শীতের হালকা আমেজ চলে এসেছে। ঋতু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ভাইরাসজনিত সমস্যার পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে ত্বক ও চুলের নানা সমস্যা। এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে শরীর আর্দ্র রাখাসহ প্রয়োজন শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা উন্নত করা। এ জন্য প্রতিদিন প্রয়োজনীয় খাদ্যচাহিদা পূরণের পাশাপাশি মৌসুমি ফল গ্রহণ একটি সহজ ও স্বাস্থ্যকর সমাধান হতে পারে।
শরীরের পর্যাপ্ত ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণে প্রতিদিন ৪০০ গ্রাম শাকসবজি ও ফলমূল খেতে বলা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন দুটি করে মৌসুমি ফল (প্রতিটি ৫০ গ্রাম করে) খেতে হবে, যার একটিতে থাকবে সাইট্রাসের গুণাগুণ, অন্যটিতে ভিটামিন এ। টকজাতীয় ফলে ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ লবণ পাওয়া যায়, যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ফলেট, ম্যাগনেশিয়াম।
এ ছাড়া ফলে আছে প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি, ফলেট, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। সর্দি-কাশির সংক্রমণ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি কোলাজেন উৎপাদন করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর পাশাপাশি রক্ষা করে চুলের কোষ। ফলের খনিজ লবণ, যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস হাড় ও চুলের গোড়া মজবুত করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়, কিডনির পাথর প্রতিরোধে সহায়তা করে, পানিশূন্যতাও রোধ করে। হিমোগ্লোবিন গঠনসহ শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ায় আয়রন, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা উন্নত করে। এ–জাতীয় ফলগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও ভালো ভূমিকা রাখে।
আমড়া
১০০ গ্রাম আমড়ায় প্রায় ২৭০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারেটিনয়েড, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১ গ্রাম ফাইবার ও ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
আমলকী
১০০ গ্রামে প্রায় ৪৩৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৭৩৪ মিলিগ্রাম জিংকসহ প্রায় ১৭৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এ ছাড়া খুব সামান্য পরিমাণে আয়রন ও প্রায় ২৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও দশমিক ৮৫ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। প্রতিদিন অন্তত একটা করে আমলকী গ্রহণে ভিটামিন সির দৈনিক চাহিদা পূরণ সম্ভব।
জাম্বুরা
১০০ গ্রামে প্রায় ১২০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ১০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ৩৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
জলপাই
১০০ গ্রামে প্রায় ১৯০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ৩৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ২২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ১.৬ গ্রাম ফাইবার থাকে।
পেয়ারা
১০০ গ্রামে প্রায় ১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৬০ মিলিগ্রাম জিংকসহ প্রায় ৯১ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ও সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। এ ছাড়া পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে পেকটিন থাকে। পেকটিন হজমে সাহায্য করে, রক্তে শর্করার মাত্রা ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে। প্রায় ৫.২ গ্রাম ফাইবার থাকে যা অন্ত্রে ভিসকোস জেল তৈরি করে। এটি অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
লেবু
এটি থেকে প্রায় সারা বছর ভিটামিন সি, এ পাওয়া যায়। ১০০ গ্রামে প্রায় ৪৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কারণ, ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
পাকা কতবেল
১০০ গ্রামে প্রায় ৬১ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, প্রায় ৫৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও প্রায় ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।
পাকা পেঁপে
পেঁপে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। পাকা পেঁপেতে প্রচুর ভিটামিন এ ও জিংক পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম পেঁপেতে আছে প্রায় ২৩৩০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ২৯৩৩ মিলিগ্রাম জিংক, প্রায় ১৩৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ও সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
আনারস
১০০ গ্রামে প্রায় ৯.৩ গ্রাম শর্করা, ৯০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ২৬ গ্রাম ভিটামিন সি ও খুব সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। এ ছাড়া আনারসে ব্রোমেলিন নামে একপ্রকার আমিষ পরিপাককারী এনজাইম থাকে। বিশেষ অবস্থায় (যেমন কিডনি রোগ, ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা) পুষ্টিবিদ ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী এ ফল গ্রহণ করতে হবে।
সিনিয়র নিউট্রিশন অফিসার, সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি