এসএসসি পরীক্ষার্থী
এসএসসি পরীক্ষার্থী

এসএসসি পরীক্ষা–২০২৫

পরীক্ষার হলে কীভাবে পেশাদারি মনোভাব বজায় রাখবে

একজন শিক্ষার্থীর পরবর্তী শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত জীবনের মাইলফলক হিসেবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার গুরুত্ব অপরসীম। তাই পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করতে পড়াশোনার মনোযোগিতার পাশাপাশি পরীক্ষার কক্ষে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখা ও সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা দেওয়া অপরিহার্য। পরীক্ষার কক্ষে শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্বিক চাপ বেড়ে যায়, তাই অতিরিক্ত মানসিক চাপে কিছু নিয়ম মেনে পরীক্ষা দিলে সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে প্রস্তুতি

পরীক্ষার কক্ষে একজন শিক্ষার্থীর সঠিক সময়ে পৌঁছানো জরুরি। কারণ, দেরি করে পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ করলে মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, যা শিক্ষার্থীর ফলাফলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই পরীক্ষার দিন যথাসময়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রয়োজনীয় উপকরণসমুহ (প্রবেশপত্র, পেনসিল, অনুমোদিত ক্যালকুলেটর ইত্যাদি) নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রের উদ্দেশে যাত্রা করতে হবে, যেন যথাসময়ে পরীক্ষার কক্ষে পৌঁছানো যায়।

পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের পর প্রথম কাজ

পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের পর প্রথম কাজ হলো মানসিক স্থিরতা অর্জন করা। তাই পরীক্ষার হলে প্রবেশের পর প্রথমে নিজ আসনে শান্ত হয়ে বসে প্রয়োজনীয় আলো–বাতাস আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, মানসিক অস্থিরতা পরীক্ষার ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই পরীক্ষার হলে অতিরিক্ত অস্থির না হয়ে শান্ত থাকতে চেষ্টা করবে।

প্রশ্নপত্র পড়ার সময়

পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর প্রশ্নপত্র পাওয়ামাত্র তা মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে, যাতে করে একজন শিক্ষার্থী প্রশ্নটি সঠিকভাবে বুঝতে পারে। প্রয়োজনে একটি প্রশ্ন একাধিকবার পড়তে হবে। এতে করে প্রশ্নের সহজ বা কঠিনতার মান নির্ধারণ করা যায়। এরপর কোন প্রশ্নটির জন্য বেশি সময় দেওয়া উচিত বা কোন প্রশ্নটির জন্য কম সময় দিতে হবে, তা বুঝে সময় ভাগ করুন।

সময় ভাগ করা

যেহেতু এসএসসি পরীক্ষায় সাধারণত অনেকগুলো প্রশ্ন থাকে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তা সমাপ্ত করতে হয়, তাই সময় বিভাজন করে প্রশ্নের উত্তর দিলে সব প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর প্রদান করা সম্ভবপর হয়। সময় বিভাজনের ক্ষেত্রে সময়সীমার মধ্যে প্রতিটি প্রশ্নের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় প্রদান করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কঠিন প্রশ্নগুলোর উত্তর পরে করুন, তবে যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকে, তবে সেটি ছেড়ে দিন এবং অন্য প্রশ্নে চলে যান এবং উত্তরগুলো যাচাই করার জন্য পরীক্ষার শেষ ১৫-২০ মিনিট বরাদ্দ রাখতে হয়।

উত্তর লেখার কৌশল

পরীক্ষার উত্তরে পরিষ্কার এবং সংক্ষিপ্তভাবে লেখা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যেটি জানেন, সেটা খুব পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করুন। কখনোই খুব বড় বা জটিল উত্তর লেখার চেষ্টা করবেন না, কারণ এতে সময় অপচয় হতে পারে। পরীক্ষার কক্ষে সবার প্রথম কাজ হলো আত্মবিশ্বাস তৈরি করা। সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে শুরু করুন, কারণ এতে আপনি মনের মধ্যে একধরনের আস্থা পাবেন এবং পরে কঠিন প্রশ্নের সঙ্গে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন। তাই সহজ প্রশ্নে ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে সঠিক উত্তর দিন এবং আপনার আত্মবিশ্বাস তৈরি করুন। প্রতিটি প্রশ্নের সঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া থাকে, যেমন ‘বর্ণনা করুন’, ‘বিশ্লেষণ করুন’, ‘উদাহরণ দিন’ ইত্যাদি। এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে হাতের লেখা স্পষ্ট ও পাঠযোগ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকে, সে ক্ষেত্রে অন্য প্রশ্নে চলে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রশ্নের ধারাবাহিকতা ও যথার্থতা হলো একটি আদর্শ উত্তরের পূর্বশর্ত। তাই প্রশ্নসমূহ শান্তভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর প্রদান করে সময়মতো পরীক্ষা শেষ করতে হবে।

পরীক্ষার শেষে উত্তর যাচাই করা

পরীক্ষার শেষের দিকে, আপনার লিখিত উত্তরগুলো পুনরায় দেখে নিন। কিছু উত্তর ভুল হতে পারে বা অসম্পূর্ণ থাকতে পারে। শেষের কয়েক মিনিটে যদি কোনো ভুল বা অসম্পূর্ণ উত্তর থাকে, তবে তা সংশোধন করুন। তবে উত্তরে অতিরিক্ত কিছু লেখার চেষ্টা করবেন না, যেহেতু সময় কম থাকে এবং এটি আপনার মূল উত্তরকে প্রভাবিত করতে পারে।

উপসংহার

এসএসসি পরীক্ষার কক্ষে সফল হতে হলে, শুধু পড়াশোনা বা প্রস্তুতি নয় বরং সঠিক মানসিকতা, সময় ব্যবস্থাপনা এবং পরীক্ষার কৌশলগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা চলাকালীন কিছু মনস্তাত্ত্বিক চাপ ও অস্থিরতা থাকতেই পারে, তবে সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। পরীক্ষার কক্ষে সঠিক মনোভাব এবং পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবে।

লেখক: মো. রাসেল খান, সহকারী প্রধান শিক্ষক, তেতুলবাড়িয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নলছিটি, ঝালকাঠি।