বাজারদর

দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আলু আমদানির অনুমতি

বাজারে আলু-পেঁয়াজের পাশাপাশি সবজির দামও বাড়তি। মাছ-মাংসের বাজার আগে থেকেই চড়া। 

আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার
ফাইল ছবি

বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অবশেষে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আলু আমদানিতে আগ্রহী ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে। এর আগে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে প্রায় ছয় সপ্তাহ পার হলেও দেশে কোনো ডিম আসেনি। এরই মধ্যে বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আরও এক দফা বেড়েছে।

গতকাল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলু আমদানির সিদ্ধান্তের কথা জানায়। মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজারে আলুর সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে সরকার আলু আমদানির এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগ্রহী আমদানিকারকদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার অনুরোধ জানানো হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

দামের কারণে ভোক্তারা কষ্টে আছেন, তাই আলু আমদানি করলে ভোক্তাদের সুবিধা হবে। তবে তাতে ডলারের ওপর চাপ বাড়বে।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, সভাপতি, বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন 

আলু হলো দ্বিতীয় নিত্যপণ্য, সাম্প্রতিক সময়ে যা আমদানি করতে সরকার সিদ্ধান্ত নিল। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সরকার প্রথম ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নিলেও দেশে এখনো ডিম আমদানি হয়নি। অন্যদিকে আর মাসখানেক পরই দেশের বাজারে নতুন আলু আসতে শুরু করবে। সুতরাং সরকারি সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আলু আমদানির এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর করা যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

দেড় মাসের বেশি সময় আগে সরকার যে তিনটি পণ্যের মূল্য বেঁধে দিয়েছিল, তার একটি আলু। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তখন খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় নির্ধারণ করে দিলেও তা কার্যকর হয়নি। বাজারে অভিযান চালিয়েও দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। এরপর গত মাসের শেষের দিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সীমিত পরিসরে আলু আমদানির সুপারিশ করে। কিন্তু তাতে কৃষি মন্ত্রণালয় সায় দেয়নি। তবে গত তিন দিনে আলুর দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়েছে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী মনে করেন, আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দামের কারণে ভোক্তারা কষ্টে আছেন, তাই আলু আমদানি করলে ভোক্তাদের সুবিধা হবে। তবে তাতে ডলারের ওপর চাপ বাড়বে। এই অবস্থায় আলুর আমদানি না করে বরং বাজারে তদারকি আরও বাড়িয়ে দাম কমানোর চেষ্টা করা যেত বলে মনে করেন তিনি।

ডিম আমদানির সরকারি উদ্যোগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি। সরকার চার কোটি ডিম আমদানির প্রথম অনুমতি দেয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর। পরে পর্যায়ক্রমে সব মিলিয়ে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু দেশে একটি ডিমও আমদানি হয়নি, ডিমের দামও কমেনি; বরং বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম বেড়ে প্রতি ডজন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের দাম নিয়ে কথা হচ্ছিল নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের ডিম ব্যবসায়ী শাহ আলমের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বাজারে ডিমের দাম একটা জায়গায় এসে আটকে গেছে। আপাতত এই দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখছি না।’

ভারতের কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য প্রতি টন ৮০০ ডলারে নির্ধারণ করে দেওয়ার পর রোববারই দেশের বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল। দাম বাড়ার সেই ধারা গতকালও অব্যাহত ছিল। এদিন পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে আরও ১০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম সরকার ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় নির্ধারণ করে দিয়েছিল। রোববার ঢাকার বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। গতকাল সেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের দামও দ্রুত বাড়ছে।

অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় শনিবার পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দেয়। এর আগে দিল্লির সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক বাড়িয়েছিল। যেহেতু বাংলাদেশ বেশির ভাগ পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করে, তাই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে ভারতের নানামুখী পদক্ষেপের প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। গতকাল আমদানি করা এই পেঁয়াজের দাম পড়েছে প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, এক দিন আগেও যা ১০ টাকা কম ছিল।

ঢাকার শ্যামবাজারের আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার ফলেই দেশের বাজারে এর দাম বেড়েছে।

বাজারে আলু-পেঁয়াজের পাশাপাশি সবজির দামও বাড়তি। দুই-একটি সবজির দাম কমলেও অধিকাংশ সবজির প্রতি কেজির দাম ৮০ টাকার ওপরে। মাছ-মাংসের বাজার আগে থেকেই চড়া।

রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের ক্রেতা মাসুদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো পণ্যের দাম কমতে শুনি না। সব পণ্যের দামই বাড়তি। বাজারে কোনো পণ্যের দরদাম করতে আর সাহস পাই না।’