উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে অনেক বড় আয়তনের প্লট পাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক লাখ বর্গমিটারের প্লট দেওয়া যাবে। ২০১৭ সালের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ভবন নির্মাণ) বিধি অনুযায়ী প্লটের আকার ছিল চার হাজার বর্গমিটার। বিধি সংশোধন করে প্লটের আকার ২৪ গুণ পর্যন্ত বড় করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ২০ জানুয়ারি বিধি সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে নতুন একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, মোট জমির ৭০ শতাংশ শিল্প প্লট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এত দিন এ বিষয়ে কিছু বলা ছিল না।
এত দিন প্লটের মোট আয়তনের ৫০ শতাংশে কারখানা ভবন, পাওয়ার হাউস ইত্যাদি নির্মাণের সুযোগ ছিল। বিদ্যমান বিধির ১১ ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে, কারখানা ভবন ও পাওয়ার হাউসের জায়গা ৫০ শতাংশের বদলে হবে ৬০ শতাংশ। আর ৩০ শতাংশের মধ্যে ছিল গাড়ি চলাচলের পথ, খোলা পার্কিং, সাইকেল স্ট্যান্ড, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ভূগর্ভস্থ পানির ট্যাংক, সেপটিক ট্যাংক, গুদামঘর, বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) ইত্যাদি নির্মাণের বাধ্যবাধকতা। সেটি কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। আগে একটি গাড়ির জন্য ৮০০ বর্গমিটার জায়গা বরাদ্দ ছিল, তা কমিয়ে এখন ২০০ বর্গমিটার করা হয়েছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, সর্বনিম্ন আকার নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায়। কিন্তু সর্বোচ্চ আকার উন্মুক্ত রাখার দরকার ছিল। কারণ, একটা বড় কারখানা করতে জায়গা বেশি লাগে।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। তখন বলা হয়, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে, সেখান থেকে চার হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থের পণ্য রপ্তানি হবে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও পরিচালনায় প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’।
তবে গত এক দশকের বেশি সময়ে বেসরকারি কয়েকটি ছাড়া দেশে সফল কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠেনি। বেজা সূত্রে জানা গেছে, দেশে উৎপাদন ও নির্মাণ পর্যায়ে বর্তমানে ১৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে, যেগুলোয় ১২২টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে। এসব অঞ্চলে ৪৫ হাজার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় অন্তত ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য, সচিব, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কয়েক দিন আগে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার স্বল্পমেয়াদি ও সময় নির্দিষ্ট করে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি একেবারে বাদ দেওয়া হচ্ছে না এবং তা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।