লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান

যত তাড়াতাড়ি একটি নির্বাচিত সরকার আসবে, ততই ভালো: লে. জে. (অব.) মাহফুজুর রহমান

অভ্যন্তরীণ ও বাইরের চাপের ফলে একটি অনির্বাচিত সরকার সহজে নমনীয় হয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ওসমানী সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান। তাঁর মতে, যত তাড়াতাড়ি একটি নির্বাচিত সরকার আসবে, ততই ভালো। মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, একটা অনির্বাচিত সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বাইরের চাপের দ্বারা সহজে নমনীয় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আজ শনিবার ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন লে. জে. (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান। বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এ গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়।

দেশের নিরাপত্তা সংকটের কথা উল্লেখ করে মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রথাগত ও প্রথার বাইরের কিছু নিরাপত্তা উদ্বেগ আছে, বিশেষ করে আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত এলাকায়। এ পর্যায়ে নিরাপত্তাসংক্রান্ত নীতিগত দিকনির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু একটি মধ্যবর্তী বা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে এ ধরনের নীতিগত দিকনির্দেশনা দেওয়া কঠিন হয়ে যায়।’

গত দেড় দশকের কথা উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, এই সময়ে সেনাবাহিনীর রাজনীতিকরণ হয়েছে। এর ফলে এ রকম সেনাবাহিনী কার্যকর যুদ্ধযন্ত্র হিসেবে কাজ করতে পারে না। তিনি বলেন, ‘সেই অবস্থা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই। সেনাবাহিনীও নিজেদের মৌলিক দায়িত্ব দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা—সে জায়গায় ফেরত যেতে চায়।’

সেনাবাহিনীর ‘মৌলিক প্রশিক্ষণ’ ও প্রস্তুতির জন্য তাঁদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়া দরকার উল্লেখ করে মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এই প্রস্তুতির মাধ্যমে আপনি আপনার প্রথাগত এবং অপ্রথাগত নিরাপত্তা হুমকির বিরুদ্ধে প্রস্তুত হচ্ছেন এবং একটি বার্তা তৈরি করছেন, যার মাধ্যমে অন্যকে বোঝানো যায় যে সেনাবাহিনী একটি জাতীয় জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত। সেই কারণে সেনাবাহিনী হয়তো দ্রুত ব্যারাকে ফিরে যাবে, সেটাই সমুচিত। আর সামরিক বাহিনী যদি অনেক দিন বাইরে থাকে, তাহলে কিছু শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা দেখা দেয়।’

জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদানের প্রসঙ্গ টেনে মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী এখন বেশ কয়েক বছর ধরে পৃথিবীতে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সেনা পাঠানো দেশের মধ্যে অন্যতম। সেখানে গিয়ে আমরা যে প্রাথমিক দায়িত্ব নিই, সেটা হলো সেই দেশের সংঘাত সমাধানে সহায়তা করা; সেখানে গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, নির্বাচন যেন হয়—সেটা পর্যবেক্ষণ করা এবং নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সাহায্য করা।’

মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এখন প্রশ্ন আসে, আমার নিজের দেশেই তো গণতন্ত্র সঠিকভাবে নেই। আমার নিজের দেশেই সঠিকভাবে নির্বাচন হচ্ছে না ১৫–১৭ বছর ধরে। আর আমি অন্য দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যাচ্ছি। এখানে একটা বৈপরীত্য বা বৈধতার প্রশ্ন আছে। সেটাও খেয়াল রাখা দরকার।’

দেশের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট খাতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নিরাপত্তা খাতে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। এ নিয়ে অনেক দিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। যদি তা না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় চায় নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রেখে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে—যেমন গত ১৫ বছরে হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা থাকবে।’

সংস্কারের ইতিবাচক দিকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটি উন্নয়নশীল দেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। সুতরাং আমাদের উচিত সংস্কারের এই ইতিবাচক দিকটাকে কাজে লাগানো।’

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও এ কে আজাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা প্রমুখ।