
শিক্ষার্থীসহ অন্য যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন, তাঁদের যে নতুন ফি দিতে হবে, সেটি আগামীকাল বুধবার থেকে। এই ফির নাম ‘ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি’। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনে পাস হওয়া ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ অনুযায়ী নতুন এই ফি চালু হয়েছে। সব নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসাধারী ব্যক্তিদের অর্থাৎ যাঁরা স্থায়ীভাবে নয়, সাময়িকভাবে যেমন ঘোরাঘুরি, পড়াশোনা করতে বা কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন, এই নতুন ফি তাঁদের দিতে হবে।
১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই ফি ২৫০ ডলার (৩০৪১৮ টাকা, ১ ডলার সমান ১২১ টাকা ধরে)। ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি চালুর সিদ্ধান্তে ভ্রমণ ও শিক্ষা খাতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, ইতিমধ্যে কঠোর ইমিগ্রেশন নীতির কারণে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
দেশটির গণমাধ্যম সিএনবিসির খবরে বলা হয়েছে, নতুন এই ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি মওকুফের কোনো সুযোগ নেই। সেক্রেটারি অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি চাইলে নতুন আরোপ করা ফি আরও বাড়াতে পারবে। ভবিষ্যতে এটি দেশটির মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মিলিয়ে বাড়ানো হবে। এই অর্থবছরের (১ অক্টোবর ২০২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত) এই ফি অর্থাৎ ২৫০ ডলার দিতে হবে ভিসার সঙ্গে। এই ফি দিতে হবে ভিসা ইস্যু হওয়ার সময়। যাঁদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান হবে, তাঁদের এই ফি দিতে হবে না। ভিসা ফি বাদে এটি অতিরিক্ত ফি হিসেবে দিতে হবে।
নতুন এই ফি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার মোট খরচ দাঁড়াবে ৪৪২ ডলার (৫৩ হাজার ৭৮০ টাকা)। শিল্প খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ ভিসা ফিগুলোর মধ্যে একটি হবে। এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে ভারত, চীন, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলো, যেখান থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী যুক্তরাষ্ট্রে যান।
মার্কিন সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারী ৩ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে এবং মোট দর্শনার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ। টানা ৫ মাস ধরে এ সংখ্যা ক্রমেই কমছে।
অলট্যুর (Altour) নামের একটি বৈশ্বিক ট্রাভেল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রেসিডেন্ট গ্যাবে রিজি রয়টার্সকে বলেন, ‘ভ্রমণকারীর অভিজ্ঞতায় যেকোনো ধরনের জটিলতা তৈরি করলে কিছুটা হলেও ভ্রমণ কমবে। গ্রীষ্ম মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আরও গুরুতর হবে এবং আমাদের ভ্রমণ বাজেট ও ডকুমেন্টেশন পরিকল্পনায় নতুন ফি যুক্ত করতে হবে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন ফি কেবল একটি সাধারণ প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং এর বড় প্রভাব রয়েছে। উচ্চ টিউশন ফি এবং জীবনযাপনের ব্যয়ভার সামলাতে হিমশিম খাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা জন্য নতুন এই চার্জের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়ে উঠবে।
যেখানে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানির মতো দেশগুলো বিশ্বব্যাপী মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে তাদের ভিসা ও অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ ধারণা তৈরি করছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মূল্যবান অবদানকারী নয়, বরং কেবল অর্থ প্রদানকারী গ্রাহক হিসেবে দেখছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টেগ্রিটি ফি শব্দটিও বিতর্কিত। আন্তর্জাতিক ভিসা আবেদনকারীদের সঙ্গে ‘অখণ্ডতা’ বা সততার বিষয়টি জুড়ে দেওয়া আসলে একধরনের অবিশ্বাসের বার্তা দেয়। এর ফলে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ আরও কমে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ও গবেষণা খাতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে এসটিইএম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) খাতে তাঁরা গ্র্যাজুয়েট সহকারী, গবেষক ও শিক্ষণ সহকারী হিসেবে কাজ করেন। শিক্ষার্থী প্রবাহ কমে গেলে উদ্ভাবন থমকে যেতে পারে, শ্রেণিকক্ষে বৈচিত্র্য কমতে পারে এবং মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
এএরা কনসালট্যান্টসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও কাউন্সেলর ঋতিকা গুপ্তা বলেন, ‘ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি মূলত রাজস্ব সংগ্রহের চেয়ে ধারণার ব্যাপার বেশি। বৈশ্বিক মেধা প্রতিযোগিতায় নীতি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি দেশের প্রতি মানুষের বিশ্বাস। যদি যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণকে বিশ্বাস তৈরির চেয়ে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে আমরা এমন এক অবস্থান হারাতে পারি, যা বৈশ্বিক সংযোগ ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তৈরি এবং নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।’