
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম দেশের কিছু সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন কইরেন না।’
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে ‘ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সাংবাদিক হত্যা-নিপীড়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তথ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন। আজ সোমবার সকালে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপির) সভাকক্ষে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘কয়েকটি পত্রিকা জুলাই অভ্যুত্থান লেখে না। তারা লেখে জুলাই আন্দোলন। তারা বলেন, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরবর্তী সরকার। এর মানে দাঁড়ায়, এখানে দুই হাজার মানুষ শহীদ হয়নি। একটা চক্রান্ত হয়েছিল, সেখানে হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম এটা করতে পারে না।’
এসব সংবাদমাধ্যম বন্ধ করা হয়নি উল্লেখ করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা লেখেন, জনগণ আপনাদের দেখে নিবে। শহীদ ফ্যামিলিও আপনাদের দেখে নিবে। আপনাদের সাহস হয় কীভাবে? আপনাদের চোখের সামনে ঘটেছে সবকিছু। আপনারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন কইরেন না।’
রাজনীতিকরণ সংবাদমাধ্যমের শত্রু এবং এটাই মূলত সংবাদকর্মীদের অধিকারহীনতার উৎস বলে মন্তব্য করেন মাহফুজ আলম।
সেমিনারে তথ্য সচিব মাহবুবা ফারজানা বলেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নির্দেশনায় সাংবাদিকদের মামলা-সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা বিষয়ক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা হয়রানিমূলক কিনা, সে বিষয়ে তথ্য চেয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। এর পাশাপাশি বিএফইউজে, ডিইউজে, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পত্র দেওয়া হয়েছিল।
সচিব আরও বলেন, গত আট মাসে সংবাদিকদের বিরুদ্ধে হওয়া ২৬৬টি মামলা নিয়ে কাজ করছে সরকার। এর মধ্যে ৭৪টি মামলা হয়রানিমূলক, এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগত কারণে নালিশি মামলা করা হয়েছে ২৯টি। সরকার চাইলেই এটা তুলতে পারবে না। চারটি মামলা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে, বাকিগুলো রাজনৈতিক মামলা।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদ প্রমুখ।
এ সময় ‘ফ্যাসিবাদী শাসনে সাংবাদিক হত্যা-নিপীড়ন’ শীর্ষক একটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এই প্রকাশনার সার সংক্ষেপ পড়ে শোনান অনুষ্ঠানের সভাপতি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। এই প্রকাশনায় পনেরো বছরে ৬১ জন সাংবাদিককে হত্যা এবং ৩ হাজার ৫৮৮ জনকে নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।