
ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা ‘বাড়ির নাম শাহানা’ দিয়ে আলোচনায় এসেছেন অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী আনান সিদ্দিকা। এর মধ্যে ভারতীয় ওয়েব সিরিজ ‘জ্যাজ সিটি’তেও গেয়েছেন। গত সোমবার তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।
‘বাড়ির নাম শাহানা’ আপনাকে কতটা বদলে দিল?
আনান সিদ্দিকা: এখনো ওরকম কোনো পরিবর্তন দেখছি না। তবে মানুষ হিসেবে, শিল্পী হিসেবে অবশ্যই আমার ভেতরে একধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। প্রতিদিনই দর্শকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, যাঁরা সিনেমার গল্প, চরিত্রের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার কথা বলছেন। সিনেমাটি নিয়ে ভালো লাগার কথা বলছেন। এমনটা আমি কখনো কল্পনাও করিনি। আমি খুবই অনুপ্রাণিত বোধ করছি, নিজেকে পরিপূর্ণ মনে করছি। আমি অনেক মুভড (আলোড়িত) হয়েছি; নিজের প্রতি, কাজের প্রতি বিশ্বাসটা আরও দৃঢ় হয়েছে।
ছবিটার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?
আনান সিদ্দিকা: আমি আর লীসা (গাজী) আপা দীর্ঘদিন একসঙ্গে মঞ্চে কাজ করেছি। একদিন লীসা আপা গল্পটা এনে বললেন, ‘দীপা চরিত্রে তোকে ভেবেছি। আমি যখন সিনেমাটা বানানোর কথা ভাবলাম, তখন চরিত্রটার মধ্যে তোর চেহারাটা ভেসে উঠল।’
গল্পটা পড়ে বুঝলাম, চরিত্রটা তো আমাদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। দীপার কথাগুলো আমিও বলতে চাই। গল্পটা লীসা আপার জীবন থেকে নেওয়া। সত্য ঘটনার ওপর ভিত্তি করে লেখা। এটা লীসা আপার জীবনের গল্প হলেও চরিত্রটার মতো বহু মানুষকে আশপাশে দেখেছি। এর মধ্যে আমার মা–খালারাও আছেন। ওই মফস্সলের নব্বইয়ের দশকের দীপার যাত্রাটা আমার খুবই পরিচিত। মানুষগুলো প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে কীভাবে নিজের স্বপ্নকে ছুঁয়েছেন—সে যাত্রার গল্পটাই আমরা বলতে চেয়েছি।
নারী দর্শকের মধ্যে সিনেমাটি আলাদা আগ্রহ তৈরি করেছে।
আনান সিদ্দিকা: হ্যাঁ। নারী হোক কিংবা পুরুষ—এ রকম ফান্ডামেন্টাল (মৌল) বৈশিষ্ট্য আমাদের জীবনে থাকা দরকার, যেটা নারী-পুরুষ সবার জন্যই প্রযোজ্য। আমাদের জীবনযাত্রায় বিবাহ–বিচ্ছেদসহ নানা ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। তখন যদি ভাবি, এই বুঝি জীবনটা শেষ হয়ে গেল, তাহলে তো চলবে না। এগিয়ে যেতে হবে। দীপার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে অনেকে আপ্লুত হয়েছেন। দর্শক ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প পর্দায় দেখতে ভালোবাসছেন।
দীপার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা আপনাকে কতটা তাড়িত করেছে?
আনান সিদ্দিকা: সিনেমাটি খুবই ইন্সপায়ারিং (প্রেরণাদায়ী)। দীপার চরিত্রটার ভেতরে যে আগুনটা আছে, যে স্ফুলিঙ্গটা আছে; আমার মনে হয়, সেটা আমার ও লীসা আপার ভেতরেও আছে।
সিনেমাটি তো এ বছর বাংলাদেশ থেকে অস্কারে পাঠানো হয়েছে...
আনান সিদ্দিকা: এটা তো অবশ্যই ভীষণ অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। খুব ভালো লেগেছে। আবেগে আপ্লুত হয়েছি।
অভিনয়ে নিয়মিত হবেন?
আনান সিদ্দিকা: জি, আমার অভিনয়ে নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছা আছে। বাড়ির নাম শাহানা করার দেড় বছর আগে থেকে রিহার্সাল (মহড়া) করেছি। বিষয়টি খুব উপভোগ করেছি। চরিত্রের মধ্যে অনেক রকমের জীবন যাপন করা যায়, এটা আনন্দের মুহূর্ত। অভিনয়টা চালিয়ে যেতে চাই। পরবর্তী পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার কাজ শুরু করেছি। আমি আর লীসা আপা সিনেমার গল্প লিখেছি। এখন চিত্রনাট্য লিখছি, চিত্রনাট্যে আমাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন সাদিয়া খালিদ।
আপনি তো মূলত সংগীতশিল্পী, গানের কী খবর?
আনান সিদ্দিকা: দীর্ঘদিন বাংলাদেশে ছিলাম না। সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছি। এই দফায় দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। লন্ডনে থাকতে নিয়মিত ‘লক্ষ্মীটেরা’র শো করেছি, তবে এখন ঢাকায় থেকে লন্ডনে গিয়ে শো করা যায় না। আপাতত একটা বিরতি নিয়েছি।
এর মধ্যে ভারতীয় ওয়েব সিরিজ জ্যাজ সিটিতে ছয়টার মতো গান রেকর্ড করেছি। অর্ক মুখার্জি সংগীত পরিচালনা করেছেন। উনার সঙ্গে গান করতে গিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। উনি এমন একজন মানুষ, যিনি শিল্পীর ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনতে পারেন। সিরিজের গানগুলো শিগগিরই প্রকাশিত হবে। এর বাইরে কয়েকটি লালনগীতি ও রবীন্দ্রসংগীত গাইছি। পাশাপাশি সামনে লাইভ শো করার পরিকল্পনাও রয়েছে।