নতুন একটি ভাষা শেখার ফলে শুধু যে শিক্ষা ও কাজের সুযোগ তৈরি হয় তা-ই নয়, বরং এর ফলে চিন্তার পরিধি বিস্তৃত হয়, তৈরি হয় নতুন বিনোদনের উৎসও। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নতুন ভাষা শেখার এই প্রক্রিয়ায় স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু শুরু করার পরও বেশ কিছু কারণে আমরা পরবর্তী সময়ে ভাষা শেখার প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যেতে পারি না বা ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি না। ফলে পছন্দের ভাষাটি আর শেখা হয়ে ওঠে না। জেনে নেওয়া যাক এমনই পাঁচটি বাধার কথা। বাধা কোথায়, তা জানা থাকলে বাধা পেরোনো সহজ হতে পারে।

আমরা যখন নতুন একটি ভাষা শেখার চেষ্টা করি, তখন আমাদের নিজস্ব গণ্ডি বা ‘কমফোর্ট জোন’ থেকে বের হয়ে আসি। ফলে কিছুটা অস্বস্তি কাজ করে। এই অস্বস্তি থেকে আসতে পারে হতাশা। কিন্তু একবার এই হতাশার ধাপটি কাটিয়ে উঠতে পারলে পুরো প্রক্রিয়াটি হয় বেশ আনন্দদায়ক। হতাশার এই পর্যায় থেকে বের হওয়ার জন্য প্রতিবার নিজেকে ছোট ছোট চ্যালেঞ্জ দেওয়া যেতে পারে। আর সেই চ্যালেঞ্জ পার হওয়ার পর ছোটখাটো পুরস্কারের ব্যবস্থাও থাকতেই পারে! ধরা যাক, আপনি জার্মান ভাষা শিখছেন। শুরুর দিকে আপনার লক্ষ্য হতে পারে জার্মানি বা অস্ট্রিয়ায় ব্যবহৃত ১০টি সাধারণ শব্দ বা বাক্যাংশ শিখে ফেলা। আবার আরবি শিখতে চাইলে আপনার শুরুর লক্ষ্য হতে পারে সেই ভাষার বর্ণমালা সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে শেখা।
শেখার পেছনে দৃঢ় কোনো উদ্দেশ্য না থাকলে প্রেরণার অভাব বা হতাশা পেয়ে বসতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভালো রিসোর্স বা কৌশল—কোনোটিই কাজে আসে না। তাই নতুন একটি ভাষা শেখার আগে ঠিক করুন, পৃথিবীর এত ভাষার মধ্যে কেন নির্দিষ্ট ভাষাটিই শিখতে চাচ্ছেন? আপনার মূল লক্ষ্য কি উচ্চশিক্ষা? নাকি কোনো নির্দিষ্ট দেশে অভিবাসী হওয়া? হতেই পারে বিদেশি ভাষায় লেখা সাহিত্য পাঠ আপনার নতুন ভাষা শেখার অনুপ্রেরণা। কেন শিখছি—নিজেকে এই প্রশ্ন করুন। ভাবুন, সেই ভাষায় চমৎকারভাবে কথা বলতে পারলে আপনার কেমন লাগবে। উদ্দেশ্য ঠিক করতে পারলে সামনে এগোনো সহজ হবে।
আমাদের দৈনন্দিন কাজ শেষ করার পর কোথাও গিয়ে নতুন ভাষা শেখার জন্য সময় বের করাটা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে প্রযুক্তি। এটি আপনার যাতায়াতের সময় বাঁচিয়ে দেবে। ডুয়োলিঙ্গো বা ইউটিউবের মতো ফ্রি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন, যোগ দিতে পারেন বিভিন্ন অনলাইন কোর্সেও।
অনেক সময় দেখা যায় নিয়মিত সময় দেওয়ার পরও আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কার্যকর সমাধান হতে পারে আপনি কী কী শব্দ বা ব্যাকরণ শিখছেন, তা নিয়মিত ভিত্তিতে নোটবুকে লিখে রাখা, বিভিন্ন ‘অনলাইন টেস্ট’ দিয়ে নিজেকে পরীক্ষা করা। আপনার প্রশিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নিন আপনার দুর্বলতা কোথায়। স্মার্টফোনে রেকর্ড করে কথা বলার দক্ষতা যাচাই করতে পারেন। কতটুকু শিখছেন, তা যদি আপনার কাছে স্পষ্ট হয়, তবে আশা করা যায়, তা আপনার দীর্ঘদিন শেখার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে সহায়তা করবে। আর নিয়মিত পরিশ্রম করাটা হয়ে যাবে আরও সহজ।
যেকোনো অভ্যাস গঠনের ক্ষেত্রে কারও কাছে জবাবদিহি থাকাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের লক্ষ্যে স্থির থাকতে সহায়তা করে। আপনি জবাবদিহি করতে পারেন যেকোনো বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা শিক্ষকের কাছে, যিনি আপনাকে নিয়মিত জিজ্ঞেস করবেন—কতটা শেখা হলো? যদি আপনার শেখার গতি কমে যায়, তাহলে যেন তিনি আপনাকে উৎসাহ দিতে পারেন কিংবা নতুন কৌশল বাতলে দিতে পারেন।
সূত্র: লাইফহ্যাক ডট ওআরজি