাস্তার ধারে ম্যাকআর্থার পামের এক নিরেট বীথি গড়ে তোলা হবে। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক, সেই একহারা বীথিটা এখন আর নেই। কোনো কোনো ঝোপে প্রচুর গাছ, গোড়া থেকে খাড়া হয়ে খুঁটির মতো উঠে বড় ঝোপ করেছে। আবার কোনো কোনো ঝোপে মাত্র একটি গাছ টিনটিন করে টিকে আছে। সঠিক পরিচর্যা না পেলে যা হয়।

যাহোক, প্রায়ই হাঁটতে গিয়ে কিছু কিছু গাছের এসব দুর্দশা দেখে মন খারাপ হয়, আবার কিছু কিছু গাছের ভালো চেহারা দেখে মন ভালো হয়ে যায়। ফলে অনুভূতির যোগ-বিয়োগ করে মনটা থাকে একই রকম। ম্যাকআর্থার পামগাছের চরিত্রটা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। সেপ্টেম্বরে গিয়ে পেলাম প্রচুর ফুলের দেখা। কিছু গাছে ফুল এখন হেমন্তকালেও ফুটছে। গাছের মাথার দিকে কাণ্ডের গিঁট থেকে বিপরীতক্রমে পুষ্পমঞ্জরি বা কাঁদি বের হয়। সেই কাঁদিতে অনেকগুলো পুষ্পমঞ্জরি শাখায়িত হয়ে জন্মে, নিচের দিকে সেগুলো ঝুলতে থাকে। এক একটি পুষ্পমঞ্জরি ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পুষ্পদণ্ডের চারদিকে ছোট ছোট ঘিয়ে সাদা বা সবুজাভ-হলুদ রঙের ফুল ফোটে। সে দণ্ডে ফুলগুলো ফোটে দল বেঁধে। একটি দলে বা গ্রুপে থাকে একটি স্ত্রী ও দুটি পুরুষ ফুল। তুলনামূলকভাবে পুরুষ ফুল স্ত্রী ফুলের চেয়ে সামান্য বড় থাকে। ফুলে তিনটি বৃতি ও তিনটি পাপড়ি থাকে।

সে গাছেরই আরেক ঝোপে পেলাম পাকা হলুদ-লাল ফলের দেখা। আবার হেমন্তে গিয়ে দেখছি সেসব গাছে প্রচুর ফুল ও কাঁদি ভরে কাঁচা সবুজ ফল ঝুলছে। ফলগুলো দেখতে অনেকটা খুদিখেজুরের মতো। তবে আকৃতিতে সুপারির মতো, ডিম্বাকার ও অগ্রভাগ সুচালো, কিন্তু ফলগুলো সুপারির চেয়ে অনেক ছোট। পাকলে ফলগুলো প্রথমে হলুদ ও পরে লাল হয়ে যায়। লম্বা ছড়ায় প্রচুর ফল ধরে।

ম্যাকআর্থারগাছের ফুল

এর বেশ কয়েকটি ইংরেজি নাম আছে, যেমন ম্যাকআর্থার পাম, ক্লাস্টার পাম হারিকেন পাম, ম্যাকআর্থার ফেদার পাম ইত্যাদি। উনিশ শতকের একজন প্রভাবশালী অস্ট্রেলিয়ান উদ্যানতত্ত্ববিদ উইলিয়াম ম্যাকআর্থারের সম্মানে এ গাছের ইংরেজি নাম রেখেছিলেন মালি থমাস রিডি। ম্যাকআর্থার পামগাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ptychosperma macarthurii ও গোত্র অ্যারিকেসি।

এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল পাম বা সুপারিজাতীয় একবীজপত্রী চিরসবুজ গাছ, অনেকগুলো কাণ্ড বা গাছ গোড়া থেকে বের হয়, সেগুলো গোছা ধরে থাকে। সুপারিগাছের মতো লম্বা গাছ, চিকন কাণ্ড ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, ব্যাসার্ধ প্রায় ৪ সেন্টিমিটার। কাণ্ডে সুস্পষ্টভাবে সুপারির খোলার মতো পাতার স্পেদ বা খোলস প্যাঁচানো থাকে। পাতার এসব খোসা ঝরে গেলে কাণ্ডে সেসব পত্রভিত্তির বলয়সদৃশ দাগ দেখা যায়। কাণ্ডের রং ধূসর। কাণ্ডের মাথায় ঝুলতে থাকে সুপারির মতো পাতা। একটি গাছের মাথায় ৩ থেকে ১৩টি পাতা থাকে। পাতা প্রায় ৩ মিটার লম্বা, প্রতিটি পত্রদণ্ডের দুই পাশে চিরুনির দাঁতের মতো অনিয়মিতভাবে পত্রক জন্মে। এক একটি পত্রক ৫৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পত্রকগুলোর ওপরের পিঠ চকচকে গাঢ় সবুজ, নিচের পিঠ হালকা সবুজ। অনেকগুলো কাণ্ডবিশিষ্ট ম্যাকআর্থার পামগাছের ঝাড় যেকোনো উদ্যানের সৌন্দর্য বাড়ায়। এ জন্য বিভিন্ন পার্কে ও রাস্তার ধারে এ গাছকে বাহারি গাছ হিসেবে লাগানো হয়। আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনি।