২০২১ সালে চীনে ‘৯৯৬’ সংস্কৃতিকে অবৈধ ঘোষণা করলেও বাস্তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো তা অনুসরণ করে।
২০২১ সালে চীনে ‘৯৯৬’ সংস্কৃতিকে অবৈধ ঘোষণা করলেও বাস্তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো তা অনুসরণ করে।

দৈনিক ১২ ঘণ্টা, সপ্তাহে ছয় দিন কাজের দিকেই কি যাচ্ছে যুক্তরাজ্য

একজন মানুষের দৈনিক কতক্ষণ বা সপ্তাহে কত ঘণ্টা কাজ করা উচিত? আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নীতি অনুযায়ী সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা। ওভারটাইমসহ তা হতে পারে সর্বোচ্চ ৬০ ঘণ্টা। কিন্তু কেমন হয় যদি দৈনিক ১২ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৭২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়? কাজের এমন নীতি আগে বহাল ছিল এবং তা হয়তো আবারও ফিরে আসছে। জানা যাক এই ’৯৯৬’ কর্মসংস্কৃতি ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা সম্পর্কে।

‘৯৯৬’ কী?

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা, সপ্তাহে ৬ দিন কাজ; এটিই পরিচিত ‘৯৯৬’ হিসেবে। ২০১০ সালের দিকে চীনের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু হওয়া এই ‘৯৯৬’ কর্মসংস্কৃতি সব সময়ই ছিল বিতর্কিত। ২০১৯ সালে গিটহাবের মাধ্যমে ‘অ্যান্টি-৯৯৬’ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর, চীনের প্রযুক্তি খাতে এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। ২০২১ সালে চীনের সর্বোচ্চ আদালত ৯৯৬ সংস্কৃতিকে অবৈধ ঘোষণা করলেও বাস্তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো এই সংস্কৃতি অনুসরণ করে। এই প্রবণতা যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে সিলিকন ভ্যালিতে। এখন প্রশ্ন উঠছে, যুক্তরাজ্য কি এর কবলে পড়তে পারে?

যুক্তরাষ্ট্রে স্বচ্ছতার সঙ্গে গ্রহণ

যুক্তরাষ্ট্রে শ্রম আইন অনেকটাই নিয়োগকর্তার নিয়ন্ত্রণে। ফলে সেখানে ৯৯৬ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নতুন এআই ও টেলিহেলথ স্টার্টআপগুলোয় কমপক্ষে ৭০ ঘণ্টার কাজ প্রত্যাশা করা হয়। কেউ যদি স্বেচ্ছায় আরও বেশি সময় দিতে রাজি হন, তাঁদের জন্য বেতন ও শেয়ার বৃদ্ধি করা হয়।

আইনি ফাঁক ও উদ্যোক্তাদের প্ররোচনা

যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কোনো কর্মঘণ্টার বৈধ সীমা নেই। ২০২২ সালে ইলন মাস্ক টুইটার কর্মীদের জানিয়েছিলেন, ‘চরম কঠোর’ কর্মসংস্কৃতিতে অংশ নিতে হবে। এর পর থেকে কিছু ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট ও স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা ৯৯৬ ধারার কাজকে ‘বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার একমাত্র উপায়’ হিসেবে প্রচার করছেন।

যুক্তরাজ্য যা হতে পারে

ব্রিটেনে সপ্তাহে গড়ে ৪৮ ঘণ্টার সীমা থাকলেও একটি বড় ফাঁক রয়েছে। তা হলো, কর্মীরা স্বেচ্ছায় চুক্তি সই করলে সীমার বাইরে কাজ করতে পারেন। এটি কিছু প্রতিষ্ঠানকে ইউরোপীয় মানদণ্ডের বাইরে যেতে উদ্বুদ্ধ করছে। ইতিমধ্যেই লন্ডনের কিছু স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতা সাত দিন কাজের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বিশ্বের সেরা প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে এটি অপরিহার্য।

৯৯৬-এর প্রসার স্পষ্ট করছে যুক্তরাজ্য কি কর্ম ও জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করবে, না সিলিকন ভ্যালির অনুপ্রেরণায় এই ধ্বংসাত্মক সংস্কৃতি গ্রহণ করবে

মানসিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

এমন বক্তব্য সাম্প্রতিক হাইব্রিড কর্মসংস্কৃতি, ফ্লেক্সিবল ঘণ্টা ও চার দিনের কর্মসপ্তাহের ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রযুক্তি যদি কাজকে সহজ করার জন্য ব্যবহার করা যায়, তবে কর্মীদের অতিরিক্ত চাপ দেওয়া তা নষ্ট করছে। কাজের চাপজনিত মানসিক সমস্যা ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বছরে আনুমানিক ৫৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতি করছে।

স্বচ্ছতা ও প্রণোদনা

কিছু কোম্পানি আবার এ বিষয়ে অনেক স্বচ্ছ। উদাহরণ হিসেবে, লং আইল্যান্ডের এআই স্টার্টআপ ‘রিলা’ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, যাঁরা ৯৯৬-এ রাজি নন, তাঁদের আবেদন করার দরকার নেই। আর ‘ফেলা অ্যান্ড ডেলিলাহ’ নামের টেলিহেলথ কোম্পানি কর্মীদের স্বেচ্ছায় ৯৯৬-এ অংশগ্রহণের জন্য বেতন ও শেয়ার বাড়িয়ে দিয়েছে।

কর্ম-জীবন ভারসাম্য বনাম উচ্চাকাঙ্ক্ষা

৯৯৬-এর প্রসার স্পষ্ট করছে যুক্তরাজ্য কি কর্ম ও জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করবে, নাকি সিলিকন ভ্যালির অনুপ্রেরণায় এই ধ্বংসাত্মক সংস্কৃতি গ্রহণ করবে? নামকরণ, বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা যত বেশি, এই প্রবণতা তত বেশি বৈধতা পাবে। একবার স্বাভাবিক হয়ে গেলে তা প্রতিরোধ করা কঠিন। তথ্যসূত্র : ইন্ডিপেনডেন্ট