
রাজধানী ঢাকায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক নৃশংস ঘটনা অনেক পরিবারকেই গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় চুরি করে পালানোর সময় গৃহকর্ত্রী ও তাঁর মেয়েকে খুন করার অভিযোগ ওঠে গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনা আমাদের ঘরের ভেতরের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, গৃহকর্মী নিয়োগের আগে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করতে। জেনে নিন গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যা যা মেনে চলা জরুরি।
গৃহকর্মীরা সময়ের সঙ্গে পরিবারের অংশ হয়ে যান। দিনের একটা বড় সময় তাঁরা কাটান আমাদের ঘরে—শিশু, বয়স্ক সদস্য, রান্নাঘর, শোবার ঘর—সব জায়গায়ই তাঁদের উপস্থিতি থাকে। তাই বিশ্বাসের জায়গাটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই বিশ্বাস যদি যাচাই ছাড়া তৈরি হয়, তাহলে ঝুঁকিও তৈরি হয় নীরবে।
অনেক সময় পরিচিত কারও মাধ্যমে কিংবা তাড়াহুড়ায় গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক ঘটনাটি দেখিয়ে দিল, এই অবহেলা কখনো কখনো ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
ডিএমপি কমিশনারের অনুরোধের মূল কথা পরিষ্কার, পরিচয় নিশ্চিত না করে কাউকে ঘরের ভেতরের দায়িত্ব দেওয়া ঠিক নয়। জাতীয় পরিচয়পত্র, স্থায়ী ঠিকানা, পরিবারের তথ্য নিশ্চিত থাকলে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
এটি শুধু অপরাধ প্রতিরোধের প্রশ্ন নয়; পরিবার এবং গৃহকর্মী—দুই পক্ষের নিরাপত্তার সঙ্গেই যুক্ত।
প্রথম আলোর জীবনযাপন সেকশনে আগে প্রকাশিত একটি ফিচারেও গৃহকর্মী নিয়োগের সময় সচেতন থাকার কথা বলা হয়েছিল। সেখানে পরিচয়পত্রের কপি রাখা, আগের কর্মস্থলের খোঁজ নেওয়া, জরুরি যোগাযোগ নম্বর সংগ্রহ এবং কাজের দায়িত্ব পরিষ্কার করে দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
আমরা অনেক সময় এসব জানি, কিন্তু বাস্তবে মানি না। সাম্প্রতিক ঘটনাটি আবার মনে করিয়ে দিয়েছে, সচেতনতা কোনো বাড়তি ঝামেলা নয়, এটি নিজের ঘরকে নিরাপদ রাখার একটি প্রয়োজনীয় শর্ত।
গৃহকর্মীদের সবাইকে অপরাধী হিসেবে দেখা যেমন ভুল, তেমনি অন্ধ বিশ্বাসও বিপজ্জনক। নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য দরকার আস্থা ও সতর্কতার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য। নিজের ঘরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রথম দায়িত্ব আমাদেরই।
পরিচয় নিশ্চিত করুন
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধনের কপি সংগ্রহ করুন। নাম ও ঠিকানা মিলিয়ে দেখুন।
স্থায়ী ঠিকানা ও পরিবারের তথ্য নিন
তিনি কোথায় থাকেন, পরিবারের সদস্য কারা—এসব তথ্য লিখে রাখুন। পরিবারের কারও ফোন নম্বর থাকলে ভালো।
আগের কর্মস্থলের খোঁজ নিন
আগে কোথায় কাজ করেছেন, কেন ছেড়েছেন—এসব প্রশ্ন করুন। সম্ভব হলে আগের গৃহকর্তার সঙ্গে কথা বলুন।
স্থানীয় থানায় তথ্য রাখুন
অনেক এলাকায় থানায় গৃহকর্মীর তথ্য রাখার ব্যবস্থা আছে। সুযোগ থাকলে সেটি কাজে লাগান।
কাজের দায়িত্ব পরিষ্কার করুন
কী কাজ করবেন, কী করবেন না—শুরুতেই স্পষ্ট করে বলুন।
শুরুর দিকে নজরদারি রাখুন
প্রথম কয়েক মাস কাজ ও আচরণের দিকে একটু বেশি খেয়াল রাখা জরুরি।
মূল্যবান জিনিস নিরাপদে রাখুন
গয়না, টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আলাদা জায়গায় রাখুন।
অস্বাভাবিক কিছু দেখলে গুরুত্ব দিন
আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন বা সন্দেহজনক বিষয় চোখে পড়লে অবহেলা করবেন না।
শিশুদের একা রেখে যাবেন না
শিশু খুব ছোট হলে গৃহকর্মীর সঙ্গে একা রেখে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে প্রথম কয়েক মাস।
শিশুর সঙ্গে আচরণ খেয়াল করুন
শিশু ভয় পাচ্ছে কি না, আচরণে পরিবর্তন হচ্ছে কি না—এসব লক্ষ করুন।
বয়স্ক সদস্যের নিয়মিত খোঁজ নিন
বয়স্ক বা অসুস্থ সদস্যের সঙ্গে গৃহকর্মীর আচরণ কেমন, নিয়মিত খোঁজ রাখুন।
ওষুধ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক দায়িত্ব স্পষ্ট করুন
বয়স্কদের ওষুধ দেওয়া বা বিশেষ যত্নের দায়িত্ব থাকলে তা পরিষ্কার করে বলে দিন।
যোগাযোগ সহজ রাখুন
বয়স্ক ও শিশুদের যেন প্রয়োজনে সহজে পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ থাকে।