শিশুরাও আজকাল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অনলাইনে সময় কাটানোর এই প্রবণতা।
শিশুরাও আজকাল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অনলাইনে সময় কাটানোর এই প্রবণতা।

অনলাইনে শিশুকে নিরাপদ রাখবেন যেভাবে

ইন্টারনেটের আশীর্বাদে সংযুক্ত এই বিশ্বে সন্তানের অনলাইন উপস্থিতি ঠেকানো সম্ভব নয়। তাই অনলাইনে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের শিশু উন্নয়ন সংস্থা ইউনিসেফের ওয়েবসাইট থেকে অভিভাবকদের জন্য থাকল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।

শিশুরাও আজকাল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অনলাইনে সময় কাটানোর এই প্রবণতা। আন্তর্জাতিক জরিপ বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি আধা সেকেন্ডে একটি শিশু প্রথমবারের মতো অনলাইনে আসে। এতে একদিকে শিশুর জন্য উন্মুক্ত হয় সারা বিশ্বের সব তথ্য। অন্যদিকে এমন সব বিষয় সামনে আসে, যা শিশুর জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।

  • শিশুকে ‘ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট’–এর বিষয়ে সাবধান করুন। অনলাইনে মেসেজ, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি দেওয়ামাত্রই সেটা আর ব্যক্তিগত থাকে না। এমনকি ডিলিট করলেও ইন্টারনেটে কোনো না কোনোভাবে সেটার চিহ্ন থেকে যায়। তাই নিজের ক্ষতি হবে, এমন কিছু অনলাইনে আদান–প্রদান করা থেকে তাকে সাবধান করুন।

  • শিশুর ব্যবহৃত ডিভাইসটি আপডেট করা আছে কি না, সেটি নিয়মিত খেয়াল রাখুন। ডিভাইসটির প্রাইভেসি সেটিংস ঠিক আছে কি না, নিশ্চিত করুন। কারণ, প্রাইভেসি সেটিংস ঠিক না থাকলে যে কেউ তাদের তথ্য দেখতে পারবে কিংবা দখল নিতে পারবে।

  • শিশুর ব্যবহৃত ডিভাইসের ওয়েব ক্যামেরাটি অস্বচ্ছ টেপ দিয়ে ঢেকে দিন। ডিভাইসে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল বা সেফ সার্চ অপশন চালু করে দিন।

  • শিশুর জন্য অনলাইনে শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট ব্যবহারেও সতর্ক থাকুন। যদি কোনো সাইট শিশুর ছবি বা পুরো নাম চায়, তাহলে আগে যাচাই করুন সেটি কতটা বিশ্বাসযোগ্য।

  • অন্যের প্রতি কোনো বৈষম্যমূলক বা অপমানজনক আচরণ না করতে সন্তানকে উৎসাহিত করুন। গুজব ছড়ানো, অপমানজনক গল্প বা ছবি শেয়ার করতে নিষেধ করুন। তাকে বোঝান, যেটা একজনের কাছে মজা মনে হয়, সেটা অন্য কারও জন্য অনেক কষ্টের কারণ হতে পারে।

  • শিশু যদি অনলাইনে কিছু দেখে ভয়, অস্বস্তি বা কষ্ট পায়, তাহলে সে যেন আপনাকে জানায়। প্রায় সময় দেখা যায়, আশপাশের পরিচিত ব্যক্তিরাই নামে বা বেনামে আপনার সন্তানকে অনলাইনে হয়রানি করে। তাই এ ব্যাপারে সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন।

  • অনলাইনে শিশু কার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করে এবং তারা কী আদান–প্রদান করে বা কারা সেটা দেখতে পায়, এসব নিয়ে তার সঙ্গে শুরু থেকেই সহজভাবে কথা বলুন।

  • শিশু কখন, কোথায় ও কীভাবে কোন ডিভাইস ব্যবহার করবে, তা নিয়ে একসঙ্গে আলোচনা করুন। ইন্টারনেট ব্যবহারে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন। এ ব্যাপারে তাকে দায়িত্বশীল হতে উৎসাহ দিন।

  • সন্তানের অনলাইন–দুনিয়া বুঝতে হলে, আপনাকেও অনলাইনে আসতে হবে। সন্তান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করলে সেখানে তার সঙ্গে যুক্ত হোন। তার সঙ্গে অনলাইনে মজার ভিডিও–রিলস আদান–প্রদান করার পাশাপাশি তাকে সহানুভূতি ও সদ্ব্যবহার শেখানোর জন্য নানা ভিডিও, ছবি বা লেখা পাঠান।

  • অনলাইনে অনেক সময় শিশুরা এমন কিছু দেখে ফেলে, যা তাদের বয়স উপযোগী নয়। তাই বয়সের অনুপযোগী কোনো কিছু দেখা থেকে বিরত থাকতে উৎসাহ দিন। সন্তানের বয়স অনুযায়ী অ্যাপ, গেম বা অনলাইন বিনোদনের মাধ্যম খুঁজে বের করুন। তাকে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট চিনতে শেখান। বিশ্বাসযোগ্য সূত্র চিনতে সাহায্য করুন।

  • আপনার সন্তান আপনাকে অনুসরণ করে। অনলাইনে আপনার সচেতন ও ইতিবাচক আচরণ আপনার সন্তানকে প্রভাবিত করবে। সে আপনার কাছ থেকেই শিখবে।

  • অনলাইনে অন্যদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে সন্তানকে উৎসাহ দিন। সন্তান যদি অনলাইনে ক্লাস করে, তাহলে তাকে বলুন, সে ক্লাসে যেন সবাইকে সম্মান দেখায়।

  • সন্তানের স্কুলে অনলাইন পাঠদানের নিয়মকানুনগুলো ভালোভাবে জেনে নিন। অনলাইনে শিশুদের নিরাপদ রাখতে যে হেল্পলাইন বা সহায়তা আছে, সেসবের খোঁজ রাখুন। সাইবার বুলিং বা শিশুর জন্য অনুপযুক্ত কনটেন্ট রিপোর্ট করার পদ্ধতিগুলো জেনে রাখুন।

  • অনলাইনে শিশু কারও দ্বারা বুলিং বা হয়রানির শিকার হলে, সেটা কখনোই তার দোষ নয়। সন্তান অস্বস্তি অনুভব করলে, চুপচাপ হয়ে গেলে বা বিরক্ত হলে তার পাশে থাকুন। বুলিংয়ের শিকার হলে সে যেন লুকিয়ে না রেখে আপনাকে জানাতে পারে, সে ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করুন।

  • ইন্টারনেটের বিশাল তথ্যভান্ডার থেকে শিশু যেন ভালোগুলোই গ্রহণ করে এবং খারাপগুলো বর্জন করে, সে ব্যাপারে উৎসাহ দিন।

  • অনলাইনে সময় কাটানো যেন শিশুর আসক্তিতে পরিণত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখুন। তাকে বই ও পত্রিকা পড়া, খেলাধুলা, নাচ, গান, চিত্রাঙ্কন, কারাতে, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি শখের জায়গাগুলোয় সময় ব্যয় করতে উৎসাহ দিন।

সূত্র: ইউনিসেফ প্যারেন্টিং