বিক্রি হয় ডজন ধরে অথচ কখনো কখনো শুধু একটাতেই হয়ে যায় কাজ। কিন্তু মুশকিল হলো, ঠিক কাজের সময়েই দরকারি এই জিনিসটিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। বলছি নারীদের চুল বাঁধার অন্যতম অনুষঙ্গ ববি পিনের কথা। উড়তে থাকা চুল বাগে আনতে কিংবা খোঁপায় ফুল গুঁজতে ববি পিনের জুড়ি মেলা ভার। অবশ্য রহস্য-রোমাঞ্চ গল্প–সিনেমায় ববি পিন তালা খোলার কাজেও ব্যবহৃত হয়েছে অনেক। তাই নারীদের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদেরও এই কাজের জিনিসটি ভালোভাবেই চেনার কথা।
‘বব হেয়ারকাট’ থেকে ববি পিন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ১৯২০–এর দশকে নারীরা চিবুক পর্যন্ত লম্বা চুল রাখতে শুরু করেন। তখন ছোট করে চুল কাটা ছিল রীতিমতো বিপ্লবী সিদ্ধান্ত। ভিক্টোরিয়ান হেয়ারস্টাইলের বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহী ঘোষণা। সেই সময়ের মেয়েদের একটা বিশেষ অংশকে বলা হতো ‘ফ্ল্যাপার’। সে সময়ের সামাজিক নিয়মকানুন, আচার এবং নারীত্বের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ফ্ল্যাপাররা। পশ্চিমা সমাজে নারীর স্বাধীনতা ও আধুনিকতার প্রতীক হয়ে ওঠেন তাঁরা।
বিশের দশকের বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী এবং ফ্যাশন আইকন আইরিন ক্যাসেল প্রথম সেলিব্রিটি হিসেবে এই স্টাইল জনপ্রিয় করেন। নারীদের মধ্যে রাতারাতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় চুলের এই কাট। তবে সেই সময়ের হেয়ারড্রেসাররা নারীদের চুল ছোট করে কাটতে চাইতেন না। ফ্ল্যাপাররা তখন চুল কাটার জন্য সাধারণ সেলুনেই ধরনা দিতে লাগলেন।
চুল ছোট করার পর নারীদের মধ্যে দেখা দিল নতুন সমস্যা। ছোট চুল সহজে আটকে রাখা যায় না, বাতাসে ওড়ে। তাই চুল সেট করা কষ্টকর। সেই সময় সান ফ্রান্সিসকোর কসমেটিক নির্মাতা লুইস মার্কাস ছোট চুলের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করেন ছোট্ট পিন। প্রথমে এগুলোকে ‘ববিং পিন’ বলা হতো। সংক্ষেপে তা–ই হয়ে ওঠে ‘ববি পিন’।
ববি পিন আবিষ্কারের পর যাঁরা চুল ছোট করতে চাননি, তাঁরা পেলেন নতুন সুবিধা। চুল না কেটেই তাঁরা ববি পিন দিয়ে চুল আটকে নিতেন। ফলে চুল একদম বব-কাটের মতোই দেখাত। এ ছাড়া আগের ভারী ভারী চুল বাঁধার ক্লিপের বিপরীতে ববি পিন হয়ে উঠল নতুন এক সমাধান। চুলের নিচে এই ক্লিপ সহজেই লুকিয়ে থাকে। তাই চুল বাঁধার ক্ষেত্রে ক্লিপ হয়ে ওঠে ‘গেম চেঞ্জার’।
তবে লুইস মার্কাসকে ববি পিন আবিষ্কারের একক কৃতিত্ব দেওয়া হলেও সে সময়ে আরও অনেকে একই রকম চুলের পিন আবিষ্কার করেছিলেন। যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফ্রাঙ্ক ডেলং, হ্যাজেল হুক ওয়াল্টজ, জ্যাকব হারবার্ট ও হেনরি হাবার্ড। বিশেষত হেনরি হাবার্ড ববি পিনের উৎপাদনপ্রক্রিয়ার ব্যাপক বিকাশ ঘটান।
আপাতদৃষ্টে সাধারণ এই ধাতব পিনটির মেকানিজম কিন্তু বেশ চমকপ্রদ। একটি সাধারণ ববি পিনে চারটা অংশ থাকে–
১. পিনের সামনের অংশ পুরু প্লাস্টিকে মোড়ানো থাকে, যা ত্বকে আঁচড় লাগা ও চুলের ক্ষতি থেকে বাঁচায়।
২. পিনের ওপরের ঢেউ তোলা অংশ ও নিচের সোজা অংশ মাথার ত্বক ও চুলের সঙ্গে শক্তভাবে এঁটে থাকে। ফলে চুল পিছলে যায় না।
৩. ভেতরের দিকে স্প্রিংয়ের মতো গ্যাপ পিনকে সহজে খোলার নমনীয়তা দেয়।
আর এত সব উপযোগিতার কারণে ববি পিন হয়ে উঠেছে চুলের সাজের প্রধান অনুষঙ্গ। তাই আটপৌরে হোক বা রেড কার্পেট মাতানো সাজ—আবিষ্কারের এক শ বছর পরেও এখনো অমলিন এটির জনপ্রিয়তা।