ক্যাম্পাসের আড্ডাগুলোতে লোকগানের একটা আলাদা কদর সব সময়ই ছিল। কিন্তু ঘটা করে এ গানের চর্চা করার খুব একটা চল নেই। হয়তো কোনো এক আড্ডায় কেউ গান ধরল, অন্যরা গলা মেলাল, এই পর্যন্ত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার হোসাইন তাই ভাবছিলেন, কীভাবে ক্যাম্পাসে লোকগানের চর্চাকে সাংগঠনিক রূপ দেওয়া যায়।
করোনার কারণে ক্যাম্পাসে তখন হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাস। ফাঁকা ক্যাম্পাসে নিয়মিত জমে গানের আড্ডা। সেসব আড্ডার নিয়মিত সদস্য ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমন চৌধুরী। লোকগান তাঁরও খুব প্রিয়। লোকগানের একটা ব্যান্ড গড়ে তোলা যায় কি না, ভাবছিলেন ইমন ও ইফতেখার। কিন্তু দুজন মিলে কী গানের ব্যান্ড গড়া সম্ভব? তবু চ্যালেঞ্জটা নিলেন তাঁরা। ক্যাম্পাসে যাঁরা লোকগানের চর্চা করেন, শুরু হলো তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ। বিভিন্ন বিভাগ থেকে কয়েকজন মিলেও গেল। এভাবেই জন্ম নিল নতুন ব্যান্ড—ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা।
আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর থেকে গানের চর্চার জন্য নিজেদের একটা জায়গা নির্ধারণ করেন ব্যান্ডের সদস্যরা। শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনের আমতলার সেই চত্বরটি এখন ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা চত্বর নামেই পরিচিতি হয়ে ওঠেছে। এখানেই লোকগানের নিয়মিত আসর বসান তাঁরা। আর সে আসরে ভিড় জমান গানপ্রিয় শিক্ষার্থীরা। শুধু শিক্ষার্থী নয়, লোকগান নিয়ে ব্যান্ড সদস্যদের এই একাগ্রতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও চোখে পড়ে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবে গান গাওয়ার সুযোগ পায় লোকগানের এই দল। এর পর থেকে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন বিভাগের নবীনবরণ, পুনর্মিলনী থেকে শুরু করে ক্লাবের সাংস্কৃতিক আয়োজন—সব জায়গায় আমন্ত্রণ পেতে শুরু করে ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা। শুধু যে ক্যাম্পাস থেকেই ডাক পাচ্ছে, তা কিন্তু নয়; ক্যাম্পাসের বাইরে নানা জায়গায়ও অনুষ্ঠান করছে তারা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তবিশ্ববিদ্যালয় মিউজিক ফেস্টেও ছিল ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার পরিবেশনা।
ইফতেখার বলেন, ‘রক গানের প্রভাবে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ লোকগানগুলো যেন হারিয়ে না যায়, সেই লক্ষ্যেই ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার জন্ম। গত দুই বছরে আমরা যে অবস্থানে এসেছি, তা আমাদের অনেক আশাবাদী করছে। এখনো লোকগানের অনেক শ্রোতা আছে। এই শ্রোতাদের জন্য আমাদের একটা দায়বদ্ধতা আছে। সেই দায় থেকেই আমরা কাজ করে যাব। ক্যাম্পাস বাউলিয়ানাকে আমরা আরও বড় পরিসরে কীভাবে সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারি, সেই চেষ্টা করব।’