অতিরিক্ত ওজন মানেই নানা ঝক্কি। বাড়তি ওজনের জন্য কেউ অল্পতেই হাঁপিয়ে পড়েন, কেউ আবার ভোগেন হাঁটুব্যথায়। আরও নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি তো থাকেই। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে যেমন সুস্থ থাকবেন আপনি, তেমনি সতেজও অনুভব করবেন। তবে ওজন কমাতে গিয়ে এমন কিছু ব্যাপারও ঘটতে পারে, যাতে দ্রুত বুড়িয়ে যেতে পারেন!
ওজন নিয়ন্ত্রণের অর্থ এই নয় যে আপনি খুব কম খাবেন আর পছন্দমতো কোনো এক ধরনের ব্যায়াম করবেন। বরং ক্যালরি গ্রহণ কমিয়েও কীভাবে রোজকার প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করা যায়, সেই পরিকল্পনা করা চাই ঠিকঠাক। এমনকি শর্করা বা উপকারী স্নেহপদার্থও একেবারে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। ব্যায়ামও করতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে। নইলে ওজন কমাতে গিয়ে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। এমনটাই জানালেন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান। তাঁর কাছ থেকেই ওজন নিয়ন্ত্রণের এমন কিছু ভুল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, যাতে দ্রুত বুড়িয়ে যেতে পারেন একজন ব্যক্তি।
ওজন কমাতে হয় ধীরেসুস্থে। এটিই বিজ্ঞানসম্মত উপায়। সপ্তাহে আধা কেজি-এক কেজি ওজন কমানোই যথেষ্ট। এর চেয়ে ধীরে ওজন কমালেও ক্ষতি নেই। তবে এর চেয়ে দ্রুত ওজন কমালে ত্বক ঝুলে পড়ে। এ রকম হলে স্বাভাবিকভাবেই আপনাকে বয়স্ক দেখাবে।
আমিষের অভাব হলে পেশির ক্ষয় হয়, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়। তাই অনেকটাই বয়স্ক দেখায়। ওজন কমানোর লক্ষ্য দেহের বাড়তি মেদ ঝরানো, পেশির ক্ষয় নয়। খাদ্যতালিকা তৈরির সময় পর্যাপ্ত আমিষ নিশ্চিত করুন। দুধের সর বাদ দিন, কিন্তু দুধ বাদ দেবেন না। ডিমও খাওয়া চাই রোজ। নির্দিষ্ট কোনো রোগের কারণে নিষেধ হলে অবশ্য আলাদা কথা। ডিমের কুসুম খাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ থাকলেও ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন। তেল এড়াতে ডিমভাজির পরিবর্তে সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন। মাছ–মাংসও খাওয়া যেতে পারে। রোজ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আমিষ গ্রহণ করলেও উপকার পাবেন। নানান রকম ডাল, শিম, ছোলা, চানা বুট, সয়া, টোফু, বাদাম প্রভৃতি খেতে পারেন। তবে নিয়মিত খেসারির ডাল খাওয়া উচিত নয়।
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আমাদের দেহকে ভেতর থেকে সতেজ ও তরুণ রাখে। ত্বকের তারুণ্যের জন্যও এসব উপাদান প্রয়োজন। তাই ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, জিংক এবং সেলেনিয়াম–সমৃদ্ধ খাবার খাবেন রোজ। ফলমূল ও শাকসবজি থেকে বিভিন্ন ভিটামিন পাওয়া যায়। জিংক পাবেন মাছ, মাংস, টোফু, বাদাম, ওট, চানাবুট প্রভৃতিতে। সেলেনিয়াম পাবেন মাছ, মুরগি, ডিম, দুধ কিংবা বিভিন্ন শস্যদানায়। লাল চাল, ওট, মসুর ডাল প্রভৃতি সেলেনিয়ামের বেশ ভালো উৎস।
পানিশূন্যতা
পানিশূন্যতার দৃশ্যমান প্রভাব পড়ে ত্বকে। তাই পানি খেতে হবে পর্যাপ্ত। ওজন কমাতে হলে আপনাকে মিষ্টি পানীয় বাদ দিতে হবে ঠিকই, কিন্তু অন্যান্য তরল খাবার খেতে নিষেধ নেই, যদি তা স্বাস্থ্যকর উপাদানে তৈরি করা হয়। বরং রোজকার পানির চাহিদা পূরণ না হলেই মুশকিল।
ক্যালসিয়ামের অভাবে ভেতরে-ভেতরে হাড়ের ক্ষয় হতে থাকলে একসময় ত্বক আর টানটান থাকে না। তাই দুধ, টক দই বা এসব উপকরণের তৈরি খাবার গ্রহণ করুন রোজ। কাঁটাসহ ছোট মাছও খেতে পারেন। গাঢ় সবুজ শাক বা সবজি এবং কাঠবাদাম থেকেও কিছুটা ক্যালসিয়াম পাবেন। দেহের অনেকটা অংশে রোদ লাগানোও চাই রোজ, অন্তত ২০ মিনিটের জন্য। নইলে ভিটামিন ডির অভাব হবে দেহে। ফলে খাবার থেকে পাওয়া ক্যালসিয়ামও শোষণ হবে না।
অধিক ক্যালরি পোড়ানো যায়, এমন ব্যায়ামের প্রতি আগ্রহ থাকে অনেকেরই। ওজন কমাতে এসব ব্যায়াম নিঃসন্দেহে উপকারী। তবে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন দেহের সব পেশি জোরদার করার ব্যায়াম করা না হলে আপনি সম্পূর্ণ ফিট থাকবেন না। সহজেই বুড়িয়ে যাবেন।