
রুটি বা পাউরুটি খেলে হজমের সমস্যায় ভোগেন, এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। সাধারণভাবে ধারণা করা হয় যে গ্লুটেনে সংবেদনশীলতার কারণে এ ধরনের সমস্যার উৎপত্তি। খাদ্যতালিকা থেকে গ্লুটেনসমৃদ্ধ খাবার বাদ দিতে বলা হয় তখন। মেনে চলতে হয় গ্লুটেন-ফ্রি ডায়েট। তবে কেবল গ্লুটেন নয়, ফ্রুকটানের মতো উপাদানের কারণেও কারও কারও হজমের সমস্যা হয়। এমনটাই জানিয়েছে দ্য ল্যানসেট সাময়িকী।
ফ্রুকটান হলো গমে থাকা শর্করাজাতীয় উপাদান। এই উপাদান অন্ত্রে পানির পরিমাণ বাড়ায়। কারণ, ফ্রুকটানের বৈশিষ্ট্যই হলো পানি ধরে রাখা।
মানবদেহে ফ্রুকটান হজম করার জন্য প্রয়োজনীয় সব এনজাইম না থাকায় তা খাওয়ার পর ভাঙে না। এ অবস্থায় ফ্রুকটান যখন বৃহদান্ত্রে পৌঁছায়, তখন সেখানে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে এই ফ্রুকটানের ফারমেন্টেশন বা গাঁজন হয়। তাই সেখানে বেশি পরিমাণ গ্যাসও তৈরি হয় এই ফ্রুকটানের কারণে।
অবশ্য কেবল গম নয়, পেঁয়াজ, রসুন, তরমুজ, আঙুর, আনার, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, রাই, বার্লি প্রভৃতিতেও থাকে ফ্রুকটান।
ফ্রুকটানের এমন সব বৈশিষ্ট্যের কারণে পেটব্যথা ও বদহজম হতে পারে। ঢেকুর উঠতে পারে। অতিরিক্ত গ্যাস হতে পারে। কারও কারও মলত্যাগের ধরনেও আসে পরিবর্তন। তবে সবারই এমন সমস্যা হয় না।
যাঁদের ফ্রুকটানে সংবেদনশীলতা আছে, কেবল তাঁদেরই এমন সমস্যা হয়ে থাকে। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমে (আইবিএস) আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের ফ্রুকটানের মতো উপাদানে সংবেদনশীলতা থাকতে পারে।
গমের তৈরি খাবার খেলে যাঁদের হজমজনিত কোনো সমস্যা হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই ধারণা করা হয় যে সমস্যাগুলো গ্লুটেনের প্রতি সংবেদনশীলতার কারণে হচ্ছে। তখন গ্লুটেন-ফ্রি ডায়েট মেনে চলা হয়। এটা ঠিক যে গ্লুটেনের প্রতি সংবেদনশীলতার জন্যও এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। তবে সব ক্ষেত্রে যে গ্লুটেনই দায়ী নয়, তা খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
গম ও নানা ধরনের শস্যদানা এবং আরও কিছু খাবার ও পানীয়তে গ্লুটেন থাকে। তাই গ্লুটেন-ফ্রি ডায়েট মেনে চলতে গেলে খাদ্যতালিকা থেকে আপনাকে অনেক কিছুই বাদ দিতে হবে। অথচ সবার ক্ষেত্রে এত নিষেধাজ্ঞার আদতে প্রয়োজন নেই। কারণ, অনেকের ক্ষেত্রে তো কেবল ফ্রুকটানের জন্যই সমস্যাগুলো হয়।
ফ্রুকটানসমৃদ্ধ খাবার খেলে যাঁদের সমস্যা হয়, তাঁদের যে এসব খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে, তা নয়। তবে পুষ্টিবিদের তত্ত্বাবধানে এসব খাবারের মাত্রা নির্ধারণ করে নেওয়া উচিত। দীর্ঘ মেয়াদে একইভাবে ফ্রুকটানের মাত্রা কম রাখারও প্রয়োজন হয় না এবং সেটা উচিতও নয়।
সূত্র: দ্য ল্যানসেট, ওহাইও স্টেট হেলথ অ্যান্ড ডিসকভারি, হেলথলাইন, ওয়েবএমডি, সায়েন্সডিরেক্ট