
Oরাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান। এসব দোকানের প্রায় সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একই সঙ্গে শত শত মানুষের স্বপ্নও দোকানের কাপড়চোপড়ের মতোই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এমন ঘটনায় দেশের বিনোদনজগতের তারকারাও ব্যথিত হয়েছেন। নানাভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে এ ঘটনা ভিন্নভাবে নাড়া দিয়েছে, করেছে স্মৃতিকাতর। জানালেন, এমনই আগুনে ছাই হয়েছিল তাঁদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান।
ঘটনাটি ১৯৯৫ সালের। ঈদের আগের দিন বগুড়া নিউমার্কেটে আগুন লাগলে অপু বিশ্বাসদের দুটি কাপড়ের দোকান পুড়ে ছাই হয়েছিল। বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানমালিক, তাঁদের অসহায় পরিবারের সঙ্গে একসময় ঘটে যাওয়া নিজের পরিবারের এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির তুলনা করে বুধবার রাতে ঢাকাই ছবির নায়িকা অপু বিশ্বাস তাঁর ফেসবুক পেজে লম্বা একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
অপু বিশ্বাস লিখেছেন, ‘১৯৯৫ সালের ঘটনা। তখন আমি অনেক ছোট। আগুনে পুড়ে যাওয়া কিছুই বুঝি না। শুধু দেখতাম মা, বাবা, কাকা ও দিদি সবাই কান্না করছিল, বলছিল আমাদের সব শেষ। বগুড়া নিউমার্কেটে আমাদের দুটি দোকান ছিল। পরদিন ঈদ। চাঁদরাতে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত দোকান খোলা ছিল।
বাবা, কাকা দোকানদারি শেষ করে বাসায় এসে ঘুমাচ্ছিলেন। ভোরবেলা বাবা জানতে পারেন, আমাদের দুটি দোকানসহ পুরো নিউমার্কেট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’ অপু বিশ্বাস স্ট্যাটাসের আরেক অংশে লিখেছেন, ‘তখন বুঝিনি আমাদের ওপর দিয়ে কী গেছে, কিন্তু এ রকম মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আর কখনো যেন কোনো পরিবারের ওপরে না আসে।’ এই স্ট্যাটাসের সূত্রে কথা হয় অপু বিশ্বাসের সঙ্গে।
বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে সেদিনের সেই ভয়াবহতার কথা মনে করে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আজকের বঙ্গবাজারের এমন মর্মান্তিক ঘটনার ভয়াবহতা, একসময়ের সাক্ষী আমার পরিবার।
ঠিক ঈদের আগের রাতে দোকানগুলো পুড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের পরিবারের জন্য কতটা মর্মান্তিক, ভয়াবহ অবস্থা ছিল, বোঝাতে পারব না। সব কাপড় তো পুড়েই গিয়েছিল, পুরো রোজার মাসের বেচাকেনা করা জমানো ৯৫ হাজার টাকাও পুড়ে গিয়েছিল। তখন এই পরিমাণ টাকারও অনেক মূল্য ছিল। কী যে একটা অবস্থায় আমরা পড়েছিলাম, পাশের বাড়ি থেকে সহায়তা করেছিল আমাদের। বকেয়া সাড়ে তিন শ টাকা বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করার টাকা হাতে ছিল না তখন। টাকাগুলো পুড়ে যাওয়ার কারণে পরবর্তী সময়ে মহাজনের বকেয়া টাকাও শোধ করতে হিমশিম খেতে হয়েছিল আমাদের।’
এই নায়িকা আরও বলেন, ‘ছোটবেলায় ঈদের সময় নতুন টাকা পছন্দ করতাম। ঈদের সকালে বাবা ও কাকা মিলে আমাকে দুই টাকা ও পাঁচ টাকার নতুন বান্ডিল হাতে তুলে দিতেন। ঈদের দিন বান্ধবীদের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে বের হতাম। ওই দিন মোড়ে মোড়ে কোক, আইসক্রিমের দোকান বসত। ছোটবেলায় এগুলো খুব পছন্দ করতাম আমি। এ ঘটনা ঘটার পর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাবা ও কাকারা কান্নাকাটি করছেন। আমি ছোট, না বুঝে নতুন টাকার বান্ডিলের জন্য জেদ ধরছিলাম। কিন্তু টাকা তো পুড়ে গেছে। জেদ ধরার কারণে একটা পর্যায়ে বাবা আমাকে একটা থাপ্পড় মেরেছিলেন। পরে বিকেলের দিকে অর্ধেক পোড়া দুই টাকার একটি বান্ডিল দিয়েছিল। মারার পরে বাবার মন খারাপ হয়েছিল, পোড়া দোকান থেকে খুঁজে হয়তো টাকাগুলো নিয়ে এসেছিলেন। পরে কাকাও অন্য জায়গায় থেকে সংগ্রহ করে নতুন পাঁচ টাকার একটা বান্ডিল আমাকে দিয়েছিলেন।’
অপু বিশ্বাসের ভাষায়, ‘এ ঘটনায় এখন আমাদের সবারই ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এ জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। কারণ, এখন সহযোগিতা ছাড়া তাঁদের জন্য কোনো কিছুই করার নাই। কারণ, আমাদের পরিবারের ওপর এমন মর্মান্তিক ঘটনা বয়ে গিয়েছিল, সেটা টের পেয়েছি বলেই এসব কথা বলছি।’
অপু বিশ্বাস জানালেন, একটা সময় ক্ষত দূর করে তাঁদের পরিবার ঘুরেও দাঁড়িয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমার মায়ের কিছু স্বর্ণালংকার ছিল। তা বিক্রি করে দোকান দুটি আবার চালু করেছিলাম আমরা। আজ বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী পরিবারের মনের কথা ভেবে, ১৯৯৫ সালের কথা খুব মনে পড়ছে আমার।’