
কোনো প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা পর্ষদ।
স্বতন্ত্র পরিচালক হতে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
ব্র্যাক, আশা, টিএমএসএস, বুরো বাংলাদেশ, উদ্দীপনসহ বড় আকারের ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বা এনজিওগুলো এত দিন নিজেদের পর্ষদের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়ে আসছিল। সরকার এখন এসব এনজিওতে দুজন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার বিধান করতে যাচ্ছে।
ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদে সদস্যসংখ্যা এখন ৫ থেকে ১০। নতুন বিধান কার্যকর হলে বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে হবে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক।
কোনো প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা পর্ষদ। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। সেখানে স্বতন্ত্র পরিচালকেরা মাসে ৫০ হাজার টাকা করে ভাতা পান। আর প্রতিটি সভায় অংশ নেওয়ার জন্য পান ১০ হাজার টাকা। যদিও ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে স্বতন্ত্র পরিচালকেরা কী ভূমিকা রাখতে পেরেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, স্বতন্ত্র পরিচালকেরা অনিয়মের সহযোগী হয়েছেন।
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান এত দিন ছিল না। সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে প্রথমবারের স্বতন্ত্র পরিচালক বসবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে। এসব প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও নামে ডাকা হয়। তবে এগুলো মূলত মাইক্রোফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশন বা এমএফআই। তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। এর চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
কোনো প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা পর্ষদ। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান এত দিন ছিল না। সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে প্রথমবারের স্বতন্ত্র পরিচালক বসবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে।
এমআরএ সূত্রে জানা গেছে, তারা ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের শর্তসংবলিত আইন ও বিধিমালার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে। সেখানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগসহ নানা বিষয় রয়েছে। মূলত এমআরএর ক্ষমতা বাড়ানো ও ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর কথাই রয়েছে খসড়ায়। এ ধরনের নিয়মকানুন করার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে সালেহউদ্দিন আহমেদ এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। জানতে চাইলে গত রাতে তিনি মুঠোফোনে একটি খুদে বার্তা পাঠিয়ে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি এখন মন্তব্য করতে পারছেন না। এমআরএ ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রতি কী আলোচনা করেছে, তা তাঁকে জানতে হবে।
এদিকে এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাস্তব অবস্থা অনুধাবন ছাড়াই এ ধরনের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর এর মাধ্যমে সরকারি হস্তক্ষেপ আরও প্রকট হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহজাত কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এমআরএ সূত্রে জানা গেছে, তারা ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের শর্তসংবলিত আইন ও বিধিমালার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে। সেখানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগসহ নানা বিষয় রয়েছে। মূলত এমআরএর ক্ষমতা বাড়ানো ও ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর কথাই রয়েছে খসড়ায়।
এমআরএর ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটি ৭২৪টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দিয়েছে, যাদের মোট গ্রাহক ৪ কোটি ১৫ লাখ। এ খাতে মোট ২ লাখ ২৩ হাজার লোক কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দিয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। ক্ষুদ্রঋণ খাতে আদায় না হওয়া ঋণের হার খুবই কম।
এমআরএর খসড়া বিধি বলছে, স্বতন্ত্র পরিচালক বসবে শুধু মাঝারি ও প্রতিষ্ঠানে। অর্থাৎ যাদের বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ৫০ কোটি টাকার বেশি। কয়টি প্রতিষ্ঠানের ৫০ কোটি টাকার বেশি বিতরণকৃত ঋণ আছে, সে হিসাব এমআরএর কাছে নেই। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের ধারণা, দেশে ১০০টির মতো প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।
এমআরএর প্রস্তাব হচ্ছে, দুজন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের জন্য ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো চারজন করে নাম এমআরএর কাছে পাঠাবে। এর মধ্যে দুজনের ব্যাপারে অনাপত্তিপত্র দেবে এমআরএ। তবে শর্ত আছে কিছু। প্রথম শর্ত হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের কোনো পর্ষদ সদস্যের সঙ্গে পিতা-মাতা, সহোদর ভাই-বোন, পুত্র-কন্যা, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক থাকা কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র সদস্য হতে পারবেন না।
বাস্তব অবস্থা অনুধাবন ছাড়াই এ ধরনের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর এর মাধ্যমে সরকারি হস্তক্ষেপ আরও প্রকট হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহজাত কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
কেন এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষুদ্রঋণ খাতটিকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য এমআরএর পর্ষদ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যার অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচালকের বিষয়টি এসেছে। স্বতন্ত্র পরিচালক প্রতিষ্ঠানগুলোই নিয়োগ দেবে। এমআরএ শুধু প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নিয়মকানুন ঠিক করে দেবে। কেউ যদি পরপর কয়েকবার অযোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করে, সরকার তখন বাধ্য হয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেবে। সরকারের হস্তক্ষেপের প্রশ্ন এখানে অবান্তর।
অধ্যাপক হেলাল আরও বলেন, ব্যাংকের মতো ক্ষুদ্রঋণ খাতে একধরনের পরিবারতন্ত্র জেঁকে বসেছে। সরকার এই খাত করমুক্ত রেখেছে প্রান্তিক মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে অনেকে অযৌক্তিকভাবে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন। এসব কাজ আর চলতে দেওয়া ঠিক হবে না।
এমআরএর এ উদ্যোগ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে ক্ষুদ্র অর্থায়ন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একমাত্র নেটওয়ার্কিং সংস্থা ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিডিএফ)। উদ্যোগটিকে ‘ক্ষতিকর, বেআইনি ও অপ্রয়োজনীয়’ আখ্যা দিয়ে ফোরামটি ৬ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে তাঁর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
এমআরএর খসড়া বিধি বলছে, স্বতন্ত্র পরিচালক বসবে শুধু মাঝারি ও প্রতিষ্ঠানে। অর্থাৎ যাদের বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ৫০ কোটি টাকার বেশি। কয়টি প্রতিষ্ঠানের ৫০ কোটি টাকার বেশি বিতরণকৃত ঋণ আছে, সে হিসাব এমআরএর কাছে নেই।
এদিকে উদ্যোগটি হুবহু বাস্তবায়ন না করার দাবি জানিয়ে এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের কাছে আলাদা আবেদন করেছে ক্ষুদ্র ঋণদাতা এনজিওগুলোর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব অল্টারনেটিভ ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস (ইনাফি)।
ইনাফির সদস্যদেশের অন্যতম ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে এমআরএ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ ও সিইও নিয়োগে এমআরএর অনুমোদনের যে শর্ত আসছে, তা ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’ তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ যে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হবে না, তা আমরা কীভাবে বুঝব? ব্যাংক খাতে এত বছর তো ধ্বংসলীলা হয়েছে। এমআরএর এ উদ্যোগ এখন ভালো থাকা ক্ষুদ্রঋণ খাতের জন্যও অশুভ বার্তা বয়ে আনতে পারে।’
ক্ষুদ্রঋণ খাতটিকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য এমআরএর পর্ষদ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যার অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচালকের বিষয়টি এসেছে। স্বতন্ত্র পরিচালক প্রতিষ্ঠানগুলোই নিয়োগ দেবে। এমআরএ শুধু প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নিয়মকানুন ঠিক করে দেবে।মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান
খসড়া বিধি অনুযায়ী, স্বতন্ত্র পরিচালক হতে গেলে কাউকে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ বা স্বশাসিত সংস্থায় প্রথম শ্রেণির চাকরির কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রাধান্য দেওয়া হবে তাঁদেরই, যাঁদের আর্থিক খাতের কাজের অভিজ্ঞতা থাকবে। বয়স হতে হবে ৩৫ থেকে ৭০ বছর। তবে একই সময়ে একই ব্যক্তি একাধিক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর মাধ্যমে মূলত সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদে বসানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অবসরের পর তাঁদের পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে সরকারি কর্মকর্তারা পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। ঋণের নামে লুটপাট তাঁরা ঠেকাতে পারেননি। বরং ব্যাংকগুলো থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কারও কারও বিরুদ্ধে।
এমআরএর এ উদ্যোগ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে ক্ষুদ্র অর্থায়ন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একমাত্র নেটওয়ার্কিং সংস্থা ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিডিএফ)। উদ্যোগটিকে ‘ক্ষতিকর, বেআইনি ও অপ্রয়োজনীয়’ আখ্যা দিয়ে ফোরামটি ৬ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে তাঁর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
এদিকে এমআরএ বলছে, কোনো ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তি, জালিয়াতি বা আর্থিক অপরাধে জড়িত ব্যক্তি এবং নিজে বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ব্যাংকে খেলাপি হয়ে গেছে, এমন কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। আর ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ সভায় স্বতন্ত্র পরিচালকদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। পর্ষদের চলমান মেয়াদে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ পাবেন, তবে এমআরএ চাইলে তাঁকে পরের এক মেয়াদের জন্যও নিয়োগ দিতে পারবে।
ইনাফি বলছে, সাধারণ সদস্যদের মাধ্যমে নির্বাচিত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদ সদস্যরা বর্তমানে স্বতন্ত্রই। নতুন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বতন্ত্র অরাজনৈতিক চরিত্রের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ পেলে রাজনৈতিক প্রভাবের পাশাপাশি অযাচিত তদবির অর্থাৎ চাকরি, গাড়ি ব্যবহার, ব্যক্তি সুবিধার জন্য সামাজিক খাতে ব্যয়, নিজের পছন্দের ব্যাংকে আমানত রাখা ইত্যাদি তদবির বেড়ে যেতে পারে।
সিডিএফের চেয়ারম্যান ও পপির নির্বাহী সচিব মুরশেদ আলম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, আইনের শিকল নয়, দরকার হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্যমী করে গড়ে তোলার নীতি অবলম্বন করা।
কিছু ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে এমআরএ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ ও সিইও নিয়োগে এমআরএর অনুমোদনের যে শর্ত আসছে, তা ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’আসিফ সালেহ, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক
বিদ্যমান এমআরএ আইন, ২০০৬ অনুযায়ী প্রতিটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ একজন করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বা নির্বাহী পরিচালক (ইডি) নিয়োগ করে থাকে। এ নিয়োগে নতুন শর্ত যুক্ত করে এমআরএ বলছে, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো সিইও বা ইডি নিয়োগ করে এক মাসের মধ্যে এমআরএর অনাপত্তিপত্র নেবে। তবে ৪০ বছরের কম বয়সী কেউ সিইও হতে পারবেন না এবং ৬৫ বছর বয়স হয়ে গেলে কেউ সিইও পদে থাকতে পারবেন না।
এমআরএ বলছে, সিইও বা ইডি নিয়োগ পাবেন পাঁচ বছরের জন্য। তবে তিনি পুনর্নিয়োগ পেতে পারেন। সিইওর দায়িত্ব পালনকালে তিনি অন্য কোনো ব্যবসায় বা পেশায় নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। পর্ষদে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যও থাকতে পারবে না।
এ ছাড়া সিইও হতে গেলে কমপক্ষে পাঁচ বছরের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের অভিজ্ঞতাসহ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাঁকে হতে হবে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স, ব্যাংকিং, ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বিষয়ে উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে গণ্য হবে। বর্তমানে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি থাকবে তাঁর। আর কর্মক্ষম থাকা সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠাতারা প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারবেন ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত।
সিডিএফ এসব বিষয়ে লিখিত মতামত দিয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে জানিয়েছে, সিইও নিয়োগের পর আবার এমআরএর অনাপত্তি নেওয়ার প্রস্তাব অযৌক্তিক। সিইও হওয়ার জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হওয়ারও দরকার নেই, স্নাতক পাসই যথেষ্ট।
এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন গত রাতে দাবি করেন, স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া অন্য বিষয়গুলোর ব্যাপারে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মত হয়েছে। তবে একাধিক এনজিও বলছে, সব বিষয়ে তারা সম্মতি দেয়নি।
কোনোভাবেই ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বকীয়তা নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না। আবার এগুলোতে সুশাসন, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতাও দরকার। অন্য খাতের মতো এখানেও অনিয়ম-দুর্নীতি আছে। ফলে দরকার হচ্ছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কঠোর করার নীতি প্রণয়ন। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের মডেল যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে ক্ষুদ্রঋণ খাতে একই মডেল কতটা কাজে দেবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।ইফতেখারুজ্জামান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকেরা মুনাফার ভাগ পান না। তাঁরা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকও নন। অন্যদিকে ব্যাংকের পরিচালকেরা মূলত ব্যাংকের মালিক (স্বতন্ত্র পরিচালক বাদে)। তাঁরা মুনাফার ভাগ পান। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারে না। ব্যাংক চলে মানুষের আমানতের টাকায়।
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ব্যাংক ও এনজিওর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার ধরন একই বিবেচনা করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের কথা বলছে এমআরএ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কোনোভাবেই ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বকীয়তা নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না। আবার এগুলোতে সুশাসন, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতাও দরকার। অন্য খাতের মতো এখানেও অনিয়ম-দুর্নীতি আছে। ফলে দরকার হচ্ছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কঠোর করার নীতি প্রণয়ন। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের মডেল যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে ক্ষুদ্রঋণ খাতে একই মডেল কতটা কাজে দেবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ব্যবস্থা দীর্ঘ মেয়াদে দলীয় রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব এবং এ খাতের ওপর নিয়ন্ত্রণের জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতার ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।