দিনে কতবার পুশআপ করলে পার্থক্য চোখে পড়বে

ব্যায়ামের কথা বললে আপনা–আপনি পুশআপের প্রসঙ্গও আসে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো একদম বিনা মূল্যে এবং কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই করা যায়। পুশআপ চলমান প্ল্যাঙ্কের মতোই। যেখানে খুশি সেখানে করতে পারেন, হোক সেটা আপনার শোবার ঘর কিংবা অফিসের একটা কোণ। যাঁরা পুশআপ দেওয়া শুরু করেছেন, তাঁদের মাথায় যে চিন্তা সবচেয়ে বেশি ঘোরে, প্রতিদিন কতবার পুশআপ করলে ভালো ফল মিলবে?

সঠিকভাবে এবং নিয়মিত পুশআপ করলে শরীরের ওপরের অংশ শক্তিশালী হয়
ছবি: প্রথম আলো

ব্যায়াম একেকজনের জন্য একেক রকমের ফলাফল নিয়ে আসে। কেউ দ্রুত শরীরে পরিবর্তন দেখতে পান, কারও আসে একটু ধীরে। বাহু নাকি বুকের গড়নে পরিবর্তন চাইছেন, সেটা নিয়েও ভাবতে হবে। লক্ষ্য যেটাই হোক, পুশআপ অবশ্যই সহায়তা করবে, তবে সবকিছু নির্ভর করবে কীভাবে এই ব্যায়াম করবেন, সেটার ওপর।

সঠিকভাবে এবং নিয়মিত পুশআপ করলে শরীরের ওপরের অংশ শক্তিশালী করে, মেরুদণ্ডের ভঙ্গি ঠিক রাখে, পেশি করে তোলে আরও স্থিতিশীল এবং কাঁধের স্বাস্থ্য হয় উন্নত। এ ছাড়া হাতের মাংসপেশি টোন করতে, বুকের গড়ন ভালো করতেও এর দারুণ কার্যকর।

পুশআপ করে যেখানে ইচ্ছা সেখানেই পেশির আকার সুন্দর করা যায়। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি হলো ধারাবাহিকতা। এক রাতের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যাবে না। নিয়মিত ধীরে ধীরে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়ালে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে বাধ্য।

প্রতিদিন কতবার

আপনি যদি আনকোরা হন এই ব্যায়ামে, তাহলে ধীরে শুরু করুন। সপ্তাহে ৩-৪ দিন ১০–২০ বার পুশআপ করার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করতে পারেন। প্রয়োজন মনে করলে সেটে ভাগ করে নিন। যখন দেখবেন যে আর কষ্ট হচ্ছে না, ধীরে ধীরে বাড়িয়ে ৫০–১০০ বার পুশআপ করুন।
এই ৫০–১০০ বার পুশআপকে ১০ বা ২০টি সেটে ভাগ করে নিতে পারেন। যাঁরা ফিটনেসের ক্ষেত্রে একটু এগিয়ে থাকতে চান বা ‌এগিয়ে গেছেন ইতিমধ্যে, তাঁদের জন্য দিনে ২০০ বা তার বেশি পুশআপ করা কোনো বিষয় না। বিশেষ করে যদি আপনি কঠোর পরিশ্রম করেন বা খেলোয়াড় হয়ে থাকেন।

সপ্তাহে ৩-৪ দিন ১০–২০ বার পুশআপ করার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করতে পারেন

পুশআপ বেশি করা মানেই সব সময় ভালো নয়। খারাপ বা বেঠিকভাবে পুশআপ পেশি গঠন করে না। বরং সঠিকভাবে যদি একটু কমও করেন, সেটাই ভালো। গুণগত মান সব সময় পরিমাণের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিদিন পুশআপ শুরু করলে কী ঘটে

প্রতিদিন পুশআপ করলে আপনার শরীর সেটা অনুভব করতে শুরু করবে। প্রথম সপ্তাহে বুকে, কাঁধে এবং হাতে একটু ব্যথা বা খিঁচুনি অনুভূত হবে। এর কারণ আপনার শরীর নতুন পরিশ্রমের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। ১০ দিনের মাথায় আপনার কোর পেশি আরও সক্রিয় হবে এবং গতিতেও স্থিতিশীলতা আসবে।

দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে আপনার দেহভঙ্গি উন্নত হবে এবং হাত বা বুকের গড়নেও আসবে পরিবর্তন। দৈনন্দিন কাজ, যেমন বাজারের ব্যাগ বহন, ব্যাকপ্যাক ওঠানো—হঠাৎ সহজ মনে হতে শুরু করবে। চতুর্থ সপ্তাহে, পুশআপের মাত্রায় আর ভঙ্গিতে নতুনত্ব যোগ করতে পারলে শরীরের ওপরের অংশে সেটা দৃশ্যমান হবে।

কেন পুশআপের বিভিন্ন ধরন জরুরি

প্রতিদিন একধরনের পুশআপ করা অনেকটা প্রতিদিন একই খাবার খাওয়ার মতো। প্রতিদিন একই ধরনের পুশআপ করলে আপনার পেশিগুলো একটা সময় পর অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং ইতিবাচক ফলাফল আর দেখা যায় না। তাই ভিন্নতা নিয়ে আসা জরুরি। বদলাতে পারেন হাতের অবস্থান, পরিবর্তন আনতে পারেন গতিতে বা পায়ের নিচে উঁচু কিছু বসাতে পারেন। ছোটখাটো পরিবর্তনগুলোই পেশিকে চ্যালেঞ্জ দেবে।

পুশ আপে ভিন্নতা নিয়ে আসা জরুরি

বিশ্রাম নিতে ভুলবেন না

পুশআপের মতো ব্যায়ামেও শরীরের ধকল কাটিয়ে ওঠা দরকার। পুশআপের ফলে স্বাভাবিকভাবেই পেশিগুলোর ওপর দিয়ে প্রচণ্ড ধকল যায়, তাই পুশআপের পর দরকার পুনর্গঠন এবং পেশি বৃদ্ধিতেও দরকার আরও সময়। সপ্তাহে অন্তত এক দিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিন। কারণ, শরীর ধকল কাটিয়ে ওঠার সময়েই ঘটে আসল ঘটনা, ব্যায়ামের সময় কিন্তু নয়!

আরও যা মানতেই হবে

পুশআপ পেশি গঠন করার কাজটি বেশ দক্ষতার সঙ্গেই করে। কিন্তু লক্ষ্য যদি থাকে নিখুঁত শারীরিক গঠন, তাহলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বিও কমাতে হবে। মানতে হবে সুষম খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম এবং কার্ডিওর নিয়মগুলো। হাঁটাহাঁটি, হাইট ইনটেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং (এইচআইআইটি) ও দড়ি লাফ চালিয়ে যেতে হবে। এসব আপনার হৃৎস্পন্দন বাড়াবে। তাহলেই নতুন পেশি ফুটে উঠবে।

পুশআপ চ্যালেঞ্জের গুরুত্ব কতটা

অনেক সময় ৩০ দিনের পুশআপ চ্যালেঞ্জ নেন অনেকে, যা শরীরের ওপরের অংশে পরিবর্তন এনে দেয়। এসব সাময়িক চ্যালেঞ্জ উৎসাহ পাওয়ার জন্য ভালো, বিশেষ করে যদি আপনি নতুন নতুন শুরু করেন। কিন্তু এক মাসের মধ্যেই পরিবর্তন আশা করা উচিত নয়। ডায়েট, ঘুম এবং সামগ্রিক ফিটনেস রুটিন যদি না বদলান, তাহলে ৩০ দিনে পরিবর্তন আনা কঠিন। এসব চ্যালেঞ্জ আপনাকে একটা রুটিনে নিয়ে আসতে সহায়তা করে। এটাই আদতে বড় অর্জন।

চর্বি ঝরাতে দরকার সুষম খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম এবং কার্ডিও

প্রতিদিন কতবার পুশআপ করবেন, সেটা নির্ভর করবে আপনার ওপর। আপনি আদতে কী চাইছেন। অধিকাংশ ব্যক্তির জন্য দিনে সঠিকভাবে ২০–৩০ বার পুশআপ করাই আদর্শ।

ভালো লাগলে প্রতি সপ্তাহে কয়েকটি করে পুশআপ বাড়ান। কয়েক দিন পরপর নতুন ধরনের পুশআপ যোগ করুন, যাতে ব্যায়ামটিতে একঘেয়েমি না চলে আসে। পাশাপাশি যে বিষয়টি মনে রাখা প্রয়োজন, ব্যায়ামের ফর্ম, বিশ্রাম ও জীবনযাপনও গুরুত্বপূর্ণ।

এক মাস নিয়মিত পুশআপ করলে আপনি পরিবর্তন টের পাবেন। দুই-তিন মাস পর অন্যেরাও সেটা লক্ষ করবে। শেষ কথা, পুশআপের সংখ্যার চেয়ে এটিকে অভ্যাসে পরিণত করুন। প্রতিটি পুশআপই আপনাকে ধাপে ধাপে শক্তিশালী করে তুলবে।


সূত্র: হেলথলাইন