
বছর শেষ হতে আরও ২৫ দিন বাকি, কিন্তু চলতি বছর ভারতীয় বক্স অফিসে আয় করা শীর্ষ ১০ সিনেমার তালিকা এখনই চূড়ান্ত করা যায়। শীর্ষ ১০ সিনেমাগুলোর আয়ে একটির সঙ্গে অন্যটির এতটাই ব্যবধান যে আগামী এক মাসে তালিকার বদল হওয়া প্রায় অসম্ভব। এর মধ্যে কয়েকটি সিনেমা এখন আর প্রেক্ষাগৃহে চলছে না, ফলে বাড়তি আয়ের সুযোগ নেই। দেখে নেওয়া যাক, ২০২৫ সালে কোন সিনেমাগুলো ভারতের বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে।
‘লাল সিং চাড্ডা’র বক্স অফিস ব্যর্থতার পর কার্যত নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন আমির খান, এমনকি অবসরের কথাও ভেবেছিলেন। দীর্ঘ বিরতির পর অভিনেতার ফেরা নিয়ে তাই কৌতূহল ছিল বৈকি। তবে এবারও আমির ফিরেছেন একটি রিমেক সিনেমা নিয়ে, তাই আশঙ্কাও ছিল। গত ২০ জুন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর অবশ্য সে আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে আমির খান অভিনীত ও প্রযোজিত ‘সিতারে জমিন পর’। ১২২ কোটি রুপি বাজেটের সিনেমাটি আয় করেছে ২৬৭ কোটি রুপি, যা আয়ের বিচারে এটি আছে ১০ নম্বরে।
ছবির কেন্দ্রে আমির খানের চরিত্র গুলশান অরোরা। একজন বাস্কেটবল কোচ। তিনি জেদি, রাগী, কিন্তু ভেতরে লুকিয়ে আছে তাঁর গভীর মানসিক ক্ষত, অতীতের দগদগে স্মৃতি আর সমাজের চাপিয়ে দেওয়া ‘স্ট্রং পুরুষ’ হয়ে ওঠার অমানবিক চাপ। এই কোচ গড়ে তোলেন একদল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন খেলোয়াড় নিয়ে তৈরি দল। যেখানে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জীবন নিজের ভেতরেই একেকটি যুদ্ধক্ষেত্র। তাঁরা শুধু খেলেন না, জীবনের ব্যাখ্যাও নতুন করে শেখান। এমন গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমাটি সমালোচকদের কাছে খুব একটা পাত্তা না পেলেও সাধারণ দর্শকেরা বেশ পছন্দ করেছেন। সিনেমায় আমির ছাড়া ছিলেন জেনেলিয়া দেশমুখ।
তালিকার ৯ নম্বরে রয়েছে মালয়ালম সিনেমা ‘এল ২: এমপুরান’। পৃথ্বীরাজ সুকুমারন পরিচালিত রাজনৈতিক অ্যাকশন–থ্রিলার ঘরানার সিনেমাটি আসলে ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘লুসিফার’ ইউনিভার্সের দ্বিতীয় কিস্তি। প্রথমটি বক্স অফিসে সাফল্যের পাশাপাশি সমালোচকদেরও ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তবে এবারের সিনেমাটি সমালোচকদের মন ভরাতে পারেনি। তবুও গত ২৭ মার্চ মুক্তি পাওয়া সিনেমা বক্স অফিস থেকে প্রায় ২৬৮ কোটি রুপি আয় করেছে। ছবির বাজেট ছিল ১৫০ থেকে ১৭৫ কোটি রুপির মধ্যে। সিনেমাটি পরিচালনার সঙ্গে পৃথ্বীরাজ নিজেও অভিনয় করেছেন। আরও আছেন মোহনলাল, টোভিনো থমাস, মানজু ওয়ারিয়ার ও অভিমান্যু সিং।
তিন বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর পর্দায় দেখা গেল দক্ষিণি তারকা পবন কল্যাণকে। তেলেগু ইন্ডাস্ট্রিতে পবন কল্যাণ মানেই হলো উপচে পড়া দর্শক। শুধু তাঁর নামেই সিনেমা চলেছে, এমন উদাহরণও আছে অনেক। গত ২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘দে কল হিম ওজি’ সিনেমার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে এমনটাই। সিনেমার মুক্তি বারবার পেছালেও ট্রেলার মুক্তির আগেই বিক্রি হয়েছে ২২ কোটি রুপির টিকিট! ২৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় ২২৫ কোটি রুপির সিনেমাটি এবং আয় করে প্রায় ৩০০ কোটি রুপি।
জাপান ও মুম্বাইয়ের অপরাধজগতের গল্প দেখানোর মাধ্যমে শুরু হয় ‘দে কল হিম ওজি’। টোকিওতে এক গোপন সংঘের অধীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন ওজাস গম্ভীরা নামের এক তরুণ সামুরাই। কিন্তু জাপানি গ্যাংস্টার দল ইয়াকুজার তাণ্ডবে সে সংঘের সবাই মারা পড়ে, বেঁচে যায় একমাত্র ওজাস গম্ভীরা তথা ওজি। এরপর বহুদিন ধরে ওজাস নিখোঁজ। কেউ জানে না কোথায় সে। এদিকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মিরাজকর (তেজ সাপ্রু)। একটি কনটেইনারকে ঘিরে সত্যদাদার পোর্টে হত্যাকাণ্ড চালায় তার ছোট ছেলে জিমি (সুধেভ নায়ার)। সেই সময় সত্যদাদার ছেলেও মারা পড়ে। এদিকে জিমিকে সেই কনটেইনার পাঠায় তার বড় ভাই ওমি (ইমরান হাশমি)। যে সবার কাছে ‘ওমি ভাউ’ হিসেবে পরিচিত। অপরাধজগতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার ওঠাবসা। ওমি যেকোনো মূল্যে ফেরত পেতে চায় সেই কনটেইনার। সত্যদাদার পেছনে লাগে ভয়ংকর গুন্ডারা। সবাই তখন প্রতীক্ষা করতে থাকে ওজি ফিরে আসার। কারণ, একমাত্র ওজিই পারে এই সমস্যা থেকে সত্যদাদার সাম্রাজ্য বাঁচাতে। কিন্তু ওজি কোথায়? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে ‘দে কল হিম ওজি’ সিনেমায়।
সুজিত পরিচালিত সিনেমায় পবন ছাড়া আরও আছেন ইমরান হাশমি, সুধেভ নায়ার, শ্রীয়া রেড্ডি, প্রকাশ রাজ, প্রিয়াঙ্কা মোহন ও অর্জুন দাস।
চন্দ্রা কোনো সাধারণ নারী নন, এ ধারণাই যেন চলচ্চিত্রের শুরু থেকেই পরিষ্কার করে দেন পরিচালক। শহরের অন্ধকার এক গলিতে, যেখানে সাধারণত পেশিবহুল পুরুষদের আধিপত্য, সেখানে একা দাঁড়িয়ে চন্দ্রা। পার্কিং লটে দুর্ধর্ষ মারধরে তিনি যেভাবে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করেন, সেটি শুধু দৃশ্যত নয়, ভাবনায়ও নতুন। আশপাশের পুরুষেরা—কেউ প্রতিবেশী, কেউ পথচারী। বিস্ময়ে শুধু বলতে পারে, ‘এই মেয়ে আলাদা।’ এই চন্দ্রার গল্প নিয়ে নির্মিত ‘লোকাহ চ্যাপ্টার ওয়ান: চন্দ্রা’ চলতি বছরের অন্যতম আলোচিত মালয়ালম সিনেমা। মাত্র ৩০ কোটি রুপি বাজেটের সিনেমাটি বক্স অফিস থেকে আয় করেছে ৩০৩ দশমিক ৩ কোটি রুপি। ডমিনিক অরুণ পরিচালিত সিনেমায় চন্দ্রা চরিত্রে অভিনয় করেছেন কল্যাণী প্রিয়দর্শনী। আরও আছেন স্যান্ডি ও নাসলেন।
মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রিতে এর আগে খুব কমই নারীকে কেন্দ্র করে সুপারহিরো গল্প বলেছে। ‘লোকাহ’ সেই সাহস নিয়েছে এবং বেশির ভাগ জায়গায় সফলও হয়েছে। এখানে গল্পের মূল লক্ষ্য কোনো ভয়ংকর খলনায়কের সঙ্গে লড়াই নয়; বরং এক নতুন জগৎ গড়ে তোলা। পরিচালক ডমিনিক অরুণ সুপারহিরো ঘরানার প্রচলিত ছক ভেঙে এক ‘সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স’ গড়ে তুলতে চেয়েছেন। কেরালার লোককথা ও দেব–দেবীর মিথকে এভাবে আধুনিক সুপারহিরো কাঠামোর মধ্যে যে মিশিয়ে দেওয়া যায়, সেটা কে ভাবতে পেরেছিল।
চলতি বছরের হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে আরেকটি বড় চমকের নাম ‘মহাবতার নরসিমা’। অশ্বিন কুমার পরিচালিত এই মহাকাব্যিক অ্যানিমেশন সিনেমাটির বাজেট ছিল মাত্র ৪০ কোটি রুপি। কিন্তু গত ২৫ জুলাই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর আয় করেছে ৩২৫ কোটি রুপি! হিন্দু পুরাণের চতুর্থ অবতার ‘নরসিমা’র গল্পে তৈরি এই ছবি প্রথমে ধীরগতিতে এগোলেও এখন পরে বক্স অফিসে ঝড় তোলে। মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি রুপি আয় করছে। ছোটদের পাশাপাশি বড়রাও এই ছবিকে দেখছেন মন দিয়ে। দুর্দান্ত কারিগরি দিক, আবহসংগীত ও আবেগঘন সংলাপ ছবিটির প্রধান আকর্ষণ।
সিনেমার হিন্দি সংস্করণে বিভিন্ন চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন আদিত্য রাজ শর্মা, হরিপ্রিয়া মাত্তা, সংকেট জাসওয়াল, প্রিয়াঙ্কা ভান্ডারি প্রমুখ।
‘ওয়ার’–এর প্রথম কিস্তি যেমন হৃতিক রোশন, টাইগার শ্রফের টক্কর আর বাণী কাপুরের আবেদনময়ী উপস্থিতির কারণে অনেক ভক্ত মনে রেখেছেন। বিরতির পর তাই সিনেমাটির সিকুয়েল নিয়ে আগ্রহ ছিল ব্যাপক। কিন্তু বক্স অফিসে সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি ছবিটি, মন ভরাতে পারেনি সমালোচকদেরও। গত ১৪ আগস্ট মুক্তি পায় অয়ন মুখার্জি পরিচালিত সিনেমাটি। প্রায় ৩০০ কোটি রুপি বাজেটের সিনেমাটি ৩৫১ কোটি রুপি আয় করে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি আয় করা ভারতীয় সিনেমার তালিকার পাঁচে রয়েছে।
‘ওয়ার ২’–এর গল্প শুরু হয় যখন কবীর (হৃতিক রোশন) তাঁর সাবেক পরামর্শক কর্নেল লুথরাকে (অশুতোষ রানা) একটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী সংস্থা কালীর জন্য হত্যা করতে বাধ্য হন। কর্নেল লুথরাকে হারিয়ে নড়েচড়ে বসে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী র। নিয়োগ দেওয়া হয় সংস্থার নতুন প্রধান বিক্রান্ত কৌলকে (অনিল কাপুর)। কবীরকে ধরতে আর লুথরা হত্যার রহস্য ভেদ করতে তৈরি হয় বিশেষ দল। যে দলের প্রধান আরেক খ্যাপাটে অফিসার বিক্রম (এনটিআর জুনিয়র)। নিজে যেচে গিয়ে দলে যোগ দেন লুথরার মেয়ে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর সদস্য কাব্য (কিয়ারা আদভানি)। এরপর শুরু হয় সেয়ানে সেয়ানে টক্কর। বিক্রম কি পারবে কবীরকে বাগে আনতে, নাকি হঠাৎই গল্প মোড় নেবে নতুন রহস্য; সেটা নিয়ে এগিয়ে চলে সিনেমাটি।
রজনীকান্তের সিনেমা মুক্তি পাবে আর বক্স অফিসে ঝড় তুলবে না, তা কী হয়। লোকেশ কঙ্গরাজের সঙ্গে এবার হাজির হয়েছিলেন এই তামিল অভিনেতা। কিন্তু সিনেমাটি বক্স অফিসে প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি, বেশির ভাগ সমালোচকও সিনেমাটিকে ‘গড়পড়তা’ বলেছেন। তারপরও বক্স অফিস থেকে ৫১৪ কোটি রুপি আয় করেছে ৩৫০ কোটি রুপি বাজেটের সিনেমাটি।
গল্প শুরু হয় দেবার (রজনীকান্ত) পুরোনো বন্ধু রাজশেখরের (সত্যরাজ) হত্যাকে ঘিরে। ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যায়, তিনি ছিলেন সদালাপী এক উদ্ভাবক। তাঁর মৃত্যুর রহস্যভেদে নেমে পড়েন দেবা, সঙ্গী হন রাজশেখরের মেয়ে প্রীতি (শ্রুতি হাসান)। তিনি ছোট বোনদের দেখাশোনা করতে গিয়ে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ছেন। তাঁদের অনুসন্ধান গিয়ে ঠেকে দয়াল (সৌবিন শাহির) ও তাঁর কর্তা সাইমনে (নাগার্জুনা)। দয়াল এক হিংস্র খলনায়ক, যে সন্দেহভাজন গুপ্তচরদের খুঁজে বের করতে শ্রমিকদের নির্বিচার হত্যা করছে। দেবা কি পারবেন বন্ধুদের খুনিদের শাস্তি দিতে? এই প্রশ্নের অপেক্ষা করতে করতেই সামনে আসে দেবার অতীত।
তালিকার ৩ নম্বরে আছে মোহিত সুরির ‘সাইয়ারা’। অনেক দিন পর চলতি বছর একটি রোমান্টিক সিনেমা বক্স অফিসে দাপট দেখিয়েছে, তা–ও আবার নবাগত দুই অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে। সিনেমা তো বটেই, মুক্তির আগে থেকেই ‘সাইয়ারা’র গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৪৫ কোটি রুপির সিনেমাটি বক্স অফিস থেকে ৫৭৯ দশমিক ২৩ কোটি রুপি আয় করে।
বাণী বাত্রার (অনীত পড্ডা) বিয়ে ভেঙে যায়। ছয় মাস পর বাণী উঠে দাঁড়ায়। কাজ নেয় এক পত্রিকা অফিসে। কিন্তু প্রথম দিনই মুখোমুখি হয় এক রাগী ও বদমেজাজি উঠতি গায়কের। ধ্বংসাত্মক তাঁর আচরণ। রেগে গেলে কিছুরই পরোয়া করেন না। সেদিনই বাণী জানতে পারে, তাঁর নাম কৃষ কাপুর (আহান পান্ডে)। কৃষ স্বপ্ন দেখে, একদিন বড় গায়ক হবে। কিন্তু স্বজনপ্রীতির চক্করে নিজের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পায় না। এ কারণেই তার এত ক্ষোভ। নিজের গানের দলের সদস্যদের সঙ্গেও মারামারি করতে দ্বিধা করে না সে। ভাগ্যের ফেরে বাণী ও কৃষ আবার এক হয়। তবে প্রয়োজনটা নেহাতই স্বার্থের। তবে ঘটনা দ্রুত মোড় নিতে থাকে অন্যদিকে। কৃষ ও বাণী যখন ধীরে ধীরে কাছে আসতে শুরু করে, তখনই এক কঠোর সত্য এসে তছনছ করে দিতে চায় সব। কৃষ হারাতে থাকে বাণীকে। কী হয় শেষ পর্যন্ত, তা জানতে হলে দেখতে হবে ‘সাইয়ারা’ সিনেমাটি।
লক্ষণ উতেকরের সিনেমাটি মুক্তি পায় চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ঐতিহাসিক পটভূমিতে নির্মিত সিনেমা, প্রধান দুই চরিত্রে ভিকি কৌশল ও রাশমিকা মান্দানার মতো তারকা; সিনেমাটি নিয়ে তাই বড় প্রত্যাশা ছিল। মুক্তির পর সে প্রত্যাশা কড়ায় গন্ডায় মিটিয়েছে সিনেমাটি। বক্স অফিস থেকে আয় করেছে প্রায় ৮০০ কোটি রুপি! হিন্দি সিনেমার হিসাব ধরলে এটি ২০২৫ সালের সবচেয়ে আয় করা হিন্দি সিনেমা।
‘ছাবা’ গল্পের শুরু হয় মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবারে। শিবাজি মহারাজ ছিলেন তুমুল প্রতাপশালী রাজা এবং আওরঙ্গজেবের সবচেয়ে বড় শত্রু। কারণ, শিবাজি মহারাজকে পরাজিত করার পরও মারাঠা সাম্রাজ্য দখল করার ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি আওরঙ্গজেবের। তবে শিবাজির মৃত্যুর খবর পাওয়ামাত্র মোগল দরবার হয়ে ওঠে আনন্দে উদ্বেল। পথের কাঁটা দূর হয়েছে ভেবে উৎসবে মেতে ওঠে তারা। আর তখনই হাজির হন ছত্রপতি সাম্ভাজি মহারাজ। কিছুসংখ্যক সৈন্য নিয়ে হুট করেই মোগলদের সম্পদশালী শহর বোরহানপুরে আক্রমণ করেন। গুঁড়িয়ে দেন সাজানো নগর। লুট করেন সব সম্পদ। এ আক্রমণের মাধ্যমে সরাসরি মোগল শাসনকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন সাম্ভাজি।
এ আক্রমণ স্তম্ভিত করে দেয় মোগলদের। মারাঠাদের গুঁড়িয়ে দিতে সম্রাট আওরঙ্গজেব বিশাল বাহিনী নিয়ে যাত্রা করেন। অন্যদিকে মারাঠা সাম্রাজ্যের ভেতরই দানা বাধতে থাকে ষড়যন্ত্র। নিজের পরিবারের ভেতর থেকেই সাম্ভাজিকে সরাতে উঠেপড়ে লাগেন অনেকে। একদিকে মোগল সেনা, অন্যদিকে পারিবারিক বিদ্রোহ—এ দুটি কি সামাল দিতে পারেন সাম্ভাজি? কী হয়েছিল তাঁর পরিণতি? ‘ছাবা’য় এ কাহিনিই দেখানো হয়।
২০২২ সালে ‘কানতারা’ বানিয়ে চমকে দিয়েছিলেন ঋষভ শেঠি। তিন বছর পর তিনি হাজির সেই সিনেমার প্রিকুয়েল নিয়ে। প্রথম কিস্তির মতো প্রিকুয়েলও মুক্তির পর ঝড় তুলেছে বক্স অফিসে। ঋষভ প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সঙ্গে পরিচালনাও করেছেন। ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন রুক্মিণী বসন্ত, গুলশান দেবাইয়া। ১২৫ কোটি রুপির বাজেটের সিনেমাটি আয় করেছে প্রায় ৯০০ কোটি রুপি! প্রথম কিস্তির মতো এবারও ঋষভের অভিনয়, গল্প বলা আর দুর্দান্ত ভিজ্যুয়ালের প্রশংসা করেছেন সমালোচকেরা।
ঘন অরণ্য ‘কানতারা’, যাকে স্থানীয় লোকজন ‘ঈশ্বরের বাগান’ বলে ডাকে। সেখানে একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায় বসবাস করে। তাদের রক্ষাকর্তা হলেন দেবতুল্য পাঞ্জুর্লি ও গুলিগা। প্রকৃতি ও মাটির সঙ্গে তাদের নিবিড় সম্পর্ক, তাদের অস্তিত্বকে সুরক্ষা দেয়। রাজা বিজয়েন্দ্র (জয়রাম) বুঝতে পারেন কানতারার রহস্যময় শক্তি। তাই তিনি তাঁর রাজপরিবার ও জনগণকে বনভূমিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু বছর কয়েক পর তাঁর ছেলে কুলশেখর (গুলশান দেবাইয়া) সিংহাসনে বসে শিকারের অজুহাতে নিষিদ্ধ অরণ্যে প্রবেশ করে। সেখান থেকেই শুরু হয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সঙ্গে রাজপরিবারের সংঘাত। বার্মের (ঋষভ শেঠি) নেতৃত্বে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ বাইরে বেরিয়ে জগৎকে চেনা শুরু করে। রাজকুমারী কনকবতী (রুক্মিণী বসন্ত) বার্মের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন; কুলশেখর নিজের সিংহাসন হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। এর মধ্যেই আরেক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ রাজপরিবারের সঙ্গে মিলে কানতারাকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। এরপর কী হয়, তা নিয়েই এগিয়েছে সিনেমাটির গল্প।