
গ্রিসের পার্লামেন্টে পাস হয়েছে বিতর্কিত একটি শ্রম আইন। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে কর্মীদের দৈনিক ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের বিধান রয়েছে এই আইনে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও ধর্মঘট চলছে। সরকার দাবি করছে, এই আইন গ্রিসের শ্রমবাজারকে আধুনিকায়নের অংশ। তবে বামপন্থী বিরোধী দল সিরিজা এটিকে ‘আইনগত বিকৃতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
নতুন আইনের অধীনে বার্ষিক অতিরিক্ত কাজের সময় ১৫০ ঘণ্টায় সীমিত থাকবে। মূল ৪০ ঘণ্টার সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা অপরিবর্তিত থাকলেও কর্মীদের ইচ্ছানুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের সুযোগ থাকবে। তবে এটি বছরে সর্বোচ্চ ৩৭ দিন পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে এবং শুধু বেসরকারি খাতে কার্যকর হবে।
বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছে ক্ষমতাসীন কেন্দ্র-ডানপন্থী নিউ ডেমোক্রেসি দল আর বিরোধিতা করেছে কেন্দ্র-বাম পিএএসওকে দল। অন্যদিকে সিরিজা ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকে।
আইনটির বিরুদ্ধে শ্রমিক সংগঠনগুলো চলতি মাসে দুটি সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে, যা জনপরিবহন ও সরকারি সেবা কার্যত অচল করে দেয়। শ্রমমন্ত্রী নিকিকেরামুইস বলেন, এই আইন আধুনিক শ্রমবাজারের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং কর্মীরা চাইলে অতিরিক্ত সময় কাজ করে ৪০ শতাংশ বেশি মজুরি পেতে পারবেন। পাশাপাশি, কেউ অতিরিক্ত কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না।
সরকার আরও জানিয়েছে, এই আইন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শ্রম সময়সংক্রান্ত বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইইউ নিয়ম অনুযায়ী গড়ে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা (অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিকসহ) কাজ করা যেতে পারে, যা ১২ মাসের ভিত্তিতে নমনীয়ভাবে হিসাব করা হয়।
বিরোধী দলগুলোর দাবি, এই আইন শ্রমিক অধিকারকে দুর্বল করবে এবং শ্রমিকদের ‘শ্রমিকদের মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে’। তারা বলছে, ইউরোপে ইতিমধ্যে গ্রিক শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি সময় কাজ করেও তুলনামূলকভাবে কম মজুরি পায় এবং টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করে।
সরকারি কর্মচারী ইউনিয়ন এডিইডি জানিয়েছে, ‘নমনীয় কর্মঘণ্টা’ বাস্তবে ৮ ঘণ্টার কর্মদিবস বিলুপ্ত করবে, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের ক্ষতি করবে এবং শ্রমিক শোষণকে বৈধতা দেবে।
এর আগে ২০২৪ সালে গ্রিসে কিছু শিল্প খাতে ছয় দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করা হয়েছিল। নতুন নিয়ম অনুযায়ী কর্মীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারছেন, যা পূর্বের ৪০ ঘণ্টা থেকে বাড়ানো হয়েছে।
সমালোচকেরা বলছেন, নতুন আইন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নামে শ্রমিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে। তবে সরকার দাবি করছে, এতে কর্মীদের উপার্জনের সুযোগ বাড়বে এবং একাধিক পার্ট-টাইম চাকরির পরিবর্তে এক জায়গায় কাজ করে বেশি আয় করা সম্ভব হবে।