
‘তিন মাস ধরে বেতন পাই না, পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে। ছেলে কলেজে পড়াশোনা করে, বেতন দিতে পারছি না। কয়েক দিন আগে ছেলে অসুস্থ হয়েছিল, অর্থাভাবে সুচিকিৎসা করাতে পারিনি। বাসাভাড়া ঠিকমতো দিতে না পারায় বাড়িওয়ালার কথা শুনতে হচ্ছে।’ প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আবদুল জব্বার; দুই দশক ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে অ্যাটেনডেন্ট পদে (শব্দ শাখা) কর্মরত তিনি।
লোকসানের মুখে ধুঁকতে থাকা প্রতিষ্ঠান এফডিসির কর্মকর্তা থেকে মালি, ক্লিনার, নিরাপত্তারক্ষীসহ প্রতিষ্ঠানটির মোট ২২৪ কর্মী তিন মাস ধরে (জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ) বেতন–ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন; ঈদের আগে বেতন–ভাতা পাবেন কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তাঁরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন কলাকুশলী ও কর্মচারী লীগ (সিবিএ) কার্যালয়ে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন কর্মীরা; বৈঠকশেষে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিনের কাছে বেতন পরিশোধের জন্য মৌখিকভাবে দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব জানান, আগামী রোববার লিখিতভাবে স্মারকলিপি জমা দেবেন; ঈদের আগে বেতন না পেলে প্রয়োজনে মানবন্ধনের ডাক দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এফডিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, এফডিসির এখন মাসে আয় ৩০ লাখ টাকা। তার বিপরীতে কর্মীদের প্রতি মাসে বেতন বাবদ ব্যয় ৯৮ লাখ টাকার মতো।
ফলে এফডিসির তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় বেতন পরিশোধ করা যাচ্ছে না। সঙ্গে অবসরে যাওয়া কর্মীদের আনুতোষিকও পরিশোধ করা যায়নি।
এফডিসির উপপরিচালক (অর্থ) নিকাশ কুমার বড়ুয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের নভেম্বরে মোট ২০ কোটি টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে; আবেদনটি পর্যালোচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কিছু তথ্য–উপাত্ত চাওয়া হয়েছে। গত রোববার তা পাঠিয়েছি।’
এফডিসি বলছে, কর্মীদের বেতন ও আনুতোষিক দিতে পারা কিংবা না পারা নির্ভর করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর; তবে তারা কবে নাগাদ অনুদান দেবে, তা এখনো নিশ্চিত জানা যায়নি। প্রতিবছরই ঘাটতি মেটাতে এফডিসিকে ‘ইকুইটি’ হিসেবে এ অনুদান দেওয়া বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
গত ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এফডিসিকে সরকার ৭ কোটি টাকা দেয় এফডিসি। এর আগে ২০২০ সালেও দুই মাসের বেতন বাকি পড়েছিল, পরে সেই বছর এপ্রিলে ৬ কোটি টাকা অনুদান পেয়ে বেতন পরিশোধ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
এফডিসির এখন মাসে আয় ৩০ লাখ টাকা। তার বিপরীতে কর্মীদের প্রতি মাসে বেতন বাবদ ব্যয় ৯৮ লাখ টাকার মতো। ফলে এফডিসির তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় বেতন পরিশোধ করা যাচ্ছে না। সঙ্গে অবসরে যাওয়া কর্মীদের আনুতোষিকও পরিশোধ করা যায়নি।নাম প্রকাশ না করার শর্তে এফডিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
এফডিসি বলছে, কর্মীদের বেতন ও আনুতোষিক দিতে পারা কিংবা না পারা নির্ভর করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর; তবে তারা কবে নাগাদ অনুদান দেবে, তা এখনো নিশ্চিত জানা যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিনের বক্তব্য জানতে তাঁর কার্যালয়ে গেলে তিনি সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।
চলচ্চিত্রের শুটিং কমে যাওয়া, অব্যবস্থাপনাসহ নানা জটিলতার জেরবারে সাত বছর ধরে আর্থিক সংকটের মুখে নিজস্ব তহবিল থেকে কর্মীদের বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বছর বছর সরকারের অনুদানের (ইকুইটি হিসেবে) ওপর নির্ভর করতে হয় এফডিসিকে। ২২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, ভাতাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে ১০ কোটি টাকা, অবসরে যাওয়া ৫২ কর্মীর আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) ও ছুটির নগদায়ন বাবদ পাওনা মেটাতে ১০ কোটি টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে এফডিসি।
২০০৬ সাল থেকে লোকসান শুরু হলেও কর্মীদের বেতন–ভাতা নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করা হয়েছিল। তার প্রায় এক দশক পর ২০১৫ সাল থেকে কর্মীদের বেতন পরিশোধে প্রায় পুরোপুরিই অনুদানের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের তহবিল থেকেই কর্মীদের বেতন–ভাতা পরিশোধের বিধি রয়েছে; ঢাকাই সিনেমার রমরমা সময়ে নিজেদের আয়েই চলেছে এফডিসি। লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কর্মীদের বেতন–ভাতা পরিশোধ করে কোনো কোনো বছর ৮০ লাখ টাকার মতো আয়করও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০০৬ সাল থেকে লোকসান শুরু হলেও কর্মীদের বেতন–ভাতা নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করা হয়েছিল। তার প্রায় এক দশক পর ২০১৫ সাল থেকে কর্মীদের বেতন পরিশোধে প্রায় পুরোপুরিই অনুদানের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এফডিসিকে আবার স্বাবলম্বী করতে সরকার ৩২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে; কমপ্লেক্সটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এফডিসির আয় বাড়ার আশায় দিন গুনছেন কর্মীরা। এর নির্মাণকাজ শেষ হতে আরও বছর দুয়েক লাগতে পারে।